ইন্টারভিউ আছে? দুশ্চিন্তা হচ্ছে!

চাকুরির জন্য লিখিত পরীক্ষা দিলেন, এইবার মৌখিক পরীক্ষার পালা। অথবা প্রতিষ্ঠান আপনাকে সরাসরি সাক্ষাৎকারে ডাকল! আপনি অন্যদের সাথে কথাবার্তায় পারদর্শী হলেও এই ক্ষেত্রে একটু ভড়কে যাবেন। আর প্রথম চাকুরির সাক্ষাৎকার হলে, আপনার ঘন ঘন পিপাসা পেতেই পারে!

ইন্টার্ভিউ বোর্ডকে আমরা কীভাবে কল্পনা করি? কয়েক জন বাঘ, সিংহ একটা ভীত সন্ত্রস্ত ভেড়াকে প্রশ্নের আক্রমণে উড়িয়ে দিতে চাইছে!

আসলে ব্যাপারটা এমন না। সাক্ষাৎকারের সময় আমরা মানসিক চাপে থাকি, তাই আমাদের মনে হয় সব কিছুই আমাদের প্রতিকূলে।

মজার ব্যাপার হচ্ছে যারা সাক্ষাৎকার নেন তাদের জন্যও ব্যাপারটা সহজ না। অনেকের মাঝ থেকে একজন/দু’জন/কয়েকজনকে বেছে নেওয়া বেশ কঠিন কাজ।

তারা প্রথমে ভাবেন সংশ্লিষ্ট প্রার্থীকে নেওয়া যাবে কিনা। যাদের প্রাথমিক  ভাবে ভাল মনে করা হয়, পরে তাদের মাঝ থেকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রার্থীকে বেছে নেওয়া হয়। তাই তাদের  একই সাথে দু’টো কাজ করতে হয় –

১) বাদ দেওয়া, ও ২) নেওয়া

আপনাকে যা করতে হবে- বাদ পড়ে যাবার মত কাজগুলো করা যাবেনা এবং এমন কিছু করতে হবে যা অন্যদের থেকে আপনাকে এগিয়ে দেয়।

আপনি লিখিত পরীক্ষার জন্য অনেক প্রস্তুতি নিয়েছেন। মৌখিক পরীক্ষার জন্য নিয়েছেন কি?

সাক্ষাৎকারে সাধারণত কি ধরণের প্রশ্ন হয়? মৌখিক পরীক্ষায় মূল্যায়নের মাপকাঠি কি? আপনার পোষাক পরিচ্ছেদ কি হবে? আপনি কি ভাবে কথা বলবেন? প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলে কি করবেন? কীভাবে বিদায় নেবেন?

এই চিন্তাগুলো কি আপনি সংগঠিতভাবে করেছেন? যদি না করে থাকেন তাহলে এই লেখার মূল উদ্দেশ্য আপনি। করে থাকলেও আপনি পড়তে পারেন। আপনার চিন্তা আরও সুসংগঠিত হবে।

সাক্ষাৎকারের পূর্ব প্রস্তুতিঃ

ইন্টারভিউর কথা মনে হলেই আপনি নার্ভাস হয়ে পড়েন! তার মানে আপনার সামনে আরেকটি সুযোগ এসেছে নিজের দুর্বলতাকে কাটিয়ে উঠার এবং তা ব্যবহার করে নিজের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে যাবার।

প্রতিষ্ঠান সর্ম্পকে জানাঃ

চাকুরি খোঁজার প্রথম দিকে আমরা অনেকেই প্রতিষ্ঠান সর্ম্পকে না জেনে সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণ করতে চলে যাই। প্রতিষ্ঠানভেদে সাক্ষাৎকারের প্রশ্নের ভিন্নতা থাকে এবং প্রার্থীর কাছে প্রতিষ্ঠানের চাওয়ার ভিন্নতা থাকে।

