সিভির ভুলের মাশুল

চাকুরী প্রার্থীদের সিভি যাচাই করে সাক্ষাৎকারে ডাকার সময় প্রার্থীদের সামনাসামনি যাচাই বাছাই করার সুযোগ নেই।প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে, সিভিই একমাত্র উপায় যার মাধ্যমে সাক্ষাৎকারে ডাকা পাওয়া না পাওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে। সিভিতে ব্যাক্তির শিক্ষা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, ইত্যাদির সুসংগঠিত ও দৃষ্টি নন্দন উপস্থাপনা অনেকটুকু পার্থক্য তৈরি করে দেয়।

সিভির ভুলকিছু কিছু তথ্য ,গঠণ, কাঠামো সম্পর্কিত ভুল বিষয়ের অন্তর্ভুক্তি, উপাস্থাপনার ভুল আমাদের সিভির গ্রহণযোগ্যতা কমিয়ে দেয় অনেকাংশে। শুধুমাত্র একটি ভুলের কারণে সিভি বাদ পড়েনা। সাধারণত সিভির একাধিক ভুলের কারণে চাকুরী প্রার্থী সাক্ষাৎকারের জন্য ডাক নাও পেতে পারেন।

নিচে সিভির বেশ কিছু ভুলের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হল। এই ভুলগুলো থেকে অবশ্যই আমাদের  সিভিকে মুক্ত রাখতে হবে।

সিভির যত দূর্বলতা:

১। কপি পেষ্ট করে সিভি তৈরি করা

বড় ভাই, বন্ধুর সিভি নিয়ে তাতে নিজের প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সাজিয়ে সিভি তৈরি করা প্রথম অনাকাঙ্ক্ষিত কাজ। এতে সবসময়ই আগের ব্যাক্তির কোন না কোন তথ্য থেকে যায়। অন্য ব্যাক্তির ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ নিজের করে লেখাটা হাস্যকর। প্রতিটি ব্যাক্তির চাকুরীর উদ্দেশ্য ভিন্ন ভিন্ন। একটি সিভি নিজে তৈরি করলে, স্বাভাবিকভাবেই তাতে নিজস্বতার ছাপ আসে। প্রত্যেক মানুষই স্বতন্ত্র। স্বতন্ত্র মানুষের স্বতন্ত্র সিভি নিয়োগকর্তাকে প্রভাবিত করে বেশি। এছাড়াও সিভি ভিত্তিক সাক্ষাৎকারে আত্নবিশ্বাসের সাথে নিজের যোগ্যতা সম্পর্কে বুঝিয়ে বলা যায়। অন্যের সিভি নকল করে যা সম্ভব হয়না। পদার্থ বিজ্ঞানে এমবিএ কিংবা নিজের পিতার নামের স্থানে বন্ধুর পিতার নাম – এই ধরণের অনভিপ্রেত ভুল কপি পেষ্ট করা সিভিতে থেকে যেতেই পারে।

২। একই সিভি সব যায়গায় পাঠানো

প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের উল্লেখিত পদের চাহিদা অনুযায়ী সিভি সাজাতে হয়। একটা মাত্র দুর্বলতার কারণে যদি কাউকে সাক্ষাৎকারে ডাকা না হয়, তা হলে এটিই সেই কারণ। প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও জ্ঞানের হদিস যদি নিয়োগকর্তা না পান, সেক্ষেত্রে সিভি বাদ পড়ে যাবার সম্ভাবনাই বেশি।

৩। অবিশ্বাস্য দাবী

“ঢাকার সবচেয়ে ভাল একাউট্যাণ্ট” – এই ধরণের দাবী অযৌক্তিক। এই ধরণের দাবী প্রমাণ করা অসম্ভব।প্রকৃত ঘটনা ও উদাহরণ ব্যাবহার করে বিনয়ের নিজের যোগ্যতা তুলে ধরতে হবে। এছাড়াও এমন কোন দক্ষতার কথা লেখা যাবেনা, যা আমার নেই।

