সিভি কি? সিভিতে কি কি থাকা প্রয়োজনঃ
এক কথায় সিভি ও রেজুমি হচ্ছে এমন একটি ডকুমেন্ট, যা আমরা কোন প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠাই চাকুরি, বৃত্তি বা পড়াশুনার আর্থিক সহায়তা পেতে। ফলে, একটি কার্যকর সিভি বা রেজুমি লিখতে জানাটা আমাদের সমগ্র ক্যারিয়ারে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকা যেমন প্রয়োজন, তেমনি যোগ্যতার যথাযথ উপস্থাপনাও প্রয়োজন। প্রতিষ্ঠান ও পদের চাহিদার উপর নির্ভর করে একই প্রার্থীর ভিন্ন ভিন্ন উপস্থাপনা প্রয়োজন হয়ে পড়ে। শুধু তথ্যের পর তথ্য সাজালেই ভাল সিভি তৈরি হয়না। তথ্যগুলোকে এমন ভাবে সাজাতে হয়, যাতে সিভি বাছাইকারী সিভিতে চোখ বুলালেই তার প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে যান।সাজানোটা এমন হতে হয়, যাতে সিভি দেখেই বাছাইকারীর মনে হয়- এই সিভির মানুষটিকেই তিনি খুঁজছেন।এ কারণেই সময় ও মনোযোগ দিয়ে সিভি তৈরি করতে হয়। সিভি তৈরির জন্য কিছু পরামর্শ মানলে সাক্ষাৎকারে ডাক পাবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
সিভির মাধ্যমেই আপনি এক বা একাধিক ব্যক্তিকে এই বিশ্বাস/আস্থা দিতে চান বিজ্ঞাপিত পদের সাক্ষাৎকারের জন্য আপনি এমন একজন, যাকে তাদের ডাকা প্রয়োজন। আপনি এমন এক জন সাম্ভাব্য ব্যক্তি, যিনি তাদের প্রতিষ্ঠানের যে শুন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা পূরণ করার সামর্থ্য রাখেন।
কি কি জিনিস দিয়ে সিভি সাজাতে হয়?কিভাবে সাজাতে হয়? সিভি তৈরির সময় কি কি বিষয় মেনে সিভি সাজাতে হয় ?
এইসব প্রশ্নের উত্তর আমরা আলোচনা করব একে একে।
সিভি তৈরি করা, ভোরে ঘুম থেকে ওঠে হাঁটার মত। শুরু করা এবং নিয়ম মেনে করাটা কষ্টকর কিন্তু এর ফলাফল সুদূর প্রসারী।
অভিজ্ঞতা যাই থাকুক না কেন, প্রত্যেক মানুষেরই কিছু দক্ষতা ও স্বক্ষমতা থাকে। বিজ্ঞাপিত পদের প্রেক্ষিতে এই দক্ষতা ও স্বক্ষমতা উপর আলোকপাত করে সিভি সাজাতে হয়।
সিভি তৈরি করার সময় আপনার মনে স্বাভাবিকভাবেই কিছু প্রশ্ন আসে-
ক) আপনার সিভির দৈর্ঘ্য কতটুকু হবে?
খ) আপনি কি কি তথ্য সন্নিবেশিত করবেন?
গ)সিভির গঠণ কেমন হবে?, বা সিভি কিভাবে সাজাবেন?
ঘ) সিভি কোথা থেকে শুরু করবেন!
প্রত্যেক মানুষ আলাদা।প্রত্যেকের সিভি আলাদা। কিন্তু কার্যকরী একটা সিভি তৈরি করতে কিছু নির্দেশিকা মেনে চলা উচিত। নির্দেশিকা মেনেও সিভিতে নিজস্বতা রক্ষা করা যায়।
সিভি তৈরির সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটিকে আমরা কয়েকটি ধাপে ভাগ করতে পারি।
১) সিভি লেখা শুরুর পূর্বে জানার বিষয়
২) সিভি সাজানোর কৌশল
৩) আপনার সিভি প্রোফাইল/পারসোনাল স্টেইটমেন্ট
৪) সফট স্কীল
৫) আপনার অভিজ্ঞতা- কি কি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে? বিভিন্ন কাজে আপনার ভূমিকা বা রোল কিভাবে বিন্যস্ত করতে/সাজাতে হবে
৬) সিভির ভাষা
৭) শিক্ষা ও যোগ্যতা
৮) আগ্রহ ও শখ
এই ধাপগুলো অনুসরণ করে সিভি তৈরি করলে সাক্ষাৎকারে ডাক পাবার হার অনেক বেড়ে যাবে।
১) সিভি লেখা শুরুর পূর্বে জানার বিষয়ঃ
জীবনের অনান্য ক্ষেত্রের মত সিভি তৈরিতেও সঠিক প্রস্তুতির প্রয়োজন। সিভি হচ্ছে আপনার প্রস্তুতকৃত কাগজপত্রের মাঝে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ, যা আপনার ভবিষ্যতের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। এই কারণে সিভি তৈরিতে যথার্থ প্রস্তুতি, আপনার সময় ও পরিশ্রমের বিনিয়গের সবটুকুই সুদে আসলে ফিরিয়ে দেবে।
সিভি তৈরিতে সফল হতে চাইলে কিছু বিষয় সম্পর্কে আপনার পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে।
ক) এই সিভি দিয়ে আপনি কি অর্জন করতে চান?
খ) আপনার সিভিতে নিয়োগকর্তা কি দেখতে চান?
গ) আপনার সিভি কে পড়বেন বা বাছাই করবেন?(নিয়োগকর্তা বা নিয়োগ ব্যাবস্থাপক)
ক) এই সিভি দিয়ে আপনি কি অর্জন করতে চান?
একটা ভাল সিভি আপনার পছন্দসই চাকুরীর জন্য অনেকগুলো সাক্ষাৎকারে ডাক পেতে সাহায্য করবে। এই কথাটি বলা অনেক সহজ করার চেয়ে।
সিভি প্রস্তুত করার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আপনাকে এই কথাটি মাথায় রাখতে হবে।
যত দ্রুত আপনি নিয়োগকর্তাকে বোঝাতে পারবেন, আপনি তাদের কাজের জন্য যোগ্য লোক, ততই সাক্ষাৎকারে ডাক পাবার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।এ কাজটি করার জন্য আমাদের জানতে হবে- নিয়োগকর্তা সিভিতে কি দেখতে চান এবং কিভাবে দেখতে চান।
খ)আপনার সিভিতে নিয়োগকর্তা কি দেখতে চান?