আপনাকে প্রতিষ্ঠানের মিশন, ভিশন, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য জেনে যেতে হবে। কোম্পানি কবে প্রতিষ্ঠা হয়েছে, আনুমানিক কতজন লোক এখানে কাজ করেন, কোন কোন ধরণের পণ্য বা সেবা নিয়ে কোম্পানিটি কাজ করে। কোন সেবা বা পণ্যের ক্ষেত্রে এই কোম্পানি অন্য কোম্পানির থেকে অগ্রসর- এই বিষয়গুলো জেনে যাওয়া প্রয়োজন।

সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী সম্পর্কে জানাঃ

সম্ভাব্য সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী সম্পর্কে জানতে পারলে ভাল হয়। প্রতিষ্ঠানের সিইও, মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান ছাড়াও অন্য যারা সাক্ষাৎকারে থাকার সম্ভাবনা আছে তাদের সর্ম্পকে জানার চেষ্টা করতে হবে। লিংকডইন সহ অন্যান্য পেশাদার যোগাযোগ মাধ্যমে খুঁজে দেখা যেতে পারে। তাদের পড়াশুনা কোথায়? তারা কোথায় কাজ করেছেন? তাদের পেশাগত আগ্রহের জায়গা বের করতে পারলে ভাল হয়। আপনাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এক হলে কিংবা আপনারা একই প্রতিষ্ঠানে কাজ করে থাকলে তা স্বাভাবিক ভাবেই আপনাকে একটু এগিয়ে দিবে।

পেশাগত আগ্রহের জায়গা জানা থাকলে, আপনাকে সে বিষয়ে জেনে যেতে হবে। মানুষ অবচেতন ভাবেই নিজের পছন্দের বিষয় সর্ম্পকে অন্যের কাছে জানতে চায়।

সাধারণ প্রশ্নের উত্তর জেনে যাওয়াঃ

প্রতিটি চাকুরির কিছু বিষয় ভিত্তিক সাধারণ প্রশ্ন থাকে। আপনি নবীন হলে চাকুরির সাথে মেলে এমন বিষয় সর্ম্পকে ভালভাবে জেনে যেতে হবে। ভাল রেজাল্ট এবং বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নের সঠিক উত্তর আপনাকে এগিয়ে দিবে। তাতে আপনার কাজের প্রতি একাগ্রতা প্রকাশ পায়।  অভিজ্ঞদের ক্ষেত্রে প্রশ্নগুলো কাজকে ঘিরেই হয়ে থাকে। প্রশ্নকর্তা বুঝতে চান, আপনার কারিগরি দক্ষতা ও বৃহৎ পরিসরে আপনার কাজের অবস্থান সর্ম্পকে আপনার ধারণা আছে কিনা।

আপনার শক্তির যায়গা কোথায়?

এই প্রশ্নের উত্তর এমনভাবে দিতে হবে, যা ঐ পদের জন্য আপনার যোগ্যতাকে সুন্দরভাবে তুলে ধরে।

আপনার সবচেয়ে বড় দূর্বলতা কি?

এর উত্তরে বলবেন না, আপনি অত্যধিক পরিশ্রম করেন। এই উত্তর প্রশ্নকারীরা অসংখ্যবার পেয়েছেন। এমন একটি দূর্বলতার কথা বলুন, ঐ পদের সাফল্যের জন্য তেমন জরুরি নয়। তারপরও আপনাকে বোঝাতে হবে আপনি সেই দূর্বলতা কাটিয়ে উঠার জন্য কি কি পদক্ষেপ নিয়েছেন।

আপনি কেন এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চান?

এই প্রশ্নের জবাবে এটা বলবেন না যে, একমাত্র এই প্রতিষ্ঠানই আপনাকে সাক্ষাৎকারে ডেকেছে কিংবা সাক্ষাৎকারে ডেকেছে তাই এসেছেন। তাতে আপনার প্রতিষ্ঠানের প্রতি, কাজের প্রতি কোন আগ্রহ প্রকাশ পায়না। বরং আপনি বলুন এই প্রতিষ্ঠানের কোন কোন দিক আপনি পছন্দ করেন। এটাও ব্যাখ্যা করুণ, আপনি কীভাবে মানিয়ে নিয়ে প্রতিষ্ঠানে অবদান রাখতে পারবেন।