৪। অদ্ভূত ই-মেইল আইডি

ছাত্রজীবনে কৌতুক করে তৈরি করা vagabond@gmail.com জাতীয় আইডি সিভিতে ব্যাবহার অপেশাদারিত্বের লক্ষণ। এই ধরণের কাজ নিয়োগকর্তার কাছে প্রার্থীর বিবেচনাবোধের দুর্বলতা তুলে ধরে।

৫। প্রচুর লেখা দিয়ে তৈরি করা

সিভি বাধঁনহীন কল্পনা প্রকাশের স্থান নয়। এক সাথে অনেক লেখা পড়া পীড়াদায়ক। তথ্যগুলোকে ছোট ছোট প্যারাগ্রাফে ও বুলেট পয়েন্টে সাজিয়ে নিতে হবে। সিভিতে“সিভি” কথাটি লেখার দরকার নেই। সিভি লেখার তারিখও অপ্রয়োজনীয়। নিজের পছন্দ অপছন্দের বিষয়ে সিভিতে না লেখাই ভাল। অপ্রাসঙ্গিক অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে একেবারে সংক্ষিপ্ত আকারে তা উপস্থাপন করতে হবে।অপ্রাসঙ্গিক অর্জনের কথা সিভিতে দেওয়া উচিত নয়।

৬। কাজের প্রভাব তুলে না ধরা

নিজের দায়িত্ব,দক্ষতা ও জ্ঞানের বর্ণনার পাশাপাশি তা থেকে প্রতিষ্ঠান যে ফল লাভ করেছে, তা উল্লেখ্য করতে হবে। প্রতীক, সংখ্যা,দৃষ্টান্ত প্রার্থীর দাবীকে গ্রহণযোগ্য করে তোলে।

৭। বেশি বেশি কি ওয়ার্ড ব্যাবহার করাঃ

অটোমেটেড সিভি স্ক্যানিং এ সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকার জন্য অনেকে কি ওয়ার্ডের ব্যাবহার অনেক বেশি করেন। এতে সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকা যায়। মানব সম্পদ ব্যাবস্থাপক যখন সিভি পড়েন, তখন তার কাছে তা বিরক্তিকর মনে হয়।এতে সিভির স্বাভাবিক লেখনির প্রবাহ হোঁচট খায়।যে বক্তব্য প্রার্থী নিয়োগকর্তার কাছে পৌঁছে দিতে চান তা সঠিক ভাবে অবহিত করা হয়না। মানুষকে মুগ্ধ করার উদ্দেশ্য নিয়ে সিভি সাজাতে হবে। অটোমেটেড সিভি স্ক্যানিং এর জন্য কিছু কৌশল নেয়া যেতে পারে।

৮। ভূমিকার সার সংক্ষেপ না দেওয়াঃ

প্রতিষ্ঠানের বা দলের কাজের প্রেক্ষিতে নিজের ভূমিকার বর্ণনা দিতে হবে। এতে করে পাঠক সামগ্রিক কাজের বিবেচনায় প্রার্থীর ভূমিকা সম্পর্কে সঠিক ধারণা পায়।

৯। অর্থহীন কথাবার্তাঃ

সিভি দক্ষতা, অর্জন, ও পেশাগত জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে হওয়া উচিত। “দলে ও একা কাজ করতে সক্ষম” কিংবা “ সৃজনশীল ও যে কোন কাজ করতে সক্ষম” – এই জাতীয় কথা শুনতে বেশ আকর্ষণীয় কিন্তু এ থেকে প্রার্থী সম্পর্কে যথার্থ কোন ধারনা পাওয়া যায় না। “করতে চাই” , “সুযোগ পেলে করব” – এই সব কথা না বলাই ভাল। ব্যাক্তিগত শখের বর্ণনা না দেওয়াই ভাল।

১০। কাজ ছাড়ার কারণঃ

অতীতের চাকুরী পরিবর্তনের কারণ সিভিতে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রার্থীর কাজ হচ্ছে বিজ্ঞাপিত পদের জন্য তার মেধা ও যোগ্যতা নিয়োগকর্তার কাছে যথাযথ ভাবে তুলে ধরা।

