আমি খুব করে চাইতাম,
একটা কালো পুরুষ আমাকে প্রেম নিবেদন করুক।
ভীষণ ইচ্ছে জাগতো
আমার হাত ধরে পার্কে হাঁটুক।
আর তা দেখে ভীষণ আফসোস করুক সুদর্শন বাকপটু ছেলেরা।
হয়’তো আমাকে সস্তার ভেবে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবে,
তা করুক!তাতে আমার বয়েই গেল।
নিরব ঝংকারে দোল দিয়ে যেত ভীষণ একটা কালো ছেলে
গাল ভরা হাসি মাথায় কিসকিসে কালো কোঁকড়া চুল
বাসনার পাখাটা একদিন হঠাৎ থেমে গেল,
খালাবাড়ি বেড়াতে গিয়ে দেখা
বট গাছের মগডালে বসে নিজের খেয়ালে লিখছে কবিতা
মন মতো না হওয়ায় আবার ছুঁড়ে ফেলছে নিচে,
মানে আমার দিকে নয়,নদীর জলে।
প্রবাহমাণ জলের সোঁতায় ভেসে যাচ্ছে অসংখ্য কবিতার তরী।
একবার একটা ভুল বশত ছুঁড়ে মারলো আমার দিকে,
তাতে কি চমৎকার করে লেখা!
শুভ্রতা চুরি করে
হয়ে গেলি শুভ্রানী
চাঁদ টা চুরি করে
জেগে আছে রজনী।
স্বর্গের গেলেমানও ছুটে আসে মর্ত্যের ধুলোয়,
তার মস্ত প্রেমানুভূতি নিয়ে।
তোর চুলের সুপ্ত গন্ধ
ছন্দে ছন্দে জাগায় প্রেমারতি।
আমার নিঘাত তিয়াসি মন
ব্যাকুল চঞ্চলতায় আবিষ্ট হয়ে এক দাবি নিয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইলাম প্রতীক্ষায়।
ভাবলাম একটু জানিয়ে দেই
আমি একবেলা তার অপেক্ষায় আছি,
একটা সন্ধ্যার প্রহর কাটিয়ে উষার আলো পর্যন্ত
নিঃশব্দ দাঁড়িয়ে থাকবো।
আমার নৈঃশব্দিক প্রেম মহাকব্য হয়ে আমার হাতের মুঠোয়।
লোভ সামলাতে পারলাম না।
চোখ বন্ধ করে আবৃত্তি শুরু করলাম,হচ্ছে না,
আমার হাত থেকে থাপা দিয়ে কেউ নিয়ে গেল আমার প্রেমের মহাকব্যটা।
চোখ খুলে দেখি
আমার অপেক্ষার অবসান।
আমার নীল জ্যোৎস্নার আলো।
দৌড়ে পালাতে চাইলাম
কিন্তু আটকে গেলাম মায়ায়,
কালো এতো মায়াবি হতে পারে!
এত স্নিগ্ধাতা আছে কালোর মধ্যে!
চোখের তারায় কি নির্মল সুতোর বাঁধন,
শ্বেত পাথর বুঝি লজ্জায় লুকাতে চাইছে মুখ।
এই কালো আলোর ঝলকানিতে,
হেমন্তবিলাসী সর্ষে ক্ষেতে অবাধ্য কোকিলের অপ্রস্তুত আনাগোনা।
হাতের লেখায় তার শৈল্পিক ছোঁয়া
যেন হাজার বছরের পুরোনো কোন কারুকার্য খচিত পোড়া মাটির তুলি।
তার মনে না জানি কত শিল্পের আঁকড়
আমি আমার রূপের মোহে তার নজর ফেরাতে চাইছি বারংবার,
তার কোলহ কোমল মনে শুধু কবিতার বিবাদ,
মানবী নাকি মায়াবি!
সংশয়ে ফেরার সময় একবার চাইলো আমার পানে
আর ফেরালো না চোখ আমি ফেরা অব্দি।
কি স্বার্থক আমার বেড়াতে আসা!
কালো কোঁকড়া চুলের এক বনহংস চেয়েছি
সে আমার সরোবর জুড়ে সাঁতারের ঢেউ তুলে আমাকে জাগিয়ে রাখুক,
আজন্ম কালোর প্রতি আমার নিঘাত প্রেম
যেন তুফানের মত সব ভাঙচুর করে দেয়,
আমি বরাবরই সুন্দর খুঁজি অসুন্দরে অতল স্পর্শে,
একদিন সব কুল উপছে উছলে উঠল প্রেমের জোয়ার।
জোয়ারের পানি ভাঁটির আঙিনা তলিয়ে দিল,
খালুজানের কঠোর হুকুম-
“চইলা যাও শহরে,
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছো
ভালোটা বাইছা নিতে শিখ নাই।”
আমি মুখ তুলে এই প্রথম ঝগড়া করলাম,শান্ত অথচ অবাধ্য প্রেমের অধিকারে গুরুজনকে সাহসের সাথে কিছু বলতে পারলাম,
আমি ভালো চাই না,চাই শৈল্পিক লতা!
কবিতা ধুইয়া কি পানি খাইবা?
আমি হাসলাম!
খালুজান আরও রেগে গেলেন,
আমার হাসি এখানে দ্যূতি ছড়াতে পারেনি,
জোড় করে থেকে গেলাম সে রাত,
পরদিন ভোরে খালুজানের হাসিতে ঘুম ভাঙলো,
ফিসফিসানি আওয়াজ,
হুজুর সব শেষ,
চুপি চুপি ছুটে গেলাম
আমার নৈঃশব্দ্য কবিতার বাগানে,
ছাইচাপা আগুনের কুণ্ডলী থেকে
একটি শব্দ পেলাম হাসনাহেনার ঝোঁপে তোমার জন্য আমার কবিতার গাট্টি,
এক পলক হাসনাহেনার গাছটার দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি ফেরালাম এদিকে
খসে পড়া তারার খবর কে রেখেছে কোনকালে?
নাই,কিছু নাই তো,হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে সব।
আমার কবিতা,আমার কবি,আমার কবিতার বাগান,আমার কালো পুরুষ।।
লেখকঃ সাদ্দাম বিশ্বাস
বাহ! চমৎকার ক্ষুরধার লেখা!!