ব্লক চেইন প্রযুক্তি কি?

আমরা ইদানিং ব্লক চেইন টেকনোলজীর নাম শুনছি চারদিকে। সবাই বিভিন্ন সেক্টরে এর ব্যবহার বা এপ্লিকেশন নিয়ে অনেক কথা বলছে। বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতে ব্লক চেইন টেকনলজীর ব্যবহার বেশ আলোচিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে আইপিডিসি ব্লক চেইন ব্যবহার করে সাপ্লাই চেইন ফাইন্যান্সিং শুরু করেছে। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকও প্রথম বারের মত ব্লক চেইন দিয়ে লেটার অব ক্রেডিট বা এল সি খুলেছে।

চারদিকে এই নামটা শুনলেও এই নতুন টেকনলজী সম্পর্কে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। স্বভাবতই ইন্টারনেট ঘাটা শুরু করলাম। বিশেষ করে আমার প্রিয় পড়ার জায়গা মিডিয়ামে বেশ কিছু আর্টিকেল পড়লাম। কিছুই বুঝলাম না। শেষে একটা আর্টিকেল পেলাম যাতে একটা ৫ বছরের বাচ্চাও যাতে বিষয়টা বুঝতে পারে, সেটা মাথায় নিয়ে লেখা। আর্টিকেলটা এখানে সাইট করতে পারলাম না। কারণ এখন আর খুঁজে পাচ্ছি না। আমি যা বুঝলাম, তাই এখানে বোঝানোর চেষ্টা করছি।

নিচে একটা আপেল দেখতে পাচ্ছেন। এই আপেল দিয়েই বুঝাই।

ব্লক চেইন ও আপেল

ধরে নিন, এই আপেলটা আপনার। রিয়েল লাইফে বা বাস্তব জীবনে আপনার কাছে একটা আপেল আছে, আমার কাছে নাই। নিচের ছকে বিষয়টা বোঝানো হল –

আপনার আছে আমার নেই

 

আপনি আমাকে আপেল টা দিয়ে দিলেন। নতুন অবস্থা দাঁড়ালো, আপনার কাছে নাই, আমার কাছে আছে।

আপনার নেই আমার আছে

 

এখন আসেন ভার্চুয়াল জগতে। ধরে নিন আপনার কাছে একটা আপেলের ছবি আছে। আমার কাছে নাই।

আপনার আপেলের ছবি

আমি আপনার কাছে আপেলের ছবি চাইলে আপনি কপি করে দিয়ে দিলেন। এখন অবস্থা দাড়ালো আপনার কাছেও আপেলের ছবি আছে, আমার কাছেও আছে।

আপনার ও আমার আপেলের ছবি

উপরের উদাহরনটা দিলাম একটা সমস্যা বোঝানোর জন্য। ভার্চুয়াল জগতে আমরা খুব সহজেই কপি করে ডেটা ট্রান্সফার করতে পারি। যার ফলে ডেটার ডুপ্লিকেশন রোধ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। কারেন্সী বা টাকার ক্ষেত্রে বিষয়টা খুবই জটিল হয়ে যায়। ধরেন, আমি আপনার কাছে ৫০০ টাকা চাইলাম আর আপনি কপি করে ৫০০ টাকা দিয়ে দিলেন। আপনার কাছেও ৫০০ টাকা রয়ে গেছে আমার কাছেও এসে গেছে। ৫০০ টাকা হয়ে গেল ১০০০ টাকা।

এই সমস্যা সমাধানের জন্যই ব্লক চেইন টেকনলজীর উদ্ভাবন।

ব্লক চেইন আসলে একটা ডিস্ট্রিবিউটেড লেজার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম। একটা মূদ্রার জন্ম থেকে শুরু করে সব লেনদেনের ইতিহাস একটা লেজার বা খাতায় লিপিবদ্ধ থাকবে। প্রত্যেকটা লেনদেন হল একেকটা ব্লক।

আপনার থেকে আমার

 

এভাবে প্রত্যেকটা লেনদেনের ইভেন্ট/ঘটনা সংরক্ষণ করা হয় এবং একটার সাথে আরেকটা ইভেন্ট চেইন আকারে যুক্ত থাকে। তাই একে বলা হয় ব্লক চেইন।

ব্লক চেইন

উপরের যে ছকটা দেখতে পাচ্ছেন, এটাকে একটা লেজার বা রেজিস্টার খাতা ধরে নিতে পারেন, যা লেনদেনের সাথে জড়িত সবার কাছে থাকবে। যে কোন ধরনের লেনদেন অনুষ্ঠিত হলে, সবার রেজিস্টার খাতাতে লেনদেন আপডেট হয়ে যাবে।

বিনিময় ও রেকর্ড

সবার কাছে লেজার খাতাটা থাকাতে, যে কেউ চাইলেই, কোন একটা রেজিস্টার খাতায় পরিবর্তন আনতে পারবে না। কোন ধরনের পরিবর্তন থাকলে তা সব লেজারে প্রতিফলিত হবে।

আর এভাবেই আমাদের ডেটা বা মূদ্রার সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদান করা সম্ভব হবে।

এ কারণেই ব্লক-চেইন টেকনোলজী সামনের দিনগুলিতে আর্থিক নিরাপত্তাসহ অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রন করবে।

এই ছিল ব্লক চেইন নিয়ে প্রাথমিক ধারণা।

আপনাদের আরো জানার ইচ্ছা থাকলে ইমেইলে জানাবেন। আমার ইমেইল ahte88@gmail.com । আসেন একসাথে খুব সহজভাবে বিষয়টা শেখার চেষ্টা করি।