অধিকাংশ প্রার্থীই সিভি লেখা শুরু করার আগেই, চাকুরী খোঁজায় সফলতা লাভের সম্ভাবনা নিজেই নষ্ট করে ফেলেন।
নিয়োগকর্তা কি চান- এই প্রশ্নের উত্তর তারা খুঁজতে অনিহা বোধ করেন। এই ব্যাপারে তারা কোন সময় দিতে চাননা।
নিজের যে যোগ্যতাকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবেন, তারা তার উপর ভিত্তি করে সিভি তৈরি করেন।
প্রতিষ্ঠানের চাহিদা খুঁজে বের করে, সেই অনুযায়ী সিভি তৈরি করতে হবে। অনুমানের উপর ভিত্তি করে সিভি তৈরি করলে, সাক্ষাৎকারে ডাক পাবার সম্ভাবনা খুব কম।
প্রথমেই আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে, আপনার পছন্দের প্রতিষ্ঠান আবেদনকারীর সিভিতে কি দেখতে চান। যাতে করে আপনি আপনার সিভিতে প্রতিষ্ঠানের চাহিদার সাথে মিল রেখে শিক্ষা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে একটি ভাল সিভি করতে পারেন। যা আপনার সাম্ভাব্য নিয়োগকর্তার মনে দাগ কাটবে।
অনলাইনে একই রকমের চাকুরীর বিজ্ঞাপন দেখে প্রতিষ্ঠানের চাহিদা খুঁজে বের করা যায় সহজেই।এক্ষত্রে জব সাইট চাকুরি.কম ও বিডিজবস আপনার বেশ কাজে আসবে। বেশকিছু বিজ্ঞাপন দেখে প্রতিষ্ঠানের চাহিদার একটা তালিকা করতে হবে। যে দক্ষতা বা যোগ্যতাগুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বার বার চাওয়া হয়, সেগুলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ইন্ডাস্ট্রির উপর ভিত্তি করে, আপনার তালিকা বেশ ভিন্ন হতে পারে।তবুও আপনি বুঝতে পারবেন আপনাকে সিভিতে কি লিখতে হবে।
নিয়োগকর্তাদের চাহিদার তালিকা যখন আপনার হাতে থাকবে, চাকুরীর বাজারের অধিকাংশ প্রার্থীর তুলনায় আপনি এগিয়ে থাকবেন। কারণ এখন আপনি জানেন, ঠিক কি লিখলে আপনার সিভি সাফল্যের মুখ দেখবে। আপনি এখন অধিকাংশ লোকের মত অনুমানের উপর নির্ভর করছেন না।
নিয়োগকর্তার চাহিদার যে বিষয়গুলো আপনার অভিজ্ঞতার সাথে মেলে তা সিভিতে অন্তর্ভুক্ত করা বেশ সহজ। কিন্তু যে বিষয়গুলোতে আপনার অভিজ্ঞতা কম বা কোন অভিজ্ঞতা নেই, সেক্ষত্রে তা সিভিতে অন্তর্ভুক্ত করা একটু জটিল। সেক্ষেত্রে আপনাকে একটু কৌশলী হতে হবে। আপনি মনযোগ দিয়ে ভাবলে বুঝবেন, আপনার বেশ কিছু পূনঃব্যবহার যোগ্য দক্ষতা বা ট্রান্সফারেব্যাল দক্ষতা আছে যা আপনি চাকুরীতে বা চাকুরীর বাইরে প্রজেক্ট করার সময়, ফ্রি ল্যান্সিং করার সময় বা স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ করার সময় অর্জন করেছেন। যেখানে আপনার অভিজ্ঞতা কম বা একেবারেই নেই, সেখানকার প্রয়োজনীয় দক্ষতা যেখানে যেখানে অর্জন করেছেন সেসকল কাজ, প্রজেক্ট, ফ্রিল্যান্সিং, স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ– এর উল্লেখ্য এখানে থাকবে।
গ) আপনার সিভি কে পড়বেন বা বাছাই করবেন?
আপনার সিভি বাছাই করবেন নিয়োগকর্তা বা নিয়োগ ব্যবস্থাপক। পরবর্তী চাকুরী পেতে এই দু’ধরণের মানুষকে আপনার প্রভাবিত করতে হবে-নিয়োগকর্তা ও নিয়োগ ব্যবস্থাপক।এছাড়া অন্যকোন উপায় নেই। যদি আপনি তাদের মনে ছাপ ফেলতে চান, আপনাকে তাদের দৃষ্টিভঙ্গী থেকে বিভিন্ন জিনিস বিবেচনা করতে হবে। এই কৌশল প্রয়োগ করলে, আপনি আপনার সিভি ও চাকুরী খোঁজার প্রক্রিয়া থেকে সবচেয়ে ভাল ফলাফল আশা করতে পারেন।
নিয়োগকর্তা বা নিয়োগ ব্যবস্থাপক কারা?