কয়েকটি প্রশ্ন করার প্রস্তুতি রাখুনঃ

অনেক সময় সাক্ষাৎকার শেষে প্রার্থীর কোন বিষয় জানার আছে কিনা তা জানতে চাওয়া হয়। এক্ষেত্রে কয়েকটি প্রশ্ন মনে মনে তৈরি রাখতে হয়। প্রাসঙ্গিক দু’/তিনটি প্রশ্ন ঐ চাকুরিতে আপনার আগ্রহ প্রকাশ করে।

হেসে যদি বলেন আপনার কোন কিছু জানার নেই, তাহলে তা সে চাকুরির প্রতি নিরাসক্তি প্রকাশ করে।

আপনি যেসব বিষয়ে প্রশ্ন করতে পারেন-

১) চাকুরির কোন একটি দিক সর্ম্পকে বিস্তারিত জানতে চাওয়া।

২) আপনার দৈনন্দিন কাজের ধরণ কেমন হবে? কাজের কতটুকু অন্যদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় করতে হবে?

৩) একজন কর্মীর কাছে প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চাওয়া কি?

৪) জব ডেসক্রিপশনের বাইরে আর কীভাবে আপনি প্রতিষ্ঠানে অবদান রাখতে পারেন।

চর্চা করাঃ আপনার বিষয় সর্ম্পকে জানে বা একই  বিষয়ে পড়া আপনার কোন বন্ধু আপনার একটি সাক্ষাৎকার নিতে পারে।

এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই একদম সাক্ষাৎকারের মত করে পোশাক পরতে হবে।

আপনার বন্ধু যেন অবশ্যই আপনার একটি সঠিক মূল্যায়ন তুলে ধরে।

আপনি প্রতিষ্ঠানের জন্য যোগ্য লোক- এ কথাটি বুঝিয়ে বলার প্রস্তুতি আপনার থাকতে হবে।

আপনাকে জানতে হবে আবেদনকৃত পদে সাফল্যের জন্য কি কি লাগে, এই প্রতিষ্ঠানে কি কি বিষয়কে মূল্যবান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সে বিষয়গুলো সর্ম্পকিত অভিজ্ঞতা ও সাফল্যের ঘটনা আপনাকে সুন্দর করে তুলে ধরতে হবে।

আপনার উত্তরের সাথে কিছু জারগন বা বাজওয়ার্ড ব্যবহার করুণ।  প্রশ্নকর্তার প্রশ্নের ভাষাই হবে আপনার উত্তরের ভাষা।

প্রয়োজনীয় সবকিছু আনার প্রস্তুতি রাখাঃ

সাক্ষাৎকারের জন্য পোশাক পরিচ্ছেদ থেকে শুরু করে, ইন্টারভিউ কার্ড, কলম, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, যাতায়াত ভাড়া, সনদ, মার্কসীট,  সিভি, ইত্যাদি সবকিছু আগের রাতেই প্রস্তুত রাখতে হবে। যাতে করে শেষ সময়ে খুঁজে হয়রান হতে না হয়।

সাক্ষাৎকারের দিনে ও সাক্ষাৎকারের করণীয়:

সাক্ষাৎকারের আগের রাতে পর্যাপ্ত ঘুমান। সাক্ষাৎকারের দিন সকালে আপনার পছন্দের নাস্তা খান। আপনার এসিডিটি হয় এমন খাবার খাবেন না। খালি পেটে রওনা করবেন না। আপনাকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি, পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে সাক্ষাৎকারে যেতে হবে।  আপনি যদি কোন লিখিত পরীক্ষা দিয়ে সাক্ষাৎকারের জন্য নির্বাচিত হন, তাহলে লিখিত পরীক্ষার বিষ্যগুলো একটু ঝালিয়ে নেবেন। অনেক সময় এখান থেকে প্রশ্ন করা হয়ে থাকে বা লিখিত পরীক্ষার প্রসঙ্গে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীরা কথা বলতে পছন্দ করেন।