১১। আকর্ষণীয় কিন্তু দুর্বোধ্য ফন্ট ব্যাবহার করাঃ

সিভির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হচ্ছে সহজপাঠ্য ফন্ট ব্যাবহার করা। সিভির আভিজাত্য বৃদ্ধির জন্য আকর্ষণীয় কিন্তু দুর্বোধ্য ফন্ট ব্যাবহারে আমরা প্রলুদ্ধ হই। এ কাজটি সিভি পড়াকে কঠিন করে তোলে। সাধারণ, পরিচ্ছন্ন ফন্ট তাহোমা বা এরিয়েল ব্যাবহার করা যেতে পারে।

১২। বেতনঃ

বর্তমান বেতনের বর্ণনা কিংবা বেতনের চাহিদা কোনটিই সিভিতে থাকা উচত নয়। বেতন নিয়ে আলোচনা সাক্ষাৎকারে কিংবা তারও পরে আসে। অনেকসময় আমাদের চাহিদার থেকে উচ্চতর বেতন কাঠামো নির্ধারিত থাকে। সেক্ষেত্রে আমরা সুযোগ হাতছাড়া করি।

১৩। লোগো ও প্রতিকৃতিঃ

লোগো ও প্রতিকৃতি ব্যাবহার সিভিতে অপ্রয়োজনীয়। এতে সিভিতে অনেক জায়গা নষ্ট হয়।সহজবোধ্য লেখনির মাধ্যামে সিভিতে নিজের গ্রহ্নযোগ্যতা ফুটিয়ে তোলা উচিত।

১৪। বর্তমান ভূমিকার বিস্তৃত বর্ণনা না থাকাঃ

বর্তমানে কিংবা সাম্প্রতিক সময়ে প্রার্থী যে দায়িত্ব বা ভূমিকা পালন করে, তা সবচেয়ে গুরূত্বপূর্ণ। নিয়োগকর্তা বর্তমান ভূমিকাই মনোযোগ দিয়ে পড়েন এবং বুঝতে চান বিজ্ঞাপিত কাজের জন্য এই প্রার্থী বর্তমানে সক্ষম কিনা। সিভি আপাডেট করার সময় ঠান্ডা মাথায় মনোযোগ দিয়ে বর্তমানে কিংবা সাম্প্রতিক সময়ের দায়িত্ব গুছিয়ে লিখতে হবে।

১৫। অতীত ভূমিকার বিস্তৃত বর্ণনাঃ

৫-১০ বছর আগের কাজের দৈনন্দিন দায়িত্ব ও কর্তব্যের বিস্তৃত বর্ণনা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। পুরনো কাজের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে সাম্প্রতিক সময়ের কাজের ভূমিকার জন্য জায়গা খালি রাখতে হবে।

১৬। বিদ্‌ঘুটে রঙের ব্যবহারঃ

সিভির হেডলাইনে হালকা পরিচ্ছন্ন রং ব্যাবহার করা যেতে পারে। ব্যাকগ্রাউন্ডে কোন রং ব্যাবহার না করাই উচিত। ব্যাংক কিংবা ল’ ফার্মের মত প্রতিষ্ঠানে সাদা-কালো সিভি দেওয়া ভাল। সমগ্র সিভিতে যেখানে সেখানে গাঢ় রং ব্যাবহার না করাই উত্তম। রঙ্গিন সিভি ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা হয়।

১৭। স্কীল গ্রাফঃ

কোন বিষয়ে যোগ্যতা ও দক্ষতার দৃষ্টিনন্দন উপস্থাপনার জন্য প্রার্থী স্কীল গ্রাফ ব্যাবহার করেন । এক্ষেত্রে কোন মাপকাঠিতে পাঠক তা বিচার করবেন, তা বুঝতে পারেন না। দক্ষতার প্রকৃতমাত্রা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়না। তার চেয়ে –

