মানুষ নিজেদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য, জীবনকে সহজ করার জন্য , এবং মাঝে মাঝে শুধু আবিষ্কারের নেশায় নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে চলেছে।
একটা প্রযুক্তির আবিষ্কার নানাভাবে মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে। কোন প্রযুক্তিই নিরবচ্ছিন্ন সুবিধা নিয়ে আসেনা। সাথে কিছু অসুবিধা বা অপব্যাবহারের আশংকাও নিয়ে আসে। আগুন, চাকা, স্টিম ইঞ্জিন, হালের ডিজিটাল প্রযুক্তিও এর ব্যতিক্রম নয়। ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে প্রযুক্তির ভাল খারাপের মাত্রা নির্ণীত হয়।
৮০ দশকে আস্তে আস্তে আধুনিক ইন্টারনেটের প্রসার ঘটতে শুরু করে। ইন্টারনেটের প্রসারের সাথে সাথে ডিজিটাল প্রযুক্তির আবিষ্কার, রূপান্তর ও সম্প্রসারণ ঘটতে থাকে খুব দ্রুত। ই-মেইল ও সার্চ ইঞ্জিন ডিজিটাল প্রযুক্তিতে নতুন মাত্রা যোগ করে। অবশেষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ছবি ও ভিডিও শেয়ারিং ডিজিটাল প্রযুক্তিকে দিয়েছে অভাবনীয় শক্তি ও প্রভাব। কিন্তু এই প্রভাবশালী প্রযুক্তি অন্য যে কোন প্রযুক্তির চেয়ে সহজলভ্য স্মার্ট ফোনের কল্যাণে। একবিংশ শতকের দ্বিতীয় দশকে প্রতিনিয়ত আমরা বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইস ও এপ্লিক্যাশানের প্রভাবে বুঝতে পারলাম নিজেদের জীবন-জীবিকার তাগিদে ডিজিটাল প্রযুক্তিকে আত্মস্থ করে নেওয়াটাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। তথ্যের এক বিশাল ভান্ডারে আমাদের প্রবেশাধিকার মিলেছে। ডিজিটাল প্রযুক্তিভিত্তিক বিভিন্ন জীবিকার পথ খুলে গেছে।
জীবনের বড় একটা অংশ আমরা বিভিন্ন দক্ষতা অর্জন করি জীবিকার অর্জনের জন্য। পড়াশুনা ও প্রচলিত পেশাগুলোতে আমাদের ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েই চলছে প্রতিনিয়ত। ধীরে ধীরে আমরা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে অভ্যস্ত হয়ে উঠছিলাম। কিন্তু কোভিড-১৯ আমাদের নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিল। যারা নানাভাবে, নানা কারণে ডিজিটাল প্রযুক্তি থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতাম তারাও এখন বাধ্য হয়ে জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি।
প্রয়োজনের তাগিদে আমাদের মধ্যে হুড়মুড় করে একটা পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তনের জন্য আমরা অনেকেই তৈরি ছিলাম না। তাই এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ভাল-মন্দের প্রাথমিক জ্ঞানটুকুও আমাদের মাঝে নেই। এই প্রযুক্তি কোথায়, কখন, কীভাবে প্রয়োগ করতে সেটাও আমরা অনেকেই জানিনা। ডিজিটাল প্রযুক্তিকে কোন ভাবেই এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব না।ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের অ আ ক খ আমাদের জানতে হবে।
ডিজিটাল লিটারেসি বলতে আমরা কি বুঝি?