পোশাকঃ

পেশাদার এবং পরিপাটি পোশাক পরে যাবেন। অনেক প্রতিষ্ঠান পোশাকের ব্যাপারে শিথিল। কিন্তু অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই  সাক্ষাৎকারে আনুষ্ঠানিক/ফর্মাল পোশাক পরাকে গুরুত্ব দেয়। যদি এমন হয়, আপনি সাধারণ পোশাক পরে গেলেন অথচ সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীরা আনুষ্ঠানিক পোশাক পরে আসলেন! আনুষ্ঠানিক  পরিপাটি পোশাক পরিচ্ছেদ সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর মনে আপনার সর্ম্পকে ভাল ধারণা তৈরি করে। কমপক্ষে একটি পোশাক আপনার থাকতে হবে, যা একটি পূর্ণাঙ্গ সাক্ষাৎকারের পোশাক হিসেবে বিবেচিত হয়।  আপনাকে পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি হয়ে সাক্ষাৎকারে যেতে হবে। পোশাক পরিচ্ছেদে পর্যাপ্ত সময় না দিলে তা অন্যদের চোখে ফুটে উঠে।  সাক্ষাৎকারে যে পোশাক পরে যাবেন, তা কয়েকদিন আগে পরে দেখে নিতে হবে কোন সমস্যা আছে কিনা।

সময়ের আগেই পৌঁছে যানঃ

আপনাকে অন্তত ত্রিশ মিনিট আগে পৌঁছার মত করে সময় হাতে নিয়ে বের হতে হবে। যাওয়ার উপায়, যেতে কত সময় লাগে তা আপনার জানা থাকা উচিত। ট্রাফিক জ্যাম থাকে কিনা, কোন সময়ে বেশি থাকে – এইসব তথ্য আপনাকে যথাসময়ে পৌঁছতে সহায়তা করবে। কোনভাবে দেরি হবার সম্ভাবনা তৈরি হলে, আপনার মনে যে চাপ তৈরি হবে, তা আপনার এনার্জি লেভেল অনেক কমিয়ে দেবে। অথচ আপনাকে সাক্ষাৎকারে পূর্ণ উদ্যম নিয়ে অংশগ্রহন করতে হবে।

কোন কারণে দেরি হয়ে গেলে তা চাকুরি সর্ম্পকে আপনার অনাগ্রহ প্রকাশ করে। দেরি হবার কারণ হিসেবে যদি ট্রাফিক জ্যামের কথা বলেন, তাহলে তা সাক্ষাৎকার গ্রহনকারীদের মনে সবচেয়ে বেশি বিরক্তি তৈরি করে।

দেরি করার আরেকটি বড় ক্ষতি হচ্ছে, আপনার আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া। ফলে সামগ্রিকভাবে আপনি পিছিয়ে থেকে সাক্ষাৎকারে অংশ গ্রহণ করবেন। একারনেই সময়ের আগে পৌঁছার বিষয়টিকে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হয়।

আত্মবিশ্বাস নিয়ে নিজেকে তুলে ধরুনঃ

আপনি যখন ইন্টারভিউ রুমে ডুকবেন, দৃঢ় পদক্ষেপে প্রবেশ করুণ। মুখে হাসি নিয়ে একে একে সবার চোখের দিকে তাকান। যিনি মাঝে থাকেন, তার দিকে তাকিয়ে সালাম দিন অথবা প্রতিষ্ঠানভেদে “গুড মর্নিং”, “গুড আফটারনুন” বলে আপনার উপস্থিতি জানান দিন। রুমের এদিকে ওদিকে তাকাবেন না।

তাদের মাঝে কেউ যদি আপনার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়, তাহলে হাসিমুখে করমর্দন করুন। তারা কেউ হাত না বাড়ালে আপনিও হাত বাড়াবেন না।

