দশটায় অফিস শুরু হয়। বস বললেন, পরদিন সাড়ে নয়টায় অফিসে যেতে। সকাল আটটায় রওনা দিলে নয়টায় পৌঁছে যাওয়া যায়। কোন ভাবেই যাতে দেরী না হয়, তাই বাসা থেকে বের হলাম আটটা পাঁচে। একে একে ছয়টা সিএনজি দেখলাম । কোন সিএনজি মতিঝিল যাবেনা। সাড়ে আটটায় রিক্সা ঠিক করলাম।
নীলক্ষেতে গিয়ে দেখি আন্দোলন চলছে রেজাল্ট পাবার দাবীতে। রিক্সা আর যাবেনা। এবার হাঁটা শুরু করলাম। রিক্সা আর পাইনা। হেঁটে হেঁটে টিএসসির কাছে এসে রিক্সা পেলাম। তখন বাজে নয়টা পয়ঁত্রিশ।
রিক্সা হাইকোর্টের মাজার পেরিয়ে যাচ্ছে, এমন সময় মাথায় কিছু একটা পড়ল বলে মনে হল। উপরে তাকিয়ে দেখি গাছে বেশ কয়েকটা কাক বসে আছে। যা আশংকা করেছিলাম তাই হল। মাথা থেকে আসা সুঘ্রাণ আমার আশংকাকে নিশ্চিত করল!
এবার রিক্সা ড্রাইভার কে বললাম “ভাই, ফিরে জিগাতলা যাবেন?”
– আপনে না মতিঝিল যাইবেন?
– আরে মিয়া মাথার দিকে তাকাও
রিক্সা ড্রাইভার দাঁত কেলিয়ে বলে, “যাইতাছি”
এবার ফোনে রিং বাজা শুরু করল।
সারছে!
বসের ফোন বাজছে!
– হ্যালো, স্যার!
– তুমি কোথায়?
– হাইকোর্টের সামনে
– এত দেরি! তোমাকে বললাম নয়টা ত্রিশে আসার জন্য। এখন বাজে নয়টা পঞ্চান্ন। তুমি এখনও হাইকোর্টের সামনে! আসতে আরও দশ থেকে পনের মিনিট লাগবে! একদিন একটু আগে আসতে বললাম, তাও পারোনা! তাড়াতাড়ি আস!
– স্যার, আমি জিগাতলা যাচ্ছি।
– মানে কি? তোমার কি অফিসে আসার কথা, না বাসায় যাওয়ার কথা?
– স্যার বাসায় ফিরে গিয়ে আবার আসতে হবে।
– কি করেছ? এক্সিডেন্ট?
– না স্যার!
– তাহলে কি? কখন রওনা দিয়েছ?
– স্যার, আটটা পাঁচে।
– এতক্ষন কি রাস্তায় ঘুমিয়ে ছিলা।
– না, স্যার। নীলক্ষেতে অবরোধ।
– নীলক্ষেতে তোমার কি! তুমিত আসবে এলিফ্যান্ট রোড, শাহবাগ দিয়ে।
– তাড়াতাড়ি আসার জন্য, সিএনজিতে উঠতে চেয়েছিলাম, না পেয়ে রিক্সায় উঠলাম। নীলক্ষেতের পর রিক্সা আর আসতে পারলোনা। নীলক্ষেত থেকে টিএসসি হেঁটে, তারপর আবার রিক্সায় উঠলাম।
– থাক থাক এবার থাম। বাসায় যেতে হবে কেন? প্যান্ট ছিঁড়েছে?
– না, স্যার!
– তা হলে কি হয়েছে!
– স্যার কাক মাথায় পায়খানা করে দিয়েছে!
– কাক তোমার মাথা, ছাড়া আর কারো মাথা পেলোনা, যত্তসব! আসতে কতক্ষন লাগবে?
– স্যার, সোয়া এক ঘন্টার মধ্যে চলে আসবো
– কাজ শেষ হবে কখন?
– স্যার, লাঞ্চের আগে শেষ করে দিব।
– কি ভাবে দিবে, কাজের ভলিউম কত! তোমার কোন ধারনা আছে?
– স্যার লাঞ্চের আগে শেষ করে দিব।
– ঠিক আছে, তাড়াতাড়ি আস। আসার সময় মাথা ঢেকে আসবা। আর সাথে এক সেট জামা কাপড়ও নিয়ে আসবা। আবার কাক তোমার মাথায় পায়খানা করলেও যাতে ফিরে যেতে না হয়!
– জ্বী স্যার!
– আর সারাক্ষন স্যার স্যার করবে না।
– ঠিক আছে স্যার!!!