তাদের সম্পর্কে আপনার হয়ত সাধারণ ধারণা আছে। আমরা তাদের দৃষ্টিভঙ্গী সম্পর্কে যা জানি, তা কাজে লাগিয়ে এমন একটি সিভি তৈরি করতে হবে, যে সিভি তাদেরকে আকৃষ্ট করবে মনযোগ দিয়ে সিভিটি পড়তে।
যে ব্যক্তির টীমে/ব্যবসায় পদ খালি আছে এবং যিনি সে খালি পদে কাজ করার জন্য লোক খুঁজছেন, তিনিই নিয়োগ ব্যবস্থাপক। মূলত এই ব্যক্তিটিকেই আপনি প্রভাবিত করতে চান।
খালি পদের জন্য একজন যোগ্য প্রার্থী খুঁজে দিতে নিয়োগকারী নিয়োগ ব্যবস্থাপকের পক্ষে কাজ করেন। নিয়োগকারী একই প্রতিষ্ঠানের লোক হতে পারেন(মানব সম্পদ ব্যবস্থাপক)অথবা অন্য প্রতিষ্ঠানের(আউট সোর্সিং কোম্পানির) লোক হতে পারেন। তাদের তিনটি বিষয় আকর্ষণীয় সিভি লিখতে সাহায্য করবে।
১) তারা দু’জনেই খুব ব্যাস্ত, ব্যয় করার মত সময় তাদের খুব কমঃ
তারা উভয়েই কর্মব্যস্ত দিন কাটান। অসংখ্য কাজ তারা ডেডলাইনের/ নির্দিষ্ট সময় সীমার মধ্যে শেষ করেন। তারা একদমই সময় আপচয় করতে চান না।
এই বিষয়টি কি ভাবে আপনাকে সাহায্য করবেঃ
আপনি যদি তাদের মনে ছাপ ফেলতে চান, তাহলে যতটুকু সম্ভব তাদের সময় কম নষ্ট করতে হবে।আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে, আপনার সিভি সংক্ষিপ্ত ও কার্যকরী। আপনি যে বক্তব্য তাদের কাছে তুলে ধরতে চান, তা যেন তারা সহজেই পেয়ে যান।
২) প্রচুর মানুষ তাদের মনযোগ পাবার অপেক্ষা করছেঃ
আপনি তাদের মনোযোগ পেতে চাইলে, আপনার সিভিকে তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হবে।
এই বিষয়টি কি ভাবে আপনাকে সাহায্য করবেঃ
যখনই কোন নিয়োগকর্তা বা নিয়োগ ব্যাবস্থাপক আপনার সিভি খুলবেন, তা যেন তৎক্ষণাৎ তার উপর প্রভাব বিস্তার করে তার মনযোগ ধরে রাখতে পারে।
আপনি কিভাবে তা করবেন?
আপনার সিভির উপরের অংশটুকু তাদের চাহিদার সাথে বিশেষভাবে সংগতিপূর্ণ করে উপস্থাপন করতে হবে। সাধারণত নিয়োগকর্তা তার প্রয়োজনের অংশটুকু সিভি খোলার সাথে সাথে দেখতে না পেলে সে সিভির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।
৩) তার খুব সহজেই ভীত হয়ে পড়েনঃ
নিয়োগকর্তা বা নিয়োগ ব্যাবস্থাপকের সুনাম তাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। একজন অযোগ্য প্রার্থীর নিয়োগ তাদের সেই সুনাম নষ্ট করে করে দিতে পারে। তাদের জন্য লোক নিয়োগের ব্যাপারটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।
এই বিষয়টি আপনাকে কিভাবে সাহায্য করবেঃ
আপনার সিভি লেখার সময় আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে, আপনার সিভিতে এমন কিছু নেই, যাতে কেউ আপনাকে বিন্দুমাত্র সন্দেহ করতে পারে। একটামাত্র ব্যাকরণের ভুল আপনার সামগ্রিক বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে।
আপনার সিভির ভাষা হতে হবে ভুলত্রুটি মুক্ত এবং বোধগম্য। বিন্যাস ও কাঠামো হতে হবে যথার্থ। সবশেষে আপনার একটি যথাযথ প্রক্রিয়া থাকতে হবে, সিভিটি পাঠানোর পূর্বে সবকিছু ঠিক আছে কিনা তা পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা করবার।
এখন আপনি অধিকাংশ চাকুরী প্রার্থী থেকে এগিয়ে আছেন। কারণ আপনি এখন জানেন নিয়োগকর্তা আপনার সিভিতে কি দেখতে চান। কারা আপনার সিভি বাছাই করবেন, তারও কিছুটা আপনি জানেন।
এক কথায় আপনি যদি আপনার সিভির মাধ্যমে সাক্ষাৎকারে ডাক পেতে চান, আপনাকে দু’টো কাজ করতে হবে-
১) সিভি বাছাইকারীকে আপনার বোঝাতে হবে, তাদের যে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা প্রয়োজন তা আপনার আছে।
২) পেশাদারিত্ব ও দ্রুততার সাথে আপনার ‘মূল্য’ আপনাকে তুলে ধরতে হবে।
এই দু’টো কাজই এক সাথে করতে পারলে, আপনি সাক্ষাৎকারে ডাক পাবেন।
আপনি যদি নিয়োগকর্তা বা নিয়োগ ব্যবস্থাপককে দ্রুত দেখাতে পারেন তাদের কাজ করার জন্য আপনার প্রয়োজনীয় দক্ষতা আপনার আছে, তাহলে তারা তৎক্ষণাৎ বলবেন, “ এই মানুষটি আমাদের কাজটি করতে পারবেন, তাকে সাক্ষাৎকারে ডাকা হউক।”
২। আপনার সিভির বিন্যাস ও গঠণ কেমন হবে?
