সিভি, না রেজুমি?

চাকুরীর আবেদন করার সময় যে কয়েকটি বিষয় আমাদের দ্বিধান্বিত করে তার মধ্যে সিভি ও রেজুমি অন্যতম। সিভি কি? রেজুমি কি? সিভি পাঠাবো? নাকি, রেজুমি পাঠাবো? এই প্রশ্নগুলো মাথায় ঘুরপাক খায়না এমন-আবেদনকারী কমই আছেন। সিভি ও রেজুমির পার্থক্যজানা আমাদের জন্য দরকার।

সিভি আর রেজুমির গোলক ধাঁধাঁ থেকে মুক্তি পেতে এই লেখাটি সাজানো। সিভি ও রেজুমির ধারণা, পার্থক্য ও গঠন সম্পর্কে জানা যাবে এই লেখায়।

সিভি:

ল্যাটিন ভাষায় বলতে জীবন বৃত্তান্ত বোঝানো হয়। সিভি হচ্ছে শিক্ষা, সাফল্য,প্রশিক্ষণ, প্রকাশনা, গবেষণা, উপস্থাপনা, সেমিনার, পুরষ্কার ইত্যাদির বিস্তৃত বর্ণনা। সময়ের ধারাবাহিকতার সাথে সাথে একজন মানুষের কর্মজীবনের পূর্ণাঙ্গ রূপের প্রকাশ হচ্ছে সিভি। চাকুরি কিংবা প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তনে সিভির পরিবর্তন হয়না।  যে উদ্দেশ্যে আবেদন করা হয়, তার উপর নির্ভর করে কভার লেটারের পরিবর্তন হয়, আকারের দিক থেকে সিভি সাধারণত রেজুমির চেয়ে বড় হয়।

রেজুমি:

শিক্ষা, কাজের অভিজ্ঞতা, সাফল্য, স্বীকৃতি, দক্ষতার সংক্ষেপিত প্রকাশ হচ্ছে রেজুমি। রেজুমির প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজেকে অন্যান্য প্রতিযোগীর তুলনায় আলাদা করে তুলে ধরা। কাঙ্খিত চাকুরির চাহিদার প্রেক্ষিতে এক একটি আবেদনের জন্য রেজুমি পাল্টে যায়। সমগ্র চাকুরি জীবনের বর্ণনা করার প্রয়োজন নেই; যে দক্ষতা, অভিজ্ঞতা নির্দিষ্ট পদের জন্য প্রয়োজনীয় তার উপর জোর দিয়ে/ গুরুত্ব আরোপ করে রেজুমি সাজানো হয়। রেজুমি যতটুকু সংক্ষিপ্ত করা যায় ততই ভালো, রেজুমির আকার এক থেকে দুই পৃষ্ঠার অধিক/বেশি হওয়া উচিত নয়।

পার্থক্য:

সিভি ও রেজুমির মূল পার্থক্য হচ্ছে তিনটি ক্ষেত্রে- ১.দৈর্ঘ্য ২. উদ্দেশ্য এবং ৩.বিন্যাস।

রেজুমি দুই পৃষ্ঠার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। সিভি প্রয়োজনে দুই পৃষ্ঠারও অধিক হয়। বিভিন্ন পদের ক্ষেত্রে রেজুমি ভিন্ন ভিন্ন হয়। বিভিন্ন পদের জন্য সিভির পরিবর্তন  হয়না। কভার লেটার পরিবর্তিত হয়। রেজুমি হয় সংক্ষিপ্ত আর সিভি হয় বিস্তারিত।

ব্যবসায়িক বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরির আবেদনের জন্য রেজুমি ব্যবহৃত হয়। সরকারি চাকুরি, গবেষণা ও শিক্ষকতার ক্ষেত্রে সিভি ব্যবহৃত হয়।

ভৌগোলিক দিক থেকে উত্তর আমেরিকায় রেজুমির প্রচলন বেশি। অন্যদিকে ইউরোপ, এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় সিভির ব্যবহার অধিক।

সিভি সময়ের ধারাবাহিকতা মেনে চলে। রেজুমি নির্দিষ্ট পদের প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দেয়। এক্ষেত্রে সময়ের ধারাবাহিকতা প্রয়োজনীয় নয়।

সিভি পরিবর্তিত হয় না। সময়ের সাথে সাথে নতুন নতুন সংযোজন হয়। রেজুমি চাকুরি বা পদের চাহিদার উপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হয়।

কোথায় কি থাকে?

