আমাদের ডিপার্টমেন্টের ক্যারিয়ার নিয়ে এই লেখা।
লেখাটা হবে পোষ্টমার্টেম ধরণের। অনেকেই তিক্ততার স্বাদ পাবেন। ব্যক্তিগতভাবে নিবেন না। পড়ে উপলদ্ধি করতে পারলে কাজে লাগবে।
আমরা ইংরেজিতে কেন ভর্তি হই?
- ইংরেজি একটি ভাল সাবজেক্ট।
- কেন ভাল সাবজেক্ট?
- ইংরেজি পড়ে চাকুরি পাওয়া সহজ, কিছু না পেলে মাস্টারি করা যায়।
আমাদের নূন্যতম ৮০% এই দলে পড়ি। মাত্র কয়েকজন সাহিত্য পছন্দ করে আসেন। আর কয়েকজন পড়তে পড়তে ভালবেসে ফেলেন।
নিয়োগকারী ইংরেজি পড়ুয়া ছাত্রী/ছাত্র কেন প্রতিষ্ঠানে নিতে চান?
তাদের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্ট ভাল থাকে। ভাষার দখল ভাল হয়। কাজ বুঝে করতে পারে।
এই গুলো ছিল আমাদের সুবিধা। এই সুবিধাগুলো চলে গেলে কি হবে?
যদি অন্য বিষয়ে পড়ুয়াদের ভাষার দখল গড়ে আমাদের চেয়ে ভাল হয় এবং যদি তাদের আইটির দক্ষতা আমাদের চেয়ে ভাল থাকে, যদি তাদের গড় বয়স আমাদের থেকে কম থাকে সেক্ষেত্রে নিয়োগকারীর কাছে আমাদের আলাদা কোন অবস্থান থাকেনা।
আবার অনেকে আমাদের থেকে কম মেধা নিয়েও অনেক ভাল ক্যারিয়ার গড়তে পারছেন। কীভাবে পারছেন?
আমাদের নিজেদের জন্য আমাদের এখন থেকে একটু ভিন্ন ভাবে চিন্তা শুরু করতে হবে। প্রচলিত পেশার বাইরেও যে পেশাগুলো তৈরি হয়েছে, সেগুলোর দিকে খেয়াল করতে হবে।
শিক্ষকতা ছাড়া আমাদের সুযোগ আছে অনুবাদ, লেখালেখি, দোভাষী হিসেবে কাজ করা, ইত্যাদিতে। এসবে ক্যারিয়ার তৈরি করা অনেক দীর্ঘমেয়াদী প্রচেষ্টার ফল। আর বাকী যে কোন দিকে (ব্যাংক, বীমা, মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা, ডিজিটাল মার্কেটিং, সোশ্যাল কমপ্লায়েন্স, হোটেল ম্যানেজমেন্ট, ইত্যাদি) ক্যারিয়ার গড়তে হলে আমাদের অন্য কোন বিষয়ে মাস্টার্স বা ডিপ্লোমা করতে হয়।
আমরা একটা মৌলিক বিষয় ভুলে যাই।
চাকুরি একটি দেওয়া-নেওয়ার চুক্তি।
প্রতিষ্ঠান তার প্রয়োজনে নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষতা সম্পন্ন লোক চায়। আমার মাঝে সে দক্ষতাগুলো না থাকলে, প্রতিষ্ঠান আমাকে নিয়োগ দেবেনা।
আবার নূন্যতম কিছু সুযোগ সুবিধা না থাকলে আমি সে চাকুরি করব না।
চাকুরি কম থাকায় প্রতিষ্ঠান সুবিধাজনক অবস্থায় থাকে- এটা যেমন ঠিক। যোগ্য ও দক্ষ কর্মীর জন্য প্রতিষ্ঠান অপেক্ষায় থাকে –এটাও ঠিক।
কাঙ্ক্ষিত পেশার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন আমাদের আমাদের প্রথম ধাপ। কিছু দক্ষতা যে কোন চাকুরিতে লাগে।
আমাদের কি কি দক্ষতা প্রয়োজনঃ
বিষয়ের কারণে ইংরেজি পড়া, লেখা, বলা ও শোনার দক্ষতা না থাকাটা হাস্যকর। কিন্তু আমরা এই হাস্যকর কাজ করে চলেছি দিনের পর দিন। তাহলে আমাদের অবস্থান কোথায়?সিজিপিএ খুবই গুরুত্বপূর্ণ. সিভি শর্ট লিস্টিং এ ৩.০০ এর নিচে সিজিপিএ খুবই দূর্বলতার পরিচায়ক। সিভি বাদ পড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় অনেক। বাংলা-ইংরেজি, ইংরেজি-বাংলা ভাবানুবাদের দক্ষতা অর্জন করতে হবে চর্চা করে করে। আমাদের সাধারণত চাকুরি দেওয়া হয় আমাদের ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা আছে ভেবে। সাহিত্যের জন্য চাকুরির বাজার সীমিত। সাহিত্য আপনার মনের খোরাক। আর কে না জানে সাহিত্য বোঝার জন্য ভাষার দক্ষতা অপরিহার্য।