*এইচটিএমেল-এ তিন বছর কোডিং এর অভিজ্ঞতা

* ওরাকলসার্টিফায়েড

দক্ষতার বোধগম্য মাত্রা বোঝায়।

১৮। বিভিন্ন ফন্টের ব্যাবহারঃ

একই সিভিতে বিভিন্ন ফন্ট সিভি কে বিশৃঙ্খল করে দেয়। শুধুমাত্র হেডিং- এ এক ফন্ট এবং সিভির বডিতে অন্য ফন্ট ব্যাবহার করা যায়।

১৯। একই শব্দের বহুল ব্যবহারঃ

সিভিতে একই শব্দের বার বার ব্যাবহার প্রার্থীর দুর্বল যোগাযোগের ক্ষমতা ও সৃজন শক্তির অভাব নির্দেশ করে।

২০। ছবিঃ

হালকা ব্যাকগ্রাউন্ডে পরিচ্ছন্ন পোশাকের পাসপোর্ট আকৃতির ছবিই সিভির জন্য যথেষ্ট। বড় আকৃতির ছবি সিভির জায়গা নষ্ট করে। মডেল কিংবা অভিনেতা/অভিনেত্রী ব্যাতীত ছবির আলাদা কোন গুরুত্ব নেই। গাড়ীতে হেলান দিয়ে ছবি তুলে তা সিভিতে ব্যবহার করা কিংবা গ্রুপ ছবি থেকে ক্রপ করে(কেটে আলাদা করে) সেই ছবি ব্যবহার করা একেবারেই ঠিকনা।

সিভির ভুল

২১। সিভির পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ

সিভির পৃষ্ঠা বাড়ার সাথে সাথে সিভির গুরুত্বের কোন সম্পর্ক নেই। সিভি দু’/তিন পৃষ্ঠার মাঝে সীমাবদ্ধ থাকা ভাল। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দৃষ্টিনন্দন উপায়ে দ্রুত পাঠকের কাছেপৌঁছে দেওয়াটাই মূল বিষয়।

২২। ভাষার ব্যাবহারঃ

সিভিতে ভাষার ব্যাবহার সাক্ষাৎকারের জন্য নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। সাদামাঠা ভাষার ব্যাবহার, প্রার্থীকে সাধারণ মানের প্রার্থী হিসেবে উপস্থাপন করে। উপযুক্ত পরিভাষা সিভির ভাষাকে সমৃদ্ধ করে। পরিভাষা ব্যাবহার করে সংক্ষিপ্ত আকারে প্রয়োজনীয় কথাটি ব্যাখ্যা করতে হবে।

২৩। কাজের ভূমিকার ক্রম ভুলভাবে সাজানোঃ

সিভিতে বর্তমান কাজের বর্ণনা আগে থাকে, তারপর একে একে ক্রমান্বয়ে পুরনো থেকে পুরনোতর কাজের বর্ণনা আসে। নিয়োগকর্তা প্রার্থীর সাম্প্রতিক যোগ্যতা ও দক্ষতার উপর জোর দেন। এই ভুলটি সধারণত কেউ করেনা। করলে, এটি মারাত্মক ভুল হিসেবে বিবেচিত।

২৪। চাকুরী না করা সময়ের ব্যাখ্যা না দেওয়াঃ

একটি চাকুরীর সাথে অন্য চাকুরীর সময়ের পার্থক্য থাকতে পারে। ছয় মাসের বেশি পার্থক্য থাকলে, তার ব্যাখ্যা দেয়া উচিত। পারিবারিক দায়বদ্ধতা, অসুস্থতা, উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ – যাই থাকুক না কেন, তা ব্যাখ্যা করা উচিত। কোন কিছু উল্লেখ্য করা না থাকলে, সে সময় অর্থহীনভাবে অপচয় করা হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়।

২৫। সফট কপি সিভির ফাইলঃ

সফট কপি সিভি পাঠানোর ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তার কাছে পিডিএফ ফাইল এবং রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি হলে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ফাইলে পাঠানো ভাল। জেপিজি ফরম্যাটে সিভি পাঠানো যাবেনা। সিভি ও ছবি আলাদা পাঠানো যাবেনা।