এক কথায় ডিজিটাল প্রযুক্তি কোথায়, কখন, কীভাবে ব্যবহার করবো, সেটা জানাই ডিজিটাল লিটারেসি বা ডিজিটাল স্বাক্ষরতা।
মৌলিক কোন দক্ষতাগুলো রপ্ত করলে নিজের ডিজিটাল লিটারেসি সময় উপযোগী হবে তা জানা ও অর্জন করার ডিজিটাল লিটারেসির অংশ। অনলাইনে কি করা যায়, কি করা যায়না সেটা জানাও ডিজিটাল লিটারেসির গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
অনলাইনের বিভিন্ন মাধ্যমে আমাদের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া, আচার-আচরণ, অন্যদের সাথে ভাব বিনিময়, অন্যদের মূল্যায়নও সামাজিক, নৈতিক, ও বিচক্ষণতার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হওয়া প্রয়োজন।
সমন্বিতভাবে এইসবগুলো বিষয় জানা ও চর্চা করাই ডিজিটাল লিটারেসি।
কি ভাবে কি করতে হবে শুধু তা জানাই ডিজিটাল লিটারেসি না। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে বিভিন্ন কাজে, আমাদের শিক্ষণ প্রক্রিয়ার, অবসরে যে চর্চাগুলো করি তা নৈতিক, সামাজিক, ও আমাদের যৌক্তিক চিন্তা প্রক্রিয়ার মানদণ্ডে গ্রহণযোগ্য হতে হবে।
উপরোক্ত বিষয়গুলো ডিজিটাল লিটারেসির তাত্ত্বিক কাঠামোকে প্রকাশ করেছে।
সাধারণ ভাষায় বলতে গেলে ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বব্যাপি প্রভাবের কারণে পুরনো অনেক প্রযুক্তি বাদ হয়ে, নতুন প্রযুক্তি জায়াগা করে নিয়েছে। আমাদের নিজেদের টিকে থাকার জন্য সে প্রযুক্তিগুলোর ব্যবহার শিখে তা আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে, কর্মক্ষেত্রে, সামাজিক ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে হচ্ছে। একই সাথে আমাদের এই নতুন প্রযুক্তিগুলোর করণীয় ও বর্জনীয় জানতে হচ্ছে মেনে চলার জন্য। নতুন নতুন এই প্রযুক্তিগুলো ব্যাবহারের নৈতিক ও সামাজিক প্রভাব খেয়াল রাখতে হচ্ছে। এই সব কিছু মিলেই ডিজিটাল লিটারেসি। ডিজিটাল লিটারেসি তিনটি জিনিসকে আলোকপাত করে – ১) নূতন দক্ষতা অর্জন ও প্রয়োগ , ২) তথ্যের সঠিকতা যাচাই না করে ব্যবহার না করা, ৩) যেকোন কাজ করার সময় নৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষিত বিবেচনায় আনা।
ডিজিটাল লিটারেসির জন্য প্রয়োজনীয় কারিগরি দক্ষতাঃ
এই ডিজিটাল পৃথিবীতে বিশেষ কিছু কারিগরি দক্ষতা না থাকলে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়া একেবারেই অসম্ভব। আমি লেখালখির কাজ করলে আমাকে এমএসওয়ার্ড বা গুগল ডক্সে কাজ করতে পারতে হবে। আগের মত খাতায় বা কাগজে হাতে লিখে প্রয়োজনে ফটোকপি করার সময় এখন আর নেই। আমি ডিজাইনার হলে ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটার, ইত্যাদি আমাকে জানতে হবে। আমি আর্কিট্যাক্ট হলে আটোক্যাড জানতে হবে। গবেষক হলে এসপিএসএস ব্যবহার জানতে হবে। হিসেব নিকেশের জন্য স্প্রেডশিট জানা অত্যাবশ্যক। সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারা, ই-মেইল করা, ব্রাউজ করে দরকারী ওয়েব সাইট বের করা বা প্রয়োজনীয় ও সঠিক তথ্য খুঁজে বের করা, মোবাইলের এপস ব্যবহার করতে পারা ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের প্রাথমিক যোগ্যতা। এভাবে প্রত্যেক পেশার সাথে জড়িত ডিজিটাল প্রযুক্তির কারিগরি দক্ষতা আছে। যা না শিখলে আমার জীবন-জীবিকার দৌঁড় থেকে ছিটকে পড়ব।