একটা সিভিতে সাধারণত নিচের তথ্যগুলো থাকে
  • নাম ও যোগাযোগের ঠিকানা:

যেখানো কুরিয়ার বা ডাক সহজেই পৌঁছাতে পারে তার ঠিকানা দেয়া ভালো। হতে পারে বর্তমান কর্মস্থল বা বর্তমান থাকার জায়গা। তবে অনেক প্রতিষ্ঠান চাকুরি খোঁজাকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করে, সেক্ষেত্রে বাসার ঠিকানা দেওয়াই ভালো ! নতুন আবেদনকারীর বর্তমান ঠিকানা পরিবর্তিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে স্থায়ী ঠিকানা ব্যবহার করতে পারেন। মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করা ঠিক নয়। ই-মেইল অ্যাড্রেস দেওয়া এবং নিয়মিত ই-মেইল দেখা(চেক করা) প্রয়োজন।

  • আগ্রহের বিষয় সমুহ:

তাত্ত্বিক আগ্রহের একটি তালিকা দেওয়া ।

  • অর্জিত শিক্ষা বা চলমান ডিগ্রির নাম, প্রতিষ্ঠান:

পাশের সনসহ উল্লেখ করতে হবে। থিসিস বা ডিসারটেশন এর নাম এখানে দেওয়া যেতে পারে।

  • বৃত্তি, সম্মান, পুরষ্কার:

প্রাপ্ত বৃত্তি, স্বীকৃতি ও প্রাপ্ত  পুরষ্কারের তালিকা।

  • প্রকাশনা ও উপস্থাপনা:

প্রকাশিত বই, নিবন্ধ ও কনফারেন্সে উপস্থাপনার তালিকা।

  • চাকুরি ও অভিজ্ঞতা:

চাকুরি ও গবেষণার পূর্ব অভিজ্ঞতা, মাঠপর্যায়ে কাজের অভিজ্ঞতা, স্বেচ্ছা শ্রেমের ভিত্তিতে কাজের অভিজ্ঞতা, নেতৃত্বদানের অভিজ্ঞতা ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কাজের অভিজ্ঞতার উপস্থাপন থাকবে ।

  • প্রাসঙ্গিক কাজ সম্পর্কিত দক্ষতা:

বিভিন্ন কাজ ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে অর্জিত দক্ষতার তালিকা উল্লেখ থাকবে।

  • পেশাজীবি সংগঠনের  সদস্যপদ:

কোন পেশাজীবি সংগঠনের সদস্য হয়ে থাকলে তা উল্লেখ করা। পেশাজীবি সংগঠনের কোন দায়িত্বশীল পদে থাকলে তা এখানে বা অভিজ্ঞতার অংশে উল্লেখ করা।

  • রেফারেন্স:

লেটার অব রেফারেন্স যারা লেখেন তাদের তালিকা অথবা আপনি যাদের সাথে কাজ করেছেন তাদের তালিকা। নতুন আবেদনকারী হলে আপনার দক্ষতা সম্পর্কে যাদের প্রকৃত ধারণা আছে তাদের তালিকা।

একটা রেজুমিতে সাধারণত নিচের তথ্যগুলো থাকে
  • নাম ও যোগযোগের ঠিকানা:

বর্তমান আবাসস্থলের ঠিকানা হলে ভাল হয়। তবে অফিসের ঠিকানা দেয়া গেলেও না দেওয়াই উত্তম। কারণ বর্তমান চাকুরিতে খারাপ অবস্থায় থাকলেও নতুন চাকুরি খোঁজা ফৌজদারী অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নতুন আবেদনকারীরা পরিবর্তিত হতে পারে এমন ঠিকানা ব্যবহার করবেন না।

  • শিক্ষা:

ডিগ্রি বা শিক্ষা সনদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম, বিষয় বা প্রোগ্রামের নামের তালিকা।এছাড়াও বিশেষ প্রশিক্ষণ যদি থাকে তার তালিকা।

  • কাজের অভিজ্ঞতা:

চাকুরী করা প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা, চাকুরীকাল, ডেজিগনেশান, ও দায়িত্ব ও সাফল্যের বর্ণনা থাকবে এখানে।  সর্বশেষ বা বর্তমান কাজ থেকে শুরু করে সময়ের বিপরীত  ক্রমে সাজানো থাকবে।

কখন কোনটি ব্যবহার করবো?  

অধিকাংশ চাকুরির বিজ্ঞাপনে প্রতিষ্ঠানের চাহিদা উল্লেখ করা থাকে। উল্লেখ করা না থাকলে সরকারি, শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জন্য সিভি এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের জন্য রেজুমি পাঠানো উত্তম। আমাদের দেশে সিভির প্রচলন বেশি। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, এনজিও, ব্যাংক, বীমাতে সিভির একটু সংক্ষিপ্ত সংক্ষেপিত রূপ ব্যবহার করা হয়।

 

সিভি তৈরির বিস্তারিত জানতে পড়তে পারেন “সিভি ও রেজুমি তৈরির উপায়” 

সিভিতে আমরা কি কি ভুল করি যা পরিহার উচিত তা জানতে পড়ুন “সিভির যত ভুল”

সিভি লিখে দেবার বিজ্ঞাপন দেখে বিভ্রান্ত না হবার জন্য পড়তে পারেন সিভি তৈরির বিজ্ঞাপন ও বাস্তবতা”

ই-মেইলে সিভি ও কভার লেটার পাঠানোর কৌশল জানতে পড়তে পারেন ই-মেইলে কভার লেটার ও সিভি পাঠানোর উপায়”