বাস থেকে নামতে নামতে সুলতান সিদ্ধান্তটা নিয়ে নিলো। তার আগে অবশ্য খবরটা আরেকবার পড়ে দেখতে হবে। বাসে যদিও সে একবার পড়েছে কিন্তু ঠান্ডা মাথায় আরেকবার দেখতে হবে।

প্রথম আলোর তৃতীয় পাতায় “বিরল সততা” শিরোনামে একটা খবর ছাপা হয়েছে। বলা হচ্ছে গতকাল কেউ একজন পাঁচ লাখ টাকা হারিয়ে ফেলেছেন এবং সুলতান (ছদ্মনাম) নামে কোনো একজন তা কুড়িয়ে পেয়ে শাহবাগ থানায় জমা দিয়েছেন। টাকার মালিক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সে মহান হৃদয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

সুলতান ছদ্মনামধারী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই সুযোগটাই সুলতান নিতে চাচ্ছে। তাই চূড়ান্তভাবে সবদিক ভেবেই এগোতে হচ্ছে। আসলে খুব বেশি লাভ হবে তেমনটা সুলতান নিজেও আশা করে না। শুধু আশপাশের কয়েকজন সুলতানকে মহৎ হিসেবে জানুক আপাতত এটাই সে চায়। সুলতান ভাবে টাকাটা সে নিজে পেলেও জমা দিয়ে আসতো তাই তার এই ইচ্ছাটা একেবারেই নির্দোষ বলেই সে বিশ্বাস করে।

ফারহানার সাথে সে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত টিএসসিতে ছিলো তাই বলতে হবে ঘটনাটা ঘটেছে সন্ধ্যার পর। সুলতান মনে মনে ঘটনাটা আরেকবার সাজিয়ে নিলো। এ ঘটনাটা যেহেতু কয়েকবার বলতে হবে তাই কোনো ফাঁক রাখা যাবে না। ফারহানাকে হলে পৌঁছে দিয়ে, সে যখন হলে ফিরছিলো তখন সে রাস্তায় একটা কালো ব্যাগ দেখতে পায়। ব্যাগটা খুলেই সে টাকা গুলো দেখতে পায় এবং সাথে সাথে শাহবাগ থানায় পৌঁছে দেয়। বাকি কাজ থানার এবং সে একজন অতি সাধারণ নাগরিক দায়িত্ব পালন করেছে। এটা নিয়ে কোনো মাতামাতি হোক তা চায়নি বলেই সে নাম প্রকাশ করতে চায় নি। কিন্তু পুলিশকে আসল নাম এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ডের ফটোকপি জমা দিতে হয়েছিলো। পুলিশ পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন ধরে নিন তার ছদ্মনাম সুলতান! এই হলো পুরো ঘটনা।

হলে ঢুকেই সুলতান পত্রিকা রুমে ঢুকলো। আরো কয়েকটা পত্রিকা দেখা দরকার যেন কোনো ভুল না থাকে। দেখা গেলো আরো কয়েকটি পত্রিকায় খবরটি এসেছে এবং সব খবরেই ছদ্মনাম সুলতান ব্যবহার করা হয়েছে।

রুমে ঢুকতে ঢুকতে সে ফারহানাকে ফোন করে আজকের প্রথম আলো পড়েছে কিনা জানতে চাইলো। ফারহানা পত্রিকা পড়েছে কিন্তু সুলতানের সততার খবর সে পড়েনি। সুলতান তাকে বিস্তারিত জানাতেই ফারহানা বেশ উত্তেজিত হয়ে গেলো। কেন তাকে আগে জানায়নি, টাকাটা আসল মালিকের হাতে পৌঁছেছে কিনা, সব টাকাই পৌঁছেছে কিনা, মালিকের সাথে তার দেখা হয়েছে কিনা ইত্যকার নানা প্রশ্ন। উত্তর দিতে সুলতানের বেশ ভালো লাগছে। তাকে নিয়ে ফারহানার উচ্ছ্বাস সে বেশ উপভোগ করছে।

হলে এককান দুইকান করতে করতে খবরটা বেশ ছড়িয়েছে এবং সুলতান এখন বেশ পরিচিত। যেহেতু সে এতোটা আশা করেনি তাই কিছুটা আড়ষ্টতা তৈরি হলেও সুলতান নিজেকে প্রবোধ দেয় বাস্তবে সে এটাই করতো। তখন আড়ষ্টতা কমে আসে।

উত্তেজনা ততদিনে থিতিয়ে আসে। প্রথম আলোর পাতায় শাহবাগ থানার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তার এক সাক্ষাৎকার ছাপা হয় যা নিয়ে নতুন আলোচনা শুরু হয়। তিনি বর্ণনা করেন একজন ক্যান্টিন বয়ের সততার কথা যে দিন কয়েক আগে বেশকিছু টাকা কুড়িয়ে পেয়ে থানায় জমা দেয়।