ডিজিটাল লিটারেসির জন্য প্রয়োজনীয় সফটস্কীল বা সহায়ক দক্ষতাসমূহ
ক্রিটিক্যাল থিংকিং স্কীল
ক্রিটিক্যাল থিংকিং স্কীল লাইফ স্কীল হিসেবে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি ডিজিটাল লিটারেসির জন্যও খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এখন তথ্যের প্রাচুর্য্যের মাঝে বাস করছি। অনলাইন তথ্যের এই প্লাবনে প্রয়োজনীয় ও সঠিক তথ্য খুঁজে নেওয়ার জন্য ক্রিটিক্যাল থিংকিং স্কীল অর্জন খুবই প্রয়োজনীয়। তথ্য খোঁজা, মূল্যায়ন করা, তথ্যের প্রয়োগ, তথ্য উপস্থাপন – সব ক্ষেত্রে আপনাকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তথ্যের সঠিকতা যাচাই করতে হবে।
যোগাযোগের দক্ষতাঃ
ডিজিটাল লিটারেসির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা হল যোগাযোগের দক্ষতা। যখন আমরা ভার্চুয়াল পরিবেশে বা মাধ্যমে যোগাযোগ করি, তখন নিজের চিন্তা-ভাবনা বোধগম্য ভাবে প্রকাশ করতে পারা, প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করতে পারা, অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা, এবং আস্থার সম্পর্ক তৈরি করতে পারা ব্যক্তির সাথে সরাসরি যোগাযোগ করার মতই গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্য ব্যাবস্থাপনার দক্ষতাঃ
বিভিন্ন প্রযুক্তির ব্যবহার করা, নৈতিকতার ভিত্তিতে তথ্যের টেকসই ব্যবহার, নিজের কাজে লাগানোর মত তথ্য সৃষ্টি – সব কিছুই প্রায়োগিক দক্ষতার মাঝেও পড়ে। এটি একটি চলমান শিক্ষণ প্রক্রিয়া যা নতুন নতুন এপস ও সফটওয়্যার আপডেটের সাথে সাথে নিজেকেও বার বার আপডেট করে নিতে হয়। এখনকার সময়ে ডিজিটাল জীবন সাজানো-গুছানো থাকতে হবে।
ডিজিটাল লিটারেসির প্রয়োজনীয়তাঃ
আমরা ধীরে ধীরে সীমান্তবিহীন একাটা ডিজিটাল পৃথিবীর নাগরিক হয়ে যাচ্ছি। বিভিন্ন ধরণের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ধীরে ধীরে ডিজিটাল প্ল্যাট ফর্মে চলে আসার কারণে সেগুলোও সঠিকভাবে প্রয়োজনীয় সময়ে পেতে আমাদের ডিজিটাল লিটারেসি প্রয়োজন। সরকার নির্বাচন প্রক্রিয়া, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশুনা ও প্রশিক্ষণ, ইত্যাদি ধীরে ধীরে ডিজিটাল প্ল্যাট ফর্মে চলে আসছে। ডিজিটাল প্রযুক্তির কল্যাণে শিক্ষা, কাজ, গবেষণা সব কিছুই যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে আমাদের হাতের নাগালের মধ্যে চলে এসেছে। একে এড়িয়ে আমাদের নাগরিক পরিচয় অসম্ভব হয়ে উঠছে। ব্যবসা-বাণিজ্য অনেকাংশেই ডিজিটাল প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে উঠছে। অনলাইনে কেনা বেচার বিশাল বিশাল মার্কেট প্লেস গড়ে উঠেছে। মানুষ তার বিশেষ দক্ষতা দিয়ে অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং প্লেসে আয় করে জীবিকা নির্বাহ করছে।
ডিজিটাল মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য কিভাবে যাচাই করবোঃ