পরিষ্কার উচ্চারণে ও স্পষ্ট ভাষায় কথা বলুনঃ

আত্মবিশ্বাস নিয়ে শুদ্ধ উচ্চারণে সবাই বুঝতে পারে কিন্তু অনুচ্চ কন্ঠে প্রশ্নের উত্তর দিন। উত্তর দেবার সময় প্রশ্নকারীর চোখের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে ব্যাখ্যা করুণ। এক প্রশ্নের সূত্র ধরে অন্য কেউ প্রশ্ন করলে উত্তর দেবার সময় সম্পূরক প্রশ্নকারীর দিকে তাকিয়ে ব্যাখ্যা করুণ। বার বার “মনে হয়” বা “ওম….” বলা থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রয়োজনে একটু ভেবে জবাব দিন। আপনার উত্তরে যেন আত্মবিশ্বাস থাকে। আপনি যা বোঝাতে চান, ঠিক তাই বলবেন। নিজে নিজে একটু জোরে কথা বলে বাসায় চর্চা করুণ। তাতে আপনি আপনার দুর্বলতার জায়গাগুলো খুঁজে বের করতে পারবেন। কথা বলার ভঙ্গিটা যেন রোবটের মত না হয়। আপনি আপনার স্বাভাবিক ভঙ্গিতে কথা বলুন।  

বেশি ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকুনঃ

সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীরা আপনার প্রতি বন্ধুসুল্ভ হতেই পারেন।  তাই বলে তাদের বন্ধু ভেবে ব্যক্তিগত সব কথা বলে দেওয়া যাবেনা। আপনার বন্ধু/বান্ধবীর কথা, বউ-বাচ্চার কথা, বাসার সমস্যার কথা  এখানে বলা যাবেনা। এইসব কথা আপনাকে অপেশাদার হিসেবে তুলে ধরবে।

তার যা জানতে চান, তার বেশিও বলা যাবেনা। অতিরিক্ত কথা নতুন প্রশ্ন করার সুযোগ করে দেয়। তাতে অনেক সময় আপনি বিপত্তিতে পড়ে যেতে পারেন।

ধীরস্থির, বুদ্ধিমান, ও আত্মবিশ্বাসী লোকেরা সাক্ষাৎকারে ভাল করেন।

ধন্যবাদ জানানঃ

সাক্ষাৎকার শেষ হবার পর সালাম বা ধন্যবাদ দিয়ে আপনি সাক্ষাৎকারের পরিসমাপ্তি টানুন। তাদের মূল্যবান সময় দিয়ে আপনার সাক্ষাৎকার নেবার জন্য, আপনি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারেন। তাদের কাছে সাক্ষাৎকার দেওয়া আপনার জন্য একটি মূল্যবান অভিজ্ঞতা তাও বলতে পারেন।

আপনি জানতে চাইতে পারেন নির্বাচিত হলে পরবর্তী পর্যায়ে আপনাকে কবে নাগাদ জানানো হতে পারে।

কি কি করা যাবেনাঃ

মাঝে মাঝে ছোট ছোট অনেক নির্দোষ কথাও আপনাকে প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে দিতে পারে। সচেতনভাবে শব্দ নির্বাচন করতে হবে। কথার মাধ্যমে আপনাকে প্রমাণ করতে হবে আপনি কাজের প্রতি কতোটা শ্রদ্ধাশীল, আন্তরিক। আপনার পরিশ্রম করার মানসিকতাও আপনাকে ফুটিয়ে তুলতে হবে।

নিচের কাজগুলো থেকে অবশ্যই আপনাকে বিরত থাকতে হবেঃ

১) সাক্ষাৎকার পর্যায়ে চাকুরির বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিয়ে জানতে চাওয়া।

২) আপনি কতশত চাকুরিতে দরখাস্ত করে ডাক পাননি বা কতগুলো দরখাস্ত করার পর এইখানে ডাক পেলেন-  এই তথ্য সাক্ষাৎকারে দেওয়া কিংবা অন্য সাক্ষাৎকার প্রার্থীকে দেওয়া।

৩) আমার চাকুরি খুব প্রয়োজন বা এই চাকুরি হলে আমি অনেক উপকৃত হব- এই জাতীয় কথা বলা। তার চেয়ে আপনি প্রমাণ করুণ আপনি এই চাকুরিটির জন্য কতটুকু যোগ্য। তারা তাদের কাজ সঠিকভাবে করে দেবার লোক খুঁজছেন। যোগ্যতা প্রমাণ করলে আপনি চাকুরি পাবেন। নিজেকে ছোট করে চাকুরি পাওয়া যায়না।

