চাকুরির আবেদন করতে হলে আমাদের সিভি পাঠাতে হয়। সরকারী চাকুরির পাশাপাশি ব্যাংক-বীমা, পাবলিক লিমিটেড কোম্পানী, প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানী, এনজিও, জাতিসংঘের নানা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান, রপ্তানিমূখী শিল্প,উৎপাদনমূখী শিল্প,এফএমসিজি, ফার্মাসিউটিক্যালস প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে আমরা চাকুরির আবেদন করি।

এসকল প্রতিষ্ঠানে নিজেদের বিস্তারিত তথ্য সরবারহ করতে হয়। আগে বায়োডাটা দেওয়া হত আবেদন পত্রের সাথে। এখন সিভি বা রেজুমির ধারা চলছে।

আমরা যারা আবেদন করি, তাদের আবেদন পত্রে অনেক সময় প্রয়োজনীয় তথ্য থাকেনা। অনেক সময় আমরা গুছিয়ে তথ্য পরিবেশন করতে পারিনা। আবার বিদেশের অন্ধ অনুকরণের করে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় তথ্য আমাদের কাছে থাকা স্বত্ত্বেও আমরা স্মার্ট সিভি তৈরি করতে গিয়ে তা এড়িয়ে যাই। যা আমাদের সিভিকে দূর্বল করে দেয়।

তাহলে যা দাঁড়াচ্ছে, নিয়োগকারী যেসব তথ্য চান, তা তিনি ঠিক ভাবে পাচ্ছেন না। অথবা থাকলেও , তা বেশ কষ্ট করে বের করতে হয়।এখানে নিয়োগকারী ও আবেদনকারীর মাঝে একটি যোগাযোগের দূরত্ব তৈরি হয়েছে।

অন্যদিকে চাকুরির তুলনায় আবেদনকারী অনেক বেশি হওয়ার, নিয়োগকারী প্রথমেই তার কাজের সুবিধার্থে কিছু সিভি বাদ দেওয়ার মাপকাঠি ঠিক করে নেন। বাদ দেওয়ার পর যে সিভি বাকী থাকে সেগুলোর মধ্যে থেকে লিখিত পরীক্ষা বা সাক্ষাৎকারের জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রস্তুত করা হয়।

ঠিক এই জায়গাটাতেই সিভির গুরুত্ব। যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে, শুধু উপস্থাপনার ভুলের কারণে যাতে কারো সিভি বাদ না পড়ে।

কিন্তু যোগ্যতা না থাকলে সিভি দিয়ে কি করার আছে? যোগ্যতা থাকলে লিখিত পরীক্ষায় বা সাক্ষাৎকারে সেটা বের হয়ে আসে। না থাকলে, তা সিভির সুন্দর পেইজে সীমাবদ্ধ থাকে এবং সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর বিরক্তি উৎপন্ন করে।

কিছু পেশাদার সিভি রাইটারদের প্রতি অনেক বিজ্ঞ মানবসম্পদ পেশাদার এই বলে অভিযোগ করেছেন, সিভিতে সুন্দর করে অনেক কিছুই তারা প্রার্থীকে লিখে দেন যার সম্পর্কে তাদের ধারনা ভাসা ভাসা বা একেবারেই নেই!
আবার কিছু সিভি রাইটার আছেন, যাদের মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনায় কিংবা সিভি শর্ট লিস্টিংয়ে কোন অভিজ্ঞতা নেই। উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ অস্ট্রেলিয়ার সিভি বিষয়ক আর্টিকেল পড়ে এবং তাদের সিভির ডেমো দেখে তারা অনেককে সিভি তৈরি করে দেন। সেগুলো দেখতে অনেক সুন্দর হয়। এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সে সিভিগুলো কতটুকু কাজে লাগে?

সরকারী চাকুরি, ব্যাংক, জাতিসংঘের নানা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান, এবং অনেক স্থানীয় কোম্পানী নিজের নির্ধারিত ফর্মে কিংবা নির্দিষ্ট জব পোর্টালের মাধ্যমে চাকুরির আবেদনপত্র গ্রহণ করেন। সেখানে সৃজনশীলতা প্রকাশের সুযোগ খুব কম।

বাকী থাকে কিছু পাবলিক লিমিটেড কোম্পানী, প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানী, এনজিও, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান, রপ্তানিমূখী শিল্প,উৎপাদনমূখী শিল্প,এফএমসিজি, ফার্মাসিউটিক্যালস, ইত্যাদি।