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটা পোষ্ট দেখলেন, নিচে লেখা কালেক্টেড। এই লেখা সঠিক হলেও আপনি কোথাও রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন না। লেখকের পরিচয় জানাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়ে মতামত দেবার মত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা তার আছে কিনা এইটা জানা কোন তথ্য বিশ্বাস করা বা শেয়ার করা বা অন্যকে জানানোর আগে যাচাই করা ডিজিটাল লিটারেসির অংশ। কোন ওয়েব সাইট থেকে আপনি তথ্য পাচ্ছেন, সেটাও দেখতে হবে। সিনেমা বিষয়ক ওয়েব সাইটে করোনা টীকা আবিষ্কারের খবর পেলে, সেটা কম বিশ্বাসযোগ্য হবে সেটাই স্বাভাবিক।
মনে করুণ, একটা গবেষণার ফলাফল নিয়ে কোন একটা অনলাইন পত্রিকা রিপোর্ট করলো যে বাজারে প্রচলিত ফুড সাপ্লিমেন্টগুলো ৩-১০ বছরের বাচ্চাদের জন্য ভাল। এই নিয়ে আপনি ইউটিউব ভিডিয়ো দেখলেন, সংশ্লিষ্ট কোম্পানি গুলো এর ভিত্তিতে বিজ্ঞাপন প্রচার শুরু করলো। আপনার ভূমিকা এই ক্ষেত্রে কি হবে? আপনি জানার চেষ্টা করবেন, এই গবেষণা কর্মটি কারা করেছেন, তারা এই ধরণের গবেষণা কর্ম চালানোর মত যোগ্যতা রাখেন কিনা, তাদের আগের কোন গবেষণা কর্ম আছে কিনা, থাকলে সেগুলো প্রতিষ্ঠিত গবেষণা প্রতিষ্ঠান দ্বারা স্বীকৃত কিনা, এই গবেষণা কর্মটি করার জন্য কারা অর্থায়ন করেছে? যদি কোন ফুড সাপ্লিমেন্ট তৈরি করা প্রতিষ্ঠান বা তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এই অর্থায়ন করে থাকে, তাহলে এই গবেষণা কর্মের ফলাফল প্রথমেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। অনলাইন পত্রিকায় যত চটকদার হেডিং থাকবে, খবর তত কম গ্রহণযোগ্য হবে। ওয়েব পেইজ বা ভিডিয়োর ভিউ বাড়ানোর জন্য এইগুলো করা হয়। ডিপ ফেইক ভিডিয়ো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আরেক আপদের নাম। একটি ভিডিয়োর সামান্য দৃশ্য বা কথা পরিবর্তন সমস্ত কন্টেন্টের উদ্দেশ্য পাল্টে ফেলা হয়। বক্তা যা বলেন, এডিটিং এর পর তা একেবারে বিপরীত বা ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে। ভিডিয়োর ভিউ বাড়ানোর জন্য ব্যক্তির চরিত্র হনন থেকে শুরু করে সামাজিক অস্থিরতাও তৈরি করতে পারে এই প্রবণতা। তাই ইউটিউবে, ফেইসবুকে, বা অন্যান্য সামাজিক মাধ্যম বা অনলাইন পত্রিকায় দেখলেই বিশেষত কোন চটকদার বা আকষর্ণীয় কন্টেন্ট যাচাই করা ছাড়া বিশ্বাস করা যাবেনা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কি কি করা যায়নাঃ
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেকে কিভাবে উপস্থাপন করি, সেটা এখন ও ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি ভাবুন আমাদের স্বাভাবিক জীবনে আপনি নিজেকে ভাঁড় হিসেবে বা মানসিকভারসাম্যহীন হিসেবে উপস্থাপন করেন? করেন না। তাহলে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে অদ্ভূত নাম দেওয়া, পরিচয় গোপন করা, কিংবা বস্তু, প্রাণী, প্রকৃতির ছবি দিয়ে প্রোফাইল পিকচার কেন দেই! ইনবক্সে অন্যদের বিরক্ত কেন করি? স্বাভাবিক অবস্থায় আরেকজনকে বিরক্ত করা যেমন অপরাধ, ডিজিটাল প্ল্যাট ফর্মেও তা অপরাধ। সাইবার ক্রাইম এখন সব দেশে খুব গুরুত্ব দিয়ে বিচার করা হয়।
ফেইসবুকে আমরা গণহারে বিভিন্ন গ্রুপে মেম্বার হতে বা পেইজে লাইক দিতে অন্যদের আমন্ত্রণ জানাই।এতে অনেকেই বিরক্ত হন। ব্যক্তির পছন্দ, বয়স, পেশা, সামাজিক অবস্থান এসব ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিত।একেক জন একেক ধরণের গ্রুপ বা পেইজ পছন্দ করেন। কেউ অনলাইনে থাকলেই তাকে যে কোন সময়ে তাকে মেসেজ দেয়া ঠিক কিনা ভাবতে হবে। অল্প পরিচিত বা অপরিচিত ব্যক্তির ক্ষেত্রে খুবই সাবধান হতে হবে। এমনকি পরিচিত লোককেও সব সময় ইনবক্সে মেসেজ দেওয়া যায়না। আমার আচরণই তার কাছে আমার ব্যাক্তিত্বের ধারণা তৈরি করে।