নিচের বিষয়গুলো মাথায় রেখে সিভির বিন্যাস ও গঠন ঠিক করতে হবে-
ক) আপনার সিভিতে যথার্থ পেশাদারিত্বের ছাপ থাকতে হবে।
খ) সিভি এমন ভাবে সাজাতে হবে, যাতে পাঠক সহজেই তা পড়তে পারেন এবং প্রয়োজনীয় তথ্য সহজেই খুঁজে পান।
গ) তথ্য এমন ভাবে সাজাতে হবে, যাতে সহজবোধ্য হয় এবং সহজপাঠ্য হয়।
সিভির দৈর্ঘ্যঃ
নিয়োগকর্তা বা নিয়োগ ব্যবস্থাপকরা সাধারণত খুব ব্যস্ত থাকেন। সুতরাং আপনার সিভি সংক্ষিপ্ত ও কার্যকরী হওয়া প্রয়োজন। তাতে আপনার সিভি পড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। সিভি সাধারণত দু’ পৃষ্ঠার হয়।বেশি বা কম অভিজ্ঞতার কারণে, সিভির দৈর্ঘ্য দু’ পৃষ্ঠার চেয়ে কম বা বেশি হতে পারে। অনেক বেশি অভিজ্ঞতা থাকলে আপনার সিভি তৃতীয় পৃষ্ঠায় চলে যেতে পারে। অভিজ্ঞতা কম থাকলে সিভি পূর্ণ দু’পৃষ্ঠা নাও হতে পারে। যে কোন ক্ষেত্রেই দু’পৃষ্ঠার কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করা উচিত।
পরামর্শঃ
যদি আপনার সিভি বেশি বড় হয়ে যায়, তাহলে অপেক্ষাকৃত আগের কাজে আপনার যে ভূমিকা বা রোল ছিল তা সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশ করতে হবে। কারণ নিয়োগকারী আপনার সাম্প্রতিক সময়ের অভিজ্ঞতার উপর জোর দিবেন।
বিন্যাসঃ
আপনার সিভির বিন্যাস যাই হোক না কেন, সিভি সহজবোধ্য ও সহজপাঠ্য হতে হবে। এই দু’টো বিষয় আপনার সিভির পাঠককে সন্তুষ্ট করতে সাহায্য করবে।
হেড হান্টিং ফার্ম,কনসালটেন্সি ফার্মকে মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে সিভি পাঠাবেন। সরাসরি কোন প্রতিষ্ঠানকে সিভি পাঠালে তা পিডিএফ ফাইলে হওয়া ভাল।
আপনি যে ফণ্ট ব্যবহার করবেন, তা যেন সহজপাঠ্য ও মার্জিত হয়। টাইমস নিউ রোমান(Times New Roman), টাহোমা(Tahoma), এরিয়েল(Arial), ও ক্যালিব্রি(Calibri) ব্যবহার করা যেতে পারে। আকর্ষণীয় কিন্তু জটিল ফন্ট ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।এ ধরনের ফন্ট পাঠককে আপনার সিভি পড়তে নিরুৎসাহিত করবে।
সিভিতে হালকা ব্যাকগ্রাউন্ডেরপাসপোর্ট সাইজ ছবি ব্যবহার করা ভাল।ইনফর্মাল কিংবা ক্যাজুয়াল ভঙ্গীতে তোলা ছবি ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।
সিভিতে রঙের ব্যবহার তেমন উৎসাহিত করা হয়না। সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডেকালো ফন্টের লেখাই সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য। আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর ফার্ম গুলোতে হালকা রঙের ব্যবহার করা যেতে পারে।কিন্তু তা অবশ্যই পেশাদার(Professional) উপস্থাপনা হতে হবে।
সিভির গঠণঃ
একটা সিভির বিভিন্ন অংশ কিভাবে সাজিয়ে সমন্বিত করতে হবে তা নিচে আলোচনা করা হল।
নাম ও যোগাযোগের ঠিকানাঃ
সিভির প্রথমেই আপনার নাম ও যোগাযোগের বিভিন্ন উপায় উল্লেখ্য থাকবে। যাতে কেউ সাক্ষাৎকারে ডাকতে চাইলে, তারা বুঝতে পারেন আপনি কে এবং আপনার সাথে যোগাযোগের উপায় কি?
মৌলিক অন্তর্ভূক্তিঃ
টেলিফোন নম্বরঃ
মোবাইল ফোন নাম্বার হলে ভাল হয়।তাতে যে কোন সময় আপনার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হবে।
ই-মেইলঃ
এমন ই-মেইলের ঠিকানা ব্যবহার করতে হবে, যা মার্জিত। হাস্যরসের সৃষ্টি হয় এমন ই-মেইল ব্যবহার করা যাবেনা।
অবস্থানঃ
আপনার বসবাসের স্থানের সাধারণ নাম। যেমন – বগুড়া। পূর্ণ ঠিকানা ব্যবহারের দরকার নেই।
লিংকডইন(Linked In) প্রোফাইলের ঠিকানা দিতে পারেন। টুইটার লিঙ্ক ব্যবহার করা যেতে পারে, যদি পেশা ভিত্তিক প্রোফাইল হয়।
সিভি প্রোফাইল/ পার্সোনাল স্টেইটম্যান্টঃ
সিভি প্রোফাইল হচ্ছে কনট্যাক্ট ডিটেইলসের ঠিক নীচে থেকে আপনাকে পাঠকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
আপনার সকল জ্ঞান, দক্ষতা, ও যোগ্যতাকে আকর্ষণীয় কয়েকটি বাক্যের মাধ্যমে প্রকাশ করে পাঠকের মনযোগ আপনার উপর নিয়ে আসে সিভি প্রোফাইল। যা আপনার সম্পর্কে তাদের আরও জানতে উৎসাহিত করে।
কাজের অভিজ্ঞতাঃ
আপনার বর্তমান ও অতীত অভিজ্ঞতার বর্ণনা থাকবে প্রোফাইলের পর। এই অংশে পাঠক দেখতে পাবে কর্ম জীবনে আপনি কি কি করেছেন এবং তা কিভাবে আপনার প্রতিষ্ঠানে অবদান রেখেছে। সধারণত সময়ের বিপরীত ক্রমে আপনার রোলগুলো লিপিবদ্ধ থাকবে এখানে। বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে এই নিয়মের ব্যতিক্রমও করা যায়।
শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ
সিভি ঠিক শেষ হওয়ার আগের প্যারাতে আপনার শিক্ষা ও যোগ্যতার বর্ণনা থাকবে। সদ্য স্নাতকদের এখানে বিস্তৃত বর্ণনা দিতে হবে।অভিজ্ঞতার জায়গা এখানে পুষিয়ে নিতে হবে। শিক্ষাজীবনের যা যা চাকুরীর সাথে মেলে তা বিশেষ করে তুলে ধরতে হবে। অভিজ্ঞদের ক্ষেত্রে, শিক্ষা ও যোগ্যতার বর্ণনা অপেক্ষাকৃত সংক্ষিপ্ত হবে। কারণ, তাদের কাজের অভিজ্ঞতা ও কাজে তাদের ভূমিকা নিয়োগকর্তার কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
আগ্রহ বা শখঃ
আগ্রহ বা শখের অংশটুকু ঐচ্ছিক। এই অংশটুকু তখনই অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত যখন তা কাজের সাথে সম্পর্কিত হয়। কাজ সম্পর্কিত আগ্রহ, স্বেচ্ছা সেবামূলক কাজের অভিজ্ঞতা বা বিশেষ কোন অর্জন যদি আবেদনকারীর ভান্ডারে থাকে – সেক্ষেত্রেএই অংশটুকু গুরুত্বপূর্ণ।
এখন আমরা একে একে দেখব কিভাবে সিভির এই বিষয়গুলো সাজাবো এবং গুছিয়ে লিখব।
৩) সিভি প্রোফাইল লেখার উপায়ঃ
নিয়োগকর্তা বা নিয়োগব্যবস্থাপক সর্ব প্রথম যে অংশটুকুর উপর নজর দেন, তা হচ্ছে সিভি প্রোফাইল। নিয়োগকর্তা বা নিয়োগব্যবস্থাপকের যে চাহিদা তার যোগান যেন এখানে থাকে।
সিভি প্রোফাইলের উদাহরণঃ
সিভি প্রোফাইলের উদ্দেশ্য হচ্ছে আপনার সামর্থ্যের একটি সংক্ষিপ্ত উপস্থাপন করা এবং দেখানো আপনি প্রতিষ্ঠানকে কি দিতে পারবেন। সিভি প্রোফাইল আকর্ষণীয় কিন্তু মার্জিত হবে। জোর দিতে হবে, হার্ড স্কীলের উপর, যেমন- ইন্ডাস্ট্রী সম্পর্কিত দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, ভাষা দক্ষতা, যে কোন ধরণের আইটি স্কীল, ইত্যাদি।
আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় এমন বহুল ব্যবহৃত সফট স্কীল দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। যেমন- কঠোর পরিশ্রমী, টীম প্লেয়ার, শক্তিশালী যোগাযোগ দক্ষতা সম্পন্ন, প্রবল উৎসাহী, ইত্যাদি।
আপনি এই শব্দসমূহ দেখেছেন এবং তাদের কয়েকটি বা সবকটি আপনার ব্যবহার করতে ইচ্ছে হয়েছে। প্রকৃত অর্থে এই দক্ষতাগুলো আপনার না থাকলে এই শব্দ সমূহ আপনার যোগ্যতা সম্পর্কে কিছু বলতে পারেনা। সেক্ষেত্রে এই শব্দসমূহকে আপনার সিভির বাইরে রাখাই ভাল। একেবারে বাইরে রাখতে না পারলে, যত কম রাখা যায় ততই ভাল।
আপনি যদি নিজেকে পরিশ্রমী টীম প্লেয়ার হিসেবে প্রমাণ করতে চান, তাহলে কাজের বর্ণনার সময় উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিন, টীমে কাজ করার মাধ্যমে আপনি কি ভাবে দলগত সাফল্য অর্জন করেছেন। দক্ষতার নাম দেওয়ার চেয়ে দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ফলাফল বের করে আনাটা নিয়োগকর্তার কাছে অনেক বেশি আকর্ষণীয়।
কার্যকর ও অকার্যর সিভি প্রোফাইলের পার্থক্যঃ
এখানে একটা প্রোফাইলের উদাহরণ দেওয়া আছে। দেখুন, পড়ুন এবং বলুন যার প্রোফাইল তিনি কি কাজ করেন?
“কঠোর পরিশ্রমী, টীমে ও একাকী কাজ করতে সক্ষম। নতুন আইডিয়া ও দক্ষতা দ্রুত শিখতে সমর্থ্য। আমি নিজের কাজে গর্ববোধ করি, উৎকর্ষে বিশ্বাস করি এবং সবসময় নিদির্ষ্ট সময়ের মাঝে কাজ শেষ করি।”
কোন ধরণের কাজের জন্য এই ব্যক্তি উপযুক্ত? এই প্রোফাইলের মালিককে আপনি কোন ধরণের চাকুরী দিতে চাইবেন? এই প্রোফাইলটি শ্রুতিমধুর কিন্তু এই প্রোফাইল থেকে বের করা অসম্ভব, এই চাকুরী প্রার্থীর কি দেবার আছে। সস্তা ও বহুল ব্যবহৃত শব্দ দিয়ে এই প্রোফাইটি সাজানো। এই প্রোফাইলে কোন ঘটনা বা তথ্য নেই। কিছু বিষয় গুরুত্ব পেতে পারে কিন্তু কোন ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত না হবার কারণে গ্রহণযোগ্যতা কমে গেছে।
একই প্রোফাইলকে আমরা ভিন্নভাবে লিখতে পারি-
“বড় বাসগৃহ নির্মাণ প্রকল্প নিদির্ষ্ট সময়, বাজেটের মধ্যে শেষ করার মত সফল টীমকে সহায়তা করার তিন বছরের অভিজ্ঞ সফল প্রোজেক্ট সাপোর্ট এসিস্ট্যান্ট।”
আপনি যদি আপনার প্রোফাইল এই রকম ঘটনা ও তথ্য সমৃদ্ধ করেন, তাহলে নিয়োগকর্তা বুঝতে পারেন আপনার কাছে তার প্রতিষ্ঠানকে দেবার মত কি আছে।
৪) সফট স্কীলঃ
আপনার প্রোফাইলের পর সফট স্কীল আংশটির উপস্থাপনা সাধারণ কিন্তু খুবই কার্যকরী। বুলেট পয়েন্টে সাজানো সফট স্কীল আংশটি অবশ্যই চাকুরির চাহিদার সাথে মিল রেখে হতে হবে।
সফট স্কীলের উদাহরণ – দল ব্যবস্থাপনা, নেতৃত্ব, যোগাযোগের দক্ষতা , সমস্যা সমাধানের দক্ষতা, ইত্যাদি। পাঠক এই আংশটিতে চোখ বুলালেই বুঝতে পারেন আপনি এই কাজের জন্য একজন যথার্থ ব্যক্তি। আপনাকে সাক্ষাৎকারে ডাকার সিদ্ধান্ত নিতে এই অংশটি বেশ সহায়তা করে।
ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কিত জ্ঞান, প্রযুক্তিগত দক্ষতা, ভাল ফলাফল, কোন অর্জন- যে কোন কিছুই আপনি এখানে উল্লেখ্য করতে পারেন। তবে তা আবশ্যই চাকুরীর বিজ্ঞাপিত চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।
৫) আপনার অভিজ্ঞতাঃ কি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং কিভাবে আপনার সিভি সাজাতে হবেঃ
সিভির এই অংশটিতে আপনার দক্ষতা, যোগ্যতা ও সামর্থ্যের প্রদর্শনী, যা দেখে নিয়োগকর্তা বুঝতে পারবেন তার জন্য আপনার ভান্ডারে কি কি রাখা আছে।
ভূমিকা বর্ণনা বা রোল ডেসক্রিপশান এমনভাবে করতে হবে যাতে আপনি যে কাজের জন্য আবেদন করেছেন তা সম্পাদন করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল জ্ঞান ও দক্ষতা আপনার আছে তা পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠে।
বিভিন্ন কাজে আপনার ভূমিকা সাজিয়ে লেখাঃ
ভূমিকা বর্ণনার সময় সময়ের বিপরীতক্রমে বর্তমান বা সর্বশেষ কাজের ভূমিকা আগে আসবে। তারপর একে একে পেছনের দিকে যেতে থাকবে।
আবেদনকৃত পদের জন্য যাদের প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা আছে, তাদের জন্য এই পদ্ধতি বেশ ভাল।
যাদের প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা নেই বা কম আছে কিংবা যারা ক্যারিয়ারের গতিপথ পরিবর্তন করতে চান তারা এই নিয়মের কিছুটা ব্যতিক্রম করতে পারেন।
সাধারণত চাকুরীর অভিজ্ঞতা আসবে এখানে। স্বেচ্ছা সেবামূলক কাজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন অভিজ্ঞতা যদি আপনি যে পদের জন্য আবেদন করেছেন তার সাথে মেলে, তাহলে দেওয়া যাবে।
আপনার বর্তমান ও সাম্প্রতিক কাজের ভূমিকার বিস্তৃত বর্ণনা থাকতে হবে। আপনি বর্তমানে কি করতে সক্ষম নিয়োগকারী তার প্রতি আগ্রহী। আপেক্ষাকৃত আগের অভিজ্ঞতাগুলো সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশ করা যাবে। নিয়োগকারী বেশি আগের অভিজ্ঞতা নিয়ে চিন্তিত নন।
সময়ের বিপরীতক্রমে অভিজ্ঞতা সাজানোর ব্যতিক্রমঃ
যে পদের জন্য আবেদন করছেন, তার জন্য পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা থাকলে আপনার এ অংশটি না পড়লেও চলবে।
আপনার অভিজ্ঞতা অংশটি সবসময় বর্তমান বা সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা দিয়ে শুরু না করলেও চলবে। বিশেষত আপনার ক্ষেত্রে যদি নিচের কোন একটি প্রযোজ্য হয়।
সদ্য স্নাতকঃ
আপনি যদি সদ্য স্নাতক হয়ে থাকেন এবং আপনার যদি কোন কাজের অভিজ্ঞতা না থকে তাহলে আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন কাজের অভিজ্ঞতা, ফ্রিল্যান্সিং, ব্যক্তিগত প্রোজেক্ট, স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের অভিজ্ঞতা, ইত্যাদি অভিজ্ঞতা প্রথমে নিয়ে আসতে পারেন। এক্ষেত্রে যে পদের জন্য আবেদন করবেন, তার চাহিদার সাথে অভিজ্ঞতার সামঞ্জস্য থাকতে হবে।
কেউ যদি ক্যারিয়ারের গতিপথ পরিবর্তন করতে চানঃ
ক্যারিয়ারের গতিপথ পরিবর্তন করতে চাইলে, বর্তমান কাজ আপনার ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের জন্য সঙ্গতিপূর্ণ নাও হতে পারে। ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের জন্য আপনার যে অভিজ্ঞতা সামঞ্জস্যপূর্ণ তা আগে নিয়ে আসুন। সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন কাজের অভিজ্ঞতা, ফ্রিল্যান্সিং, ব্যক্তিগত প্রোজেক্ট, স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের অভিজ্ঞতাও হতে পারে। নিয়োগকর্তাকে আপনার বোঝাতে হবে, আপনার আবেদনপত্রটি বিজ্ঞাপিত পদের জন্য প্রাসঙ্গিক।
আপনার যদি কোন অভিজ্ঞতা না থাকে তাহলে কিছুদিন স্বেচ্ছশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করুন, ফ্রিল্যান্সিং করুন, ট্রেইনিং করুন। তাহলেও আপনার সিভি আন্যদের থেকে আলাদা হিসেবে বিবেচিত হবে।
আপনার কাজের ভূমিকা সাজানোঃ
আপনি যদি বিভিন্ন কাজে আপনার ভূমিকার উপর আপনার পাঠকের মনযোগ সহজেই চান এবং বিজ্ঞাপিত কাজের প্রেক্ষিতে আপনাকে নিয়োগের গুরুত্ব তুলে ধরতে চান, তাহলে আপনার কাজের বর্ণনা সুলিখিত ও সুগঠিত হতে হবে।
আউটলাইনঃ প্রতিষ্ঠানে আপনি কার জন্য কাজ করেন, প্রতিষ্ঠানে আপনার অবস্থান কোথায়, প্রতিষ্ঠানের প্রেক্ষিতে আপনার কাজের উদ্দেশ্য কি? – এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে সংক্ষিপ্ত আকারে আপনার কাজের ভূমিকাগুলো সাজাতে হবে। এভাবে সাজালে পাঠক আপনার কাজের প্রেক্ষাপট বুঝতে পারেন। আরও বুঝতে পারেন আপনার প্রতিষ্ঠানের সাফল্যে আপনি কিভাবে অবদান রাখছেন।