২৬। রেফারিদের বিস্তারিত তথ্য দেওয়াঃ

চাকুরীর অফারের আগ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান রেফারিদের সাথে যোগাযোগ করেনা। তাই সিভিতে রেফারিদের বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার প্রয়োজন নেই। দিলে রেফারিদের অনুমতি নিয়ে ফোন নম্বর ও ই-মেইল আইডি দেয়া যেতে পারে। আত্মীয়দের রেফারি বানানো যাবেনা। শিক্ষক, সহকর্মী, সুপারভাইজার – এরা রেফারি হিসেবে অধিকতর গ্রহণযোগ্য।

২৭। ফাইলের দূর্বল নামঃ

ফাইলের নাম শুধু সিভি হলে, কিংবা সংযুক্তিতে যথাযথ ভাবে দেখা না গেলে সিভি বাদ পড়ে যেতে পারে। সিভি অব… (নাম) হলে সিভি খুঁজে পেতে সমস্যা হয়না। যারা শত শত হাজার হাজার সিভি দেখেন,তাদের জন্য কাজটি সহজ করে দিতে হবে।

২৮। জায়গা নষ্ট করাঃ

যেহেতু সিভি দুই/তিন পৃষ্ঠার মধ্যে শেষ করতে হবে, পৃষ্ঠার মার্জিন কমাতে হবে, দুটো সেকশানের মাঝের স্থানের পার্থক্য কমিয়ে আনতে হবে, যোগাযোগের ঠিকানা স্বল্প পরিসরে উপস্থাপন করতে হবে।

২৯। ব্যাকরণ ও বানানের ভুলঃ

ব্যাকরণ ও বানানের ভুল সিভির সবচেয়ে মারাত্মক ভুল। এই ভুল শিক্ষাগত যোগ্যতা ও উচ্চতর যোগাযোগ দক্ষতার দাবীকে একেবারেই নস্যাৎ করে দেয়। স্পেল চেকারের উপর পুরোপুরি নির্ভর করা যাবেনা। শুদ্ধ করার লক্ষ্যে বার বার পড়তে হবে। প্রয়োজনে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ব্যাক্তিকে দিয়ে পরীক্ষা ক করাতে হবে।

৩০। থার্ড পার্সনে সিভি লেখাঃ

ফার্স্ট পার্সন ন্যারেটিভে সিভি লিখতে হবে।নিজেকে সৎ ভাবে উপস্থাপন করতে হবে। যাতে নিয়োগকর্তার সাথে প্রার্থীর আন্তরিক সংযোগ স্থাপিত হয়।

৩১। অদ্ভূত কিংবা প্রথাবিরোধী শখঃ

এমন কোন শখের কথা উল্লেখ করা যাবেনা যা অন্য কাউকে আহত করার সম্ভাবনা আছে। অথবা, যা অন্যদের কাছে অস্বাভাবিক বা অদ্ভূত মনে হয়।

৩২। অনর্থক দীর্ঘায়িত করাঃ

নবীন চাকুরী প্রার্থীরা অনেক সময় সিভি ছোট হয়ে যাবার ভয়ে অন্তঃসারশুন্য কথা দিয়ে সিভিকে দীর্ঘ করেন। এই কাজটি সিভির মূল বক্তব্যকে দুর্বল করে। সমসাময়িকদের লিংকডইন-এর সিভি দেখে বা বিভিন্ন ক্যারিয়ার সাইটের সাহায্য নিয়ে সিভিটিকে আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে।

৩৩। মিথ্যাঃ

যে কোন ধরণের মিথ্যা সিভিতে নিষিদ্ধ।অনেকে অধিকতর যোগ্যতা বা ভুল অভিজ্ঞতার কথা সিভিতে উল্লেখ করেন। এতে অনেকে সাময়িক ভাবে লাভবান হতে পারেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ জন্য তাদের অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।

৩৪। পার্সোনাল প্রনাউনের অধিক ব্যবহারঃ

নিয়োগকর্তা জানেন সিভিতে কার সম্পর্কে বলা হয়েছে। তাই বার বার “আমি” , “আমাকে” ইত্যাদি পার্সোনাল প্রনাউনের ব্যবহার না করা উত্তম।