কারো পোষ্টে কমেন্ট করার ক্ষেত্রে খুব সাবধান থাকতে হবে। বক্তা যা বলতে চেয়েছেন, তা আমি বুঝেছি কিনা- এইটা বুঝতে পারা খুব দরকার। আপনার সন্দেহ থাকলে লেখকে ইনবক্সে প্রশ্ন করতে পারেন। না বুঝে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে হবে। ব্যক্তিগত আক্রমণ করা যাবেনা। আপনি আপনার ভিন্নমত শালীনতার সাথে প্রকাশ করুণ। কিছু মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একেবারেই করা ঠিক না। ধরেন, আপনার ও আপনার বন্ধুর বোঝাপড়া বেশ ভাল। তার একটা লেখায় আপনি বেশ কঠোর একটা মন্তব্য করলেন। তিনি তাতে কিছু মনে করলেন না। কিন্তু এইস কমেন্ট শুধু আপনারা না, আরো অনেক পরিচিত-অপরিচিত অনেক মানুষ পড়ছেন বা পড়বেন। তারা হয়ত এই মন্তব্যের মর্ম না বুঝে আপনাকে বা লেখককে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে বসতে পারেন।
আমাদের সাধারণ জীবনে উন্মুক্ত পরিবেশে আমরা কি সব কাজ করি, সব কথা বলি? একই দৃষ্টিভঙ্গী ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
সমাজের অধিকাংশ মানুষ যদি কিছু গ্রহণ করতে না পারে, তাহলে তা পাশ কাটিয়ে যাওয়া ভাল।সস্তা জনপ্রিয়তা পাবার জন্য প্রচলিত কোন বিশ্বাসকে আক্রমণ করা, বিখ্যাত কোন ব্যক্তিকে হেয় করার চেষ্টা করা একেবারেই অনুচিত।
কি কি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে না দিলে ভালঃ
এক কথায় যেসব তথ্য দিয়ে অপরাধী আপনার জীবনধারা বুঝে আপনার কাছে পৌঁছে যেতে পারেন সেসব তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিবেন না। এছাড়াও যেসব তথ্য একেবারেই ব্যক্তিগত বা পারিবারিক তথ্য, সেগুলো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে দিবেন না। কোথায় খেতে যান, কোথায় জিমে যান, কোথায় নিয়মিত বেড়াতে যান, বাসার জন্য বা গাড়ীর জন্য কি লক কিনলেন, কি খাচ্ছেন তার ছবি দেওয়া, জামা-জুতার দাম কত, বাসায় কি টিভি কিনলেন? – এই জাতীয় তথ্য না দেওয়াই ভাল। এছাড়াও আপনার বেডরুমের ছবি, বাসার পোশাকে তোলা ছবি, ব্যক্তিগত অন্তরঙ্গ ছবি না দেওয়ার চর্চা গড়ে তুলতে হবে। যেসব অথ্য অন্য মানুষের ভুল বোঝার সম্ভাবনা আছে সেসব তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিতে হয়না। সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করতে পারে এমন তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে না দেওয়া ভাল।
পরিশেষে বলতে চাই, ডিজিটাল মাধ্যমে আপনার সঠিক ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তোলা এখনকার সময়ে খুব প্রয়োজন। আপনার জীবন ও জীবিকার অনেক কিছুই এখন আপনার ডিজিটাল ব্যক্তিত্ত্বের উপর নির্ভর করে।
বিভিন্ন রকম দক্ষতা সর্ম্পকে জানতে দেখুন ” দক্ষতার প্রাথমিক আলোচনা”
সফট স্কীলের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে চাইলে পড়তে পারেন ” সফটস্কীলের প্রয়োজনীয়তা”
Pingback: দক্ষতার প্রাথমিক আলোচনা | Songshoptok