‘ফুল লিবেন আপা’!
আচমকা শব্দটি শুনে ঘাবড়ে গেলো কণা।জ্যামে আটকে থাকা গাড়ির জানালার গ্লাসে তাকিয়ে দেখল তার বয়সী ছোট্ট একটি মেয়ে, দু’হাত ভরা তাজা ফুল।কয়েকটি মালাও আছে তাতে, বকুল ফুলের মালা।গায়ে শীর্ণ পোশাক।তেল-শ্যাম্পুর অভাবে মেয়েটির ফর্সা গায়ের রঙটা তামাটে বর্ণ ধারণ করছে ।
কণা তার গাড়ির গ্লাস নামিয়ে মেয়েটিকে প্রশ্ন করলো, ‘নাম কী তোমার? ‘
‘কলি’। বিষণ্ন মুখে মেয়েটি জবাব দিল।
কলি! নামটি শুনে কণা চিন্তায় ডুব দিল, সত্যিই তো ফুলের কলির মতো সুন্দর মেয়েটা।ইশ! তাহলে তার এ অবস্থা কেন? আজ কিসের অভাবে সে পথে পথে ফুল বিক্রি করছে?
‘লেন না আপা একটা ফুল’-খুব ভালা ফুল আপা!
কলি নামের মেয়েটির কথায় কণার চিন্তার জগতে ছেদ পড়লো।মেয়েটির কাছ থেকে দু’টি বকুল ফুলের মালা নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে তাকে পঞ্চাশ টাকার একটি নোট এগিয়ে দিলো কণা।দুটি মালার বিনিময়ে পঞ্চাশ টাকা দেখে মেয়েটির চোখ চকচক করে উঠলো।
বললো, আন্নে অনেক ভালা আপা! আন্নে খুব ভালা! ‘
এতক্ষণে জ্যাম ছেড়ে রাজপথে গাড়ি শা শা করে চলতে শুরু করেছে, কিন্তু সেদিকে কণার কোনো লক্ষই নেই।সে জানালার বাইরে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, মুখে চিন্তার ছাপ।
মেয়েকে নিশ্চুপ বসে থাকতে দেখে পাশে বসে থাকা মা ওর হাতে হাত রাখলেন।হঠাৎ কারো স্পর্শে কণা চমকে উঠলো।তার মা বললেন – ‘কী ভাবছো কণা? ‘
কণা হতাশার সুরে বলে উঠলো -‘কলির নামের মেয়েটির কথা ভাবছি মা।কত সুন্দর ফুলের মতো মেয়েটি, অথচ আজ কিসের অভাবে ও আজ রাস্তায় ফুল বিক্রি করছে? ‘
-‘ সারা শহরে তো এরকম অনেকেই আছে।’
– ‘আচ্ছা মা! ওদের জন্য কি কিছু করা যায় না? ‘
-‘কেনো করা যাবে না অবশ্যই করা যায় ।’
-‘যেমন ‘?
-‘এদের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য এখন থেকেই সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমে পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।বর্তমানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাবে পথশিশুদের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে ।তবে এদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।এই ক্ষুদ্র উদ্যোগ তাদের মুখে কেবল সামান্য ক্ষণের জন্য হাসি ফোটায় এবং কষ্টগুলোকেও দূর করবে ।
এছাড়া সরকারিভাবে তাদের বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থাও করা যেতে পারে এতে করে তাদের নিরক্ষরতা দূর হবে, আর কেউ ফুল বিক্রি করবে না, বা পথে পথে ঘুরবে না।’
-‘কিন্তু মা! আমার মতো ছোট্ট মানুষ ওদের জন্য কি করতে পারে?’
-‘এই যে তুমি যা করলে।পাঁচ টাকার ফুল কিনে পঞ্চাশ টাকা দিলে ।এভাবে তাদের সাহায্য করতে পারো।এছাড়া তোমার অনেকগুলো জামা থেকে ওদের দু’একটা দিয়েও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারো।’
-‘আচ্ছা মা! এমন দিন কবে আসবে, যেদিন পথে কোনো পথশিশু থাকবে না।সবার হাতে থাকবে বই!’
-‘যেদিন সরকার ও জনগণ সবাই মিলে তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে, সেদিনই হবে সেই দিন মা।’

লেখক : সামিয়া আক্তার