আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক তখন প্রফেসর হিসেবে কর্মরত।নানা কাজে ব্যাস্ত থাকেন। দলীয় আনুগত্য প্রকাশ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস,পরীক্ষা নেওয়া, ইত্যাদি কাজ শেষ করে সময় পেলে মাঝে মাঝে ক্লাস নিতেন।

অসাধারণ একটা গুণ আছে ওনার।যে কোন পরিস্থিতিতে ঠান্ডা থাকেন। কখনও রেগে গেলেও তা প্রকাশ করতেননা।

আমাদের প্রথমবর্ষ ফাইনাল পরীক্ষার প্রশ্ন করেছিলেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস অনুসরণ করে। যার সাথে আমাদের সিলেবাসের মিল ছিল কিন্তু হুবহু এক ছিলোনা। ২০ নম্বরের একটি প্রশ্ন ছিল আমাদের সিলাবাসের বাইরে।

তাঁকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল, “পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কঠোর শিক্ষক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে উদার হয়ে যান কিভাবে?”

প্রতিউত্তরে তিনি বলেন, “তা নির্ভর করে গৃহকর্তার উপর; গৃহকর্তা ড্রয়িং রুমে বসাবেন না বেড রুমে নিয়ে যাবেন, তা তার মর্জি।”

আমরা তার কথা পাশকাটানোর কৌশলে বিমোহিত হলাম।

জুলাই মাসের প্রচন্ড বৃষ্টির ক্লাসে উপস্থিতি অনেক কম।হঠাৎ,স্যার এলেন। জানালেন বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা কাজ ছিল।হয়নি। তাই সময় পেয়ে ক্লাস নিতে আসলেন। সেদিনের ক্লাস শেষে বললেন,“Agamemnon – এর তিনটা ক্লাস নেওয়া হয়েছে, আর লাগবে?” আমরা জানালাম, “ লাগবে”। তিনি আবার বললেন, “আর লাগবে বলে মনে হয়না!”

সেশনজটের কবলে পড়ে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার জন্য বিভাগের  সভাপতিকে অনুরোধ করছে।  তখন স্যার বললেন, “ক্লাস শেষ না করে কিভাবে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব?”

তার উত্তরে এক ছাত্র বললেন, “ ক্লাস যারা ঠিক ভাবে নেয়না, তারা কখনোই নেয়না। আর যারা ঠিক ভাবে ক্লাস নেন, তারা পরীক্ষার তারিখ হলে ঠিকই ক্লাস শেষ করে দিবেন।” তিনি খুব রাগান্বিত হলেন। কারণ তিনি মাঝে মাঝে ক্লাস নিতেন, ক্লাস না নেওয়াটাই তার জন্য স্বাভাবিক ছিল।

পরে তাকে শান্ত করতে তৎকালীন বিভাগের সভাপতি তার উপস্থিতিতে সেই ছাত্রকে সাধ্যমত বকাঝকা করলেন।

উনার সম্পর্কে একটা গল্প প্রচলিত আছে। সত্যতা নিরূপন করা যায়নি।

বিভাগের সভাপতি ক্লাস নিয়মিত না নেওয়া প্রসঙ্গে উনার কাছে জানতে চাইলে, উনি অ্যাপয়েণ্টমেন্ট লেটারের কপি এনে প্রশ্ন করেছিলেন, “এর কোথাও ক্লাস নেওয়ার কথা বলা আছে কিনা?”

আমাদের তিন থেকে সাড়ে তিন বছরের সেশনজটে তার অনেক অবদান আছে। আমি আমৃত্যু ওনাকে স্মরণ করবো।তাকে ভুলে থাকাটা কষ্টকর।

এই লেখার সমস্ত চরিত্র ও ঘটনা কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে মিলে গেলে তা অনভিপ্রেত কাকতাল মাত্র। আমাদের সেশন জ্যামে কোন শিক্ষকের হাত ছিল বলে জানা যায়নি। তাই নিজেদের প্রবোদ দিতে কিছু কাল্পনিক চরিত্র হাজির করা হবে। তাদের সর্ম্পকে কাল্পনিক গল্প বলে আমাদের “ছাত্র হবার” পাপ মোচনের চেষ্টা করা হবে।