মূল দায়িত্বঃ
এখানে পাঠক খোঁজেন আপনি প্রতিদিন কি কি কাজ করে থাকেন তার বর্ণনা থাকবে এখানে।
নিয়োগকারী এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য খোঁজেন-
যাদের সাথে কাজ ও ভাবের আদান-প্রদান হয়, যেমন- কাস্টমার, ম্যানেজমেন্ট, সাপ্লাইয়ার, কনট্রাক্ট্রর, নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা, ইত্যাদি।
কি টুলস ও সফটওয়্যার প্যাকেজ ব্যবহার করেন, যেমন- মাইক্রোসফট অফিস, এসকিউএল, ডাটাবেইস, ইত্যাদি।
পণ্য বা সেবা সম্পর্কিত জ্ঞান, নিজের কাজের ক্ষেত্রে বিশেষ জ্ঞান ও দক্ষতা প্রমাণ করুন।
প্রস্তুতকৃত কাজ, আপনার পেশার উপর নির্ভর করে হতে পারে কোন রিপোর্ট, ওয়েব এপ্লিকেশন, কোন কিছুর ডিজাইন, এমনকি বিল্ডিং কিংবা কার।
যে পরিবেশে আপনি কাজ করেন, কর্মব্যস্ত সেলস ডিপার্টমেন্ট, কিংবা উচ্চতর সরকারী অফিস।
যেখানে সম্ভব, আপনার কাজের ফলে যে ফলাফল পাওয়া গেছে তা উল্লেখ্য করুন।
মূল অর্জনঃ
সম্ভব হলে এমন কোন হ্রদয়গ্রাহী অর্জনের কথা উল্লখ্য করুন যা আপনার নিয়োগকর্তা বা কাস্টমারকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছে। যদি এই অর্জনগুলো ঘটনা, সংখ্যা ইত্যাদি দিয়ে প্রকাশ করতে পারেন তাহলে তা আপনার দাবীকে প্রমাণ করতে সহায়তা করবে।
এখানে কিছু ভাল অর্জনের উদাহরণ দেওয়া হলঃ
১। নূতন বাজেট ম্যানেজমেন্ট প্রসেস চালু করার কারণে ডিপার্টমেন্টের বাৎসরিক খরচ শতকরা ১০% হ্রাস পেয়েছে।
২) প্রথম কোয়ার্টারে ১০০ ইউনিট বিক্রির ফলে রিজিওনের শ্রেষ্ঠ বিক্রেতার স্বীকৃতি মিলেছে।
৩) গাইডলাইন টাইম ফ্রেমে নির্ধারিত ১ ঘণ্টা সময়ের মাঝে, কাস্টমারদের সমস্যার ৯৫% সমাধান করা হয়েছে
আপনার সমগ্র সিভিতে আপনার চেষ্টা থাকবে সেই দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাগুলোকে গুরুত্ব আরোপ করা যা আপনার নিয়োগকর্তা খুঁজে বেড়াচ্ছেন।
প্রত্যেক অভিজ্ঞতার উপরের দিকের দায়িত্ব ও ভূমিকাগুলো গুরুত্ব পাবে বিজ্ঞাপিত পদের চাহিদার সাথে সম্পর্ক রেখে।
চাকুরীর বিরতি থাকলেঃ
দীর্ঘ সময় চাকুরীর বিরতি থাকলে তা নিয়োগকর্তার মনে প্রশ্নের জন্ম দেয়। তারা ভাবেন সে সময়ে আপনি কিছু না করেই কাটিয়েছেন। এক মাস সময়ের অধিক চাকুরির বিরতি থাকলে তা গঠনমূলক কাজ দিয়ে পূরন করতে হবে। যেমনঃ
পড়াশুনাঃ
আপনি যে শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন করেছেন তার বর্ণনা বা যা অর্জনের জন্য আপনি চেষ্টা চালিয়ে ছিলেন।
ভ্রমণঃ
ভ্রমণ আপনার পরিকল্পনা, সাংগঠনিক ক্ষমতা, ও মানুষ পরিচালনা করার ক্ষমতা, ইত্যাদি প্রদর্শন করার সবথেকে ভাল উপায়।
স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ বা ব্যক্তিগত প্রজেক্টঃ
পরিবারের কারো দেখাশুনা করা, সামাজিক কোন উদ্যোগে কাজ/সহায়তা করা।
আপনি অসুস্থ্যতার কারণে কোন কিছু করতে না পারলে, তা উল্লেখ্য করুন। সিভির বাকী অংশে আপনার গুরুত্ব ফুটিয়ে তুলুন বিজ্ঞাপিত পদের চাহিদা অনুসারে।
৬) সিভির ভাষাঃ
আপনার সিভির ভাষা হতে হবে পেশাদার/ মার্জিত, প্রভাব বিস্তারকারী, বর্ণনামূলক এবং ব্যাকারণগতভাবে আগাগোড়া শুদ্ধ। আপনার সিভির ভাষা এমন ভাবে সাজাতে হবে, যাতে নিয়োগকর্তার মনে হয় তিনি ঠিক এই লোকটিকেই খুঁজছিলেন ; যত দ্রুত সম্ভব একে নিয়োগ প্রক্রিয়ার মধ্যে আনতে হবে।
সিভির ভাষার মাধ্যমে নিয়োগকর্তা আপনার ভাষার লিখিত দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব সম্পর্কে সম্যক ধারণা পান।
সাধারণ ভাষার ব্যবহার আপনাকে সাধারণ প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরে, যখন আপনার নিজেকে ‘অসাধারণ’ হিসেবে তুলে ধরা দরকার।
“আমি ম্যানেজারের জন্য কাজ করি এবং ব্যবসার বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করি।”- এটি হচ্ছে সাধারণ ভাষা ব্যবহারের একটি দৃষ্টান্ত।
এটি একটি আকর্ষণহীন ও প্রেরণাহীন বাক্য। একই লেখাকে আমরা আরেকটু বর্ণনামূলক ও আকর্ষণীয় করে প্রকাশ করতে পারি।
“সরাসরি ম্যানেজারের তত্ত্বাবধানে ব্যবসার অতিগুরূত্বপূর্ণ কিছু কাজ করতে সহায়তা করি”
এমনকি
“শেলফ্ সাজানো”
এই বাক্যটিকে গুছিয়ে লিখতে পারি-
“ব্যবস্থাপনা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে সমগ্র ষ্টোরের মালামাল এমনভাবে সাজিয়ে রাখি, যাতে ভীড়ের সময়ও কাস্টমার তার প্রয়োজনীয় জিনিসটি হাতের নাগালের মধ্যে পান।”