এই জায়গাগুলোতে সিভি নিয়ে কাজ করার সুযোগ আছে। নিজের সিভি নিজেই তৈরি করা যায়। যার দক্ষতা আছে, তার নিজের সিভি তৈরির সামর্থ্যও আছে।

কিন্তু তিনি যদি ব্যস্ত থাকেন, সেক্ষেত্রে তাকে পেশাদার সিভি রাইটারের সাহায্য নিতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, তার সিভিতে সিভি রাইটার তার যোগ্যতার প্রতিফলন ঘটাবেন। কোন অতিরঞ্জন করবেন না। কারণ অতিরঞ্জন চাকুরিপ্রার্থিকে সাক্ষাৎকারে বিপদের মুখে ঠেলে দেয়।

আরেকটি জরুরি ব্যাপার হচ্ছে অন্ধের মত অন্য দেশের সিভির ফরমেট অনুসরণ করা। উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, ও অস্ট্রেলিয়ায় আইনগত বাধ্যবাধকতার কারণে সিভিতে অনেক তথ্য দেওয়া হয়না বা নিয়োগকারী সেই তথ্য চাইতে পারেন না।

কিন্তু দেখা গেছে, সেই তথ্যগুলো আমাদের দেশে প্রায়োগিক অর্থে বেশ গুরুত্বপুর্ণ। যেমনঃ জন্মতারিখ, বাবা-মায়ের নাম, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা, বৈবাহিক অবস্থা, পড়াশুনার বিস্তারিত, কোন বিষয়ে মেজর করেছেন, ইত্যাদি।

সেক্ষেত্রে আপনাকে কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য সিভি তৈরি করছেন, সেটা বুঝে সিভিকে সাজাতে হবে।
আমাদের কিছু জানার ভুলকে ফুলিয়ে ফাপিয়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে কিছু লোক চাকুরী প্রার্থীদের মাঝে সিভি লেখা নিয়ে এক ধরণের মানসিক অস্থিরতা তৈরি করে দেন। যার ফলে আমরা অনেকেই ধরে নেই সিভি রাইটার দিয়ে সিভি না লেখালে আমাদের কোন গতি নেই। এমনকি মনে হয় “বিডিজবস প্রোফাইল”, “লিংকডইন প্রোফাইলও” অর্থের বিনিময়ে এক্সপার্ট দিয়ে না করালে জীবনের পনের আনাই মিছে। কিছুদিন পর হয়তো দেখা যাবে “ফেইসবুক প্রোফাইল” এর জন্য প্রফেশনাল ফেইসবুক প্রোফাইল রাইটার পাওয়া যাচ্ছে। সে বিজ্ঞাপনে হয়ত আমরা হতবিহবল হয়ে ভোর চারটায় গিয়ে লাইনে দাঁড়াবো!

তাই সিভি রাইটিংয়ের বিজ্ঞাপনে প্রলুদ্ধ না হয়ে, নিজে শ্রম দিন। কাউকে দিয়ে সিভি লেখালে,সিভি রাইটারের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ভাল করে জেনে সিভি তৈরি করতে দিন।আপনার সিভি যেই তৈরি করুক না কেন, সেটা ভালভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আপনাকেই দেখতে হবে। আপনার যোগ্যতা শুধু সিভি রাইটার জানলে সর্বনাশ!

 

আপনার কাঙ্ক্ষিত চাকুরির বা পেশার জন্য কি কি দক্ষতা লাগে সেটা জানুন। সে দক্ষতাগুলো অর্জন করুণ। নিজের যোগ্যতা নিজে জানুন, সিভিতে ফুটিয়ে তুলুন। যে পদের জন্য আবেদন করছেন, তার সাথে সমন্বয় করে নিজের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাকে সিভিতে চিত্রিত করুণ।যিনি সিভি পড়বেন তিনি যেন চোখের পলকেই প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো পেয়ে যান। সিভি লেখার জন্য আমাদের সবার মামা “গুগল” চব্বিশ ঘণ্টা আপনার পাশে আছে।তাহলেই আপনার সিভির মূল উদ্দেশ্য সাধিত হবে।

সবার জন্য শুভ কামনা রইল।

সিভি তৈরির বিস্তারিত জানতে পড়তে পারেন “সিভি ও রেজুমি তৈরির উপায়”

ই-মেইলে সিভি ও কভার লেটার পাঠানোর কৌশল জানতে পড়তে পারেন ই-মেইলে কভার লেটার ও সিভি পাঠানোর উপায়”