আপনি পড়লে কিছু অতি স্মার্ট হাসবে, আপনি ইংরেজি বলা চর্চা করলে হাসবে। আপনি দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য যা করেন তাতেই তেনারা হা হা হা করবে। এই সব হা হা হা পার্টিকে পাত্তা দিবেন না। এরা আপনাকে নিরুৎসাহিত করে, গোপনে প্রয়োজনীয় কাজটা করে নেবে। আমরা কেউ যানবাহনে পড়লে তাকে টিটকারী মারি। কিন্তু রাস্তায় দাঁড়িয়ে মূত্র বিসর্জন করলে তাতে বিচলিত হইনা। সুতরাং, স্রোতের বিপরীতে গিয়ে নিজের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করে নিতে হবে।
ইংরেজি পত্রিকা পড়া ফরজে আইন। এতে করে আপনি জারগন ও ইডিয়ম এর যথার্থ ব্যবহার শিখবেন। খুব কাজে লাগবে। মাইক্রোসফট এক্সেল দারুণ একটা এপ্লিকেশন। এখনকার যে কোন চাকুরিতে আইটি স্কীল অপরিহার্য। অনূন্য মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেল ও পাওয়ার পয়েন্টে দক্ষতা অনেক পার্থক্য তৈরি করে দেয়। উপস্থাপনার দক্ষতা খুবই প্রয়োজন।
নোট, মেমো, রিপোর্ট লেখার দক্ষতা আপনাকে সহজেই অন্যদের থেকে আলাদা করে দেবে। বিজনেস কমিনিকেশান এর একটা বই কিনে পড়ে পড়ে চর্চা করুণ। পত্রিকায়, ম্যাগাজিনে লেখার চেষ্টা চালিয়ে যান লাগাতার। ইংরেজিতে স্পীচ দিতে পারতে হবে সাবলীলভাবে। বিতর্কের সাথে যুক্ত হউন। এই সব দক্ষতার সাথে সংখ্যাতাত্ত্বিক জ্ঞান/নুমেরেসি আমাদের মূল্যবান মানব সম্পদে পরিণত করে।
আত্ম-বিশ্বাসের সাথে চোখে চোখ রেখে কথা বলতে শিখুন। না জানলে তা জানিয়ে দিন এবং শিখুন। কোন অবস্থাতেই না জেনে জানার ভান করবেন না। আপনার দেওয়া তথ্যের ও বিশ্লেষণের উপর অন্যদের আস্থা তৈরি করুণ। এতে সব স্থানে আপনার গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে।
ফরাশি ভাষা শিখুন। আপনার ক্ষেত্র অনেক বড় হয়ে যাবে।
টিউশনি কমিয়ে এগুলোতে মনযোগ দিন। রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট হবে অসাধারণ।
ক্যারিয়ার গঠনের জন্য প্রথমে ঠিক করতে হবে আমি কি করতে চাই। মানে আমি কোন কাজকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে চাই। এই সিন্ধান্তের পেছনের কারণ গুলোও নিজের কাছে পরিষ্কার থাকা প্রয়োজন। তবে একটা ব্যাকআপ প্ল্যান থাকা প্রয়োজন। প্রথমটা ব্যার্থ হলে দ্বিতীয়টাতে যাতে মানিয়ে নিতে পারেন।
আমাদের সমস্যাঃ
আমাদের অধিকাংশের এটিটূড নেগেটিভ। প্রথমেই আমরা সমস্যার কথা সামনে নিয়ে আসি। পৃথিবীর সব দেশে সমস্যা ও সম্ভাবনা বা সুবিধা একই সাথে পথ চলে।
কাজ কম করতে হয় কিংবা বেশি টাকা পাওয়া যায় – এই দুটো বিষয়ের একটি কিংবা দুটোই যদি আপনার বৃত্তি কিংবা পেশা নির্বাচনে মূল ভূমিকা পালন করে তবে আপনি ভুল রাস্তায় হাঁটছেন। আর একটা বড় সমস্যা হচ্ছে আমরা ক্যারিয়ার নিয়ে সুসংগঠিত চিন্তা করিনা। একটা পেশা বেছে নিতে হলে, সে পেশা সর্ম্পকে ভাল করে খোঁজ খবর নিয়ে পেশা বেছে নেওয়া উচিত। প্রত্যেক পেশার কিছু ঝুঁকি থাকে, সুবিধা থাকে, পেশা সর্ম্পকিত কিছু ঝামেলা বা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি/প্রফেশনাল হ্যাজার্ড থাকে থাকে। প্রত্যেক পেশার কাজের ধরণ ও চাহিদা এক না। কোন পেশায় মানুষের সাথে মিশতে হয়, কোন পেশায় হিসেব নিকেশ করার দক্ষতা বেশ ভাল হতে হয়, কোথাও তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা করা খুবই কম, কোথাও ছুটি পাওয়ার হার খুব কম, কোথাও চাকুরিস্থল ত্যাগ করা যায়না। পেশা বেছে নেবার ক্ষেত্রে আপনার ফোকাস খুঁজে বের করতে হবে। আপনার পেশাতে আপনি কি চান এবং আপনি কি কি ছাড় দিতে পারবেন আপনার কাঙ্ক্ষিত পেশার জন্য – এই ভাবনাগুলো ভেবে একে একে নোট বুকে টুকে রাখুন। ব্যক্তিত্ত্বের ধরণের সাথে পেশা না মিললে বাড়তি মানসিক চাপ তৈরি হয