যদিও এটি একটি বিশেষ উদাহরণ, এ থেকে আমরা লিখিত ভাষার সুন্দর দৃষ্টান্ত পাই। এ থেকে আরো বোঝা যায়, আমার কাজ কিভাবে ব্যবসার মূল উদ্দেশ্য পূরনে সহায়তা করে।
সিভি লেখার সময়, ভাষার পেশাদারী ভাবটা ধরে রাখতে হবে। আপনার কাজের মাধ্যমে কিভাবে প্রতিষ্ঠান উপকৃত হয়েছে, তার বিস্তৃত বর্ণনা থাকবে।
যে ভাষায় সিভি লিখবেন তা যদি আপনার মাতৃভাষা না হয় তাহলে ফ্রি গ্রামার চেকিং টুল ব্যবহার করতে পারেন।
লিংকডইনে একই ধরনের সিভি দেখে আপনার সিভির ভাষা পরিমার্জিত করতে পারেন।
৭) শিক্ষা ও যোগ্যতাঃ
যদিও আপনি আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা সিভি প্রোফাইলে উল্লেখ্য করতে পারেন, আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতার বিস্তৃত বর্ণনা সিভির শেষদিকে থাকা উচিত। এই অংশে কতটুকু তথ্য আপনি রাখবেন তা নির্ভর করে আপনার অভিজ্ঞতার মাত্রার উপর।
আপনার বিজ্ঞাপিত পদের জন্য পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা থাকলে, শিক্ষাগত যোগ্যতার বর্ণনা সংক্ষিপ্ত হওয়াই ভাল। নিয়োগকর্তা আপনার অভিজ্ঞতার দিকেই নজর দিবেন।
যদি আপনার অভিজ্ঞতা আপেক্ষিকভাবে কম থাকে, বা না থাকে সেক্ষেত্রে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতার বিস্তৃত বর্ণনা দিতে হবে। কারণ এ অংশটাতেই আপনার অধিকাংশ দক্ষতা অভিজ্ঞতার নজির/ উদাহরণ পাওয়া যাবে। অভিজ্ঞতার ঘাটতি পূরন করার জন্য আপনি এ অংশে থিসিস, প্রজেক্ট, আপনার কোন উদ্যোগ যা চাকুরীর সাথে মেলে, উল্লেখ্য করতে পারেন।
৮) আগ্রহ ও শখঃ
সিভিতে শখ ব্যবহার নির্ভর করে দু’টো বিষয়ের উপর- আপনি কোন কাজের জন্য আবেদন করছেন এবং কাজের সাথে আপনার শখের কোন সম্পর্ক আছে কিনা।
যেমনঃ আপনি একজন দক্ষ যোগ্য গবেষক। এক্ষেত্রে আপনার সিনেমা দেখা বা ক্রিকেট খেলা কোন গুরুত্ব বহন করেনা।
আপনি যদি একজন সদ্য স্নাতক হন, ম্যানেজমেন্ট গ্র্যাজুয়েট স্কীমের জন্য আবেদন করবেন, সেক্ষেত্রে ফুটবল টীমের অধিনায়কত্ব আপনার সিভিতে গুরুত্ব বহন করবে। এই শখটি আপনার নেতৃত্ব সংগঠন করার ক্ষমতা নির্দেশ করবে।
সিভিতে শখের উল্লেখ্য ঐচ্ছিক। অধিকাংশক্ষেত্রেই তা কোন কাজে লাগেনা।
যে শখ বা আগ্রহ আপনি সিভিতে ব্যবহার করবেন-
খেলাধুলা, সোসাইটি কিংবা ক্লাবে আগ্রহঃ
খেলাধূলায় প্রতিযোগিতা করা কিংবা কোন কিছু অর্জনের জন্য চেষ্টা করা মানসিক দৃঢ়তার পরিচায়ক।
ভ্রমণঃ
ভ্রমণ স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা, সংগঠনের যোগ্যতা ব্যক্তির বহির্মুখী ব্যক্তিত্বকে নির্দেশ করে।
স্বেচ্ছাশ্রমঃ
স্বেচ্ছাশ্রমভিত্তিক জনসেবা কাজের প্রতি আগ্রহ ও অন্যদের সহায়তা করার মানসিকতা প্রকাশ করে। এই দুটোই ক্রমক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় গুণ।
যে শখ বা আগ্রহ আপনি সিভিতে ব্যবহার করবেননা-
বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রাখাঃ
অধিকাংশ মানুষ এ কাজটি করেন। অনেকেই সিভিতে তা লিখেন। মূলত এর কোন প্রভাব সিভিতে পড়েনা।
ধর্মীয় বা রাজনৈতিক মতাদর্শঃ
ধর্ম এবং রাজনীতি সিভির জন্য বেশ গম্ভীর বিষয়। সিভিতে এগুলো প্রার্থীকে কোন সুবিধা দেয় না।
বিতর্কিত ও অদ্ভুত কিছু উল্লেখ্য করাঃ
এমন কোন কিছু উল্লেখ্য করতে নেই যা সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গীতে বিতর্কিত ও অদ্ভুত। নিয়োগকর্তা যাতে পূর্ব ধারণার বশবর্তী হয়ে আপনাকে ভুল বিচার করতে না পারেন।
সিভিতে আমরা কি কি ভুল করি যা পরিহার উচিত তা জানতে পড়ুন “সিভির যত ভুল”
সিভি ও রেজুমির পার্থক্য বুঝতে পড়ুন “সিভি ও রেজুমির পার্থক্য”
সিভি লিখে দেবার বিজ্ঞাপন দেখে বিভ্রান্ত না হবার জন্য পড়তে পারেন “সিভি তৈরির বিজ্ঞাপন ও বাস্তবতা”
ই-মেইলে সিভি ও কভার লেটার পাঠানোর কৌশল জানতে পড়তে পারেন “ই-মেইলে কভার লেটার ও সিভি পাঠানোর উপায়”
Pingback: সিভি তৈরির বিজ্ঞাপন ও বাস্তবতা | Songshoptok
Pingback: ই-মেইলে কভার লেটার ও সিভি পাঠানোর উপায় | Songshoptok
Pingback: সিভির যত ভুল | Songshoptok
Pingback: সিভি ও রেজুমির পার্থক্য | Songshoptok
Pingback: ২০২০ ও ২০২১ সালে চাকুরি খোঁজার উপায় | Songshoptok
Pingback: কভার লেটার লেখার উপায় | Songshoptok
Pingback: জব ও ক্যারিয়ারের মিল ও অমিল | Songshoptok
Pingback: ইন্টারভিউতে সফল হবার উপায় | Songshoptok