৩৫। সিভি টেম্পলেটের নির্দেশনা রয়ে যাওয়াঃ

আমরা অনেকেই সিভি টেম্পলেট ব্যবহার করি। তাতে করে আমরা সুন্দর একটা সিভি গুছিয়ে তৈরি করতে পারি। অনেক সময় আমরা  টেম্পলেটের কিছু নির্দেশনা ভুল করে সিভিতে রেখে দেই।  এটি সিভির মারাত্মক ভুল হিসেবে বিবেচিত।

৩৬। সেকশনের অস্পষ্ট পার্থক্যঃ

অনেক সময় সিভিতে বিভিন্ন সেকশন সুসংগঠিত না হওয়ার কারণে সিভি পড়াটা কষ্টকর হয় এবং সিভি বেশ অগোছালো হয়ে পড়ে। বোল্ড হেডিং ও পর্যাপ্ত জায়গা দিয়ে সিভি গুছিয়ে নিতে হবে। তাতে সিভি পড়তে সুবিধা হবে। সিভিতে পেশাদারিত্বের ছাপ থাকবে।

৩৭। না বলা থেকে বিরত থাকাঃ

অভিজ্ঞতা না থাকলে  নিয়োগকর্তা প্রার্থীর উপর নির্ভর করতে পারেননা।কাছাকাছি কোন অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। কোন একটি কোর্স করা হয়নি বলার চেয়ে, কোর্সটি আগামী তিন মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে বলা ভাল।

৩৮। কো-কারিকুলার আক্টিভিটিজঃ

নবীনদের ক্ষেত্রে কো-কারিকুলার আক্টিভিটিজ না থাকাটা সমস্যা। কো-কারিকুলার আক্টিভিটিজের মাধ্যমে একজন নবীনের প্রবণতা বোঝা যায়, যা থাকে নির্বাচিত করার ক্ষেত্রে বেশ ভাল ভূমিকা রাখে।

৩৯। ট্রেনিং না থাকাঃ

ট্রেনিং নবীনদের সিভিকে গ্রহণযোগ্য করে তোলে।একটি বিষয়ের উপর অধিকতর আগ্রহ প্রকাশ করে।

৪০। অন্যান্যঃ

সিভির উপরে নামের পর বর্তমান ঠিকানা দিতে হবে। ফোন নম্বরে কান্ট্রিকোড দেওয়া প্রয়োজন। বর্তমান সময়ে স্কাইপি আইডি ও লিংকডইন প্রোফাইল বেশ দরকারি। নিয়মিত জব পোর্টাল হালনাগাদ করতে হবে। বিভিন্ন ধরণের শেইপ বা প্রতীক সিভিতে ব্যবহার করা ঠিক না।

পদের নাম খামের উপর বা ই-মেইল সাবজেক্টে লিখতে হবে। কাভার লেটার সিভি পাঠানোর আবশ্যিক বিষয়।

লেখার সময় সিভিতে করা যাবেনা এমন বেশকিছু কাজের তালিকা আমরা পেলাম। প্রথমে বেশি ক্ষতিকর বিষয়গুলো বাদ দিতে হবে, তারপর একে একে অন্যান্য ছোট ছোট ভুলগুলোও শুধরে নিতে হবে।

অন্যদের পেছনে ফেলে চাকুরি পেতে হয়। সঠিক প্রস্তুতি, নির্ভুল সিভি আমদেরকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পোঁছে দেবে।

 

সিভি তৈরির বিস্তারিত জানতে পড়তে পারেন “সিভি ও রেজুমি তৈরির উপায়” 

সিভি ও রেজুমির পার্থক্য বুঝতে পড়ুন “সিভি ও রেজুমির পার্থক্য”

সিভি লিখে দেবার বিজ্ঞাপন দেখে বিভ্রান্ত না হবার জন্য পড়তে পারেন সিভি তৈরির বিজ্ঞাপন ও বাস্তবতা”

ই-মেইলে সিভি ও কভার লেটার পাঠানোর কৌশল জানতে পড়তে পারেন ই-মেইলে কভার লেটার ও সিভি পাঠানোর উপায়”