তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বা তৃতীয় বর্ষে পড়ি। ঝুপড়িতে যাই নাস্তা করতে। ক্লাস করি পাশ করার জন্য।বিজনেস ও সোশ্যাল সায়েন্স ফ্যাকাল্টি যাই খিচুড়ি আর চা খেতে। রেজাল্ট আগে দেওয়া ও পরীক্ষা আগে নেওয়ার আন্দোলন করি পৃথিবী পাল্টে দেবার নেশায়। টিউশনি করি, যতটুকু স্বাবলম্বী থাকা যায় তার জন্য। বিতর্ক করি, মনের খোরাক মেটাতে। কোন কিছু করার না থাকলে, টেক্সট নিয়ে বসতাম। টেক্সট নিয়ে বসলে, দেয়ালের টিকটিকির সৌন্দর্যও অসাধারণ লাগত!
সাইজে ছোট ছিলাম! কিন্তু সাহস ছিল অনেক। দলমত নির্বিশেষে সব বন্ধুর স্নেহ ও সমর্থন ছিল আমার সব কাজে।
বিতর্ক করা আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকার কারণে আত্মবিশ্বাস ছিল তুঙ্গে। যে কোন কথার পিঠে কথার জবাব দিতে পারতাম অনায়াসে। অনেক বিপদ, চোখ রাঙ্গানীও সামলে নিতে পারতাম।
এমনি উত্তাল সময়ে, একদিন সেমিনারে গিয়ে বসলাম। খুব ভাব নিয়ে সিলেবাসের কি কি রেফারেন্স বই আছে, দেখছি!
এমন সময় দেখি আমার দুই-চার ব্যাচ জুনিয়র ৬-৮ জনের মেয়েদের একটা গ্রুপ আমার আশে পাশের চেয়ারগুলো সব দখল করে নিল।
এরা সব সময় এক সাথে থাকে। পড়াশুনা, ঘুরাফেরা একসাথে করার কারণে অনেকেই এই গ্রুপকে চেনে।
- ভাইয়া একটা কথা আছে
- বলেন।
- ভাইয়া, আমাদের চেয়ে ভাল মেয়ে এই ভার্সিটিতে আছে আর, বলেন?
- আমার ডিপার্টমেন্টের মেয়ে, তোমাদের চেয়ে আর কে ভাল আছে!
- তাইলে ভাইয়া আপনি অন্য ফ্যাকাল্টিতে যান কেন?
- ও, খিচুড়ী আর চা খেতে যাই। ওখানকার খিচুড়ী আমার ভাল লাগে।
- ভাইয়া ও খুব ভাল রাঁধে। প্রতিদিন আপনাকে খিচুড়ী খাওয়াবে।
- ও, কেন আমাকে খিচুড়ী খাওয়াবে!
- আপনি “হ্যাঁ” বল্লেই হবে। ও, আপনাকে খিচুড়ী খাওয়াবে। কিন্তু আপনি অন্য ফ্যাকাল্টিতে যেতে পারবেন না। আপনার উপর আমাদের একটা দাবী আছে, তাইনা!
- দাবী থাকেতেই পারে আমি ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই। কিন্তু আমি কি সারাজীবন খিচুড়ী খাবো নাকি!
- আপনি যা খাবেন তাই রান্না করে খাওয়াবে!
- আমাকে রান্না করে খাওয়াতে হবেনা, বাসায় বুয়া আছে। ভার্সিটিতে ঝুপড়ি আর ক্যান্টিন আছে।
এবার যিনি ভাল রান্না করে বলে জানলাম সে কথা শুরু করল।
- ভাইয়া, আপনার কি লাগবে বলেন?
- কিছু লাগবে না।
- না ভাইয়া, লাগতেই হবে!
- এইটা কেমন কথা?