৪) এমন কোন কথা বলবেন না যাতে প্রতিষ্ঠান সর্ম্পকে আপনার কম জানাটা প্রকাশ পেয়ে যায় বা প্রতিষ্ঠান সর্ম্পকে আপনার জানার চেষ্ঠায় ঘাটতি ছিল- এটা প্রকাশ পায়। বরং আপনাকে প্রমাণ করতে হবে আপনি প্রতিষ্ঠান সর্ম্পকে সত্যিকার অর্থেই আগ্রহী।

৫) কোন ভুল, মিথ্যা তথ্য কিংবা নিজেকে প্রমাণের জন্য কোন কিছু অতিরঞ্জিত করা যাবেনা।

৬) আপনার বর্তমান বা পূর্বেকার সুপারভাইজার সর্ম্পকে কোন অসন্মানজনক বা খারাপ মন্তব্য করবেন না। পূর্বেকার চাকুরি বা সুপারভাইজার সর্ম্পকে খারাপ মন্তব্য করলে ধরে নেওয়া হয় যে ভবিষ্যতেও আপনি একই কাজ করবেন। আপনার কাজের পরিবেশ যেমনই থাকুক, আপনার সুপারভাইজার যেমনই হোক- আপনি সেখানকার ভাল দিক গুলো তুলে ধরবেন। আপনি নতুন পরিবেশে আরও দায়িত্ব নিয়ে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করুণ।  আপনাকে তুলে ধরতে হবে-আপনার সাথে কাজ করা সহজ এবং আপনি সহযোগিতামূলক আচরণ করেন। বর্তমান চাকুরির সমস্যা আপনার তৈরি করা না হলেও, সমস্যার কথা শুনলে সাক্ষাৎগ্রহনকারীরা আপনাকে নেওয়ার ব্যাপারে সন্দিহান হয়ে পড়বেন।

৭) কোন প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া যাবেনা। প্রশ্ন না বুঝলে, আবার জেনে নিতে হবে। না পারলে দুঃখ প্রকাশ করতে হবে।

ফলোআপঃ

সাক্ষাৎকার শেষ হবার পর আপনি প্রতিষ্ঠানকে ধন্যবাদ জানিয়ে একটি ই-মেইল করতে পারেন। আপনার সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য এবং তাদের মূল্যবান সময় ব্যয় করে আপনাকে শোনার জন্য তাদের ধন্যবাদ জানান। এতে করে আপনি যে সাক্ষাৎকারটিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন তা প্রকাশ পাবে। এছাড়াও চাকুরিটির প্রতি আপনার আগ্রহ প্রকাশ পাবে।

এই প্রক্রিয়া বা ধাপগুলো অনুসরণ করলে সাক্ষাৎকারে আপনার সাফল্যের হার স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যাবে।

সিভি তৈরির বিস্তারিত জানতে পড়তে পারেন “সিভি ও রেজুমি তৈরির উপায়” 

সিভিতে আমরা কি কি ভুল করি যা পরিহার উচিত তা জানতে পড়ুন “সিভির যত ভুল”

সিভি ও রেজুমির পার্থক্য বুঝতে পড়ুন “সিভি ও রেজুমির পার্থক্য”

সিভি লিখে দেবার বিজ্ঞাপন দেখে বিভ্রান্ত না হবার জন্য পড়তে পারেন সিভি তৈরির বিজ্ঞাপন ও বাস্তবতা”

বিভিন্ন ধরণের দক্ষতা নিয়ে জানতে “দক্ষতার প্রাথমিক আলোচনা” এই লেখাটি পড়তে পারেন।

সফট স্কীলের গুরুত্ব জানতে পড়ুন “সফট স্কীলের প্রয়োজনীয়তা”

কভার লেটার লেখা জানতে পড়ুন “কভার লেটার লেখার উপায়”

ই-মেইলে সিভি ও কভার লেটার পাঠানোর কৌশল জানতে পড়তে পারেন ই-মেইলে কভার লেটার ও সিভি পাঠানোর উপায়”