- ও খুব সুন্দরী, ও খুব ভাল ছাত্রী, ওর বাপের অনেক টাকা, ও খুব ভদ্র, ও ভাল বির্তক করে, ও ভাল গান ও আবৃত্তি করে, আর ও খুব গুছানো মেয়ে।
একে একে সবাইকে দেখাল।
- আমি যাই!
- না ভাইয়া যাওয়া যাবেনা!
আমি দেখি তাদের ডিঙ্গিয়ে আমার যাওয়ার উপায় নেই। এবার আমি এদের এড়াবো কীভাবে। আমার ক্লাসমেট, জুনিয়র, সিনিয়র সবাই খুব মন দিয়ে পড়ার ভান করছে আর আমার অবস্থা দেখে মজা নিচ্ছে।
এবার আরেকজন কথা শুরু করল।
- ভাইয়া, এত গুনী মেয়ে আপনি কোথায় পাবেন? আপনি কি ভয় পাচ্ছেন? আমরা খুব ভদ্র মেয়ে। আমাদের ভয় পাবার কিছু নেই।
আমি ভেতরে ভেতরে ঘামা শুরু করেছি। আর ভাবছি এরা আমার ইজ্জতের ফালুদা বানানোর জন্য এসেছে। কীভাবে উদ্ধার পাব!
- ভাইয়া কি ভাবছেন? আরেক জন বলে উঠলে।
- কিছু না।
- আমাদের কথা আপনাকে রাখতেই হবে।
- কি কথা?
- আমাদের মধ্যে একজনকে আপনার আজই বিয়ে করতে হবে!
- বলে কি? পাগল নাকি!
- পাগল না, এটাই সত্যি।
এবার আমি ভাবছি কি বলে এখান থেকে যাওয়া যায়।
- এখন ছাড়, চিন্তা করতে দাও। আর আমার ক্লাস আছে।
- আমরা খবর নিয়ে এসেছি, স্যার আজ পরে ক্লাস নেবেন।
- অনেক মজা করলা, এবার ছাড়।
- মজা না, ভাইয়া। আমরা সিরিয়াস।
- আমরা আপনাকে অনেক পছন্দ করি, ভাইয়া।
- পছন্দ না, কচু, আসছো আমার সাথে বিতলামি করতে!
- না, ভাইয়া। একবার রাজী হয়ে দেখেন।
- আমার ফ্যামিলি রাজী হবেনা
- আপনি রাজী হলে, আমরা বাকী সব ম্যানেজ করে ফেলব।
- এক জনকে বিয়ে করলে, অন্যদের মন খারাপ হবে।
- না হবেনা। আমরা কথা বলেই এসেছি। আপনি কি চান বলেন!
- আমাকে যেতে দাও!
- এইটা ছাড়া, আমাদের মধ্যে কাকে চান?
- কাউকে না!
- সেটা হবেনা।
- আমিত অনার্সে ফেল করবো। চাকুরি বাকরি কিছু পাবোনা। আমি অলস
- আমাদের আপত্তি নেই!
কি দুষ্টরে বাবা। এদের হাত থেকে কীভাবে মুক্তি পাব! টেনশনে আমার ঘামানো শুরু করেছে। তার দেখে খুব মজা পাচ্ছে।
আমি বললাম, আমার একটা দাবী আছে। তারা সবাই একসাথে বলে উঠল, “ আপনার সব দাবী আমরা মেনে নিব।”
- মানবেন? ঠিকত?
- মানব
- বিয়েতে সবাই থাকবে?
- থাকব, এবার দাবীটা বলেন, আর কাকে পছন্দ সেটা বলেন।
- আমাকে দ্বিতীয় বিয়ে করার অনুমতি লিখিত দিতে হবে!!
সবগুলো মেয়ে সমস্বরে বলে উঠল, “ না!”
- আচ্ছা এই শর্তে রাজী থাকলে জানাবা।
- আমাকে যেতে দাও!
এবার আস্তে করে পথ ছেড়ে দিল। আমার মনে হল মৃত্যুদন্ড থেকে মাত্র মুক্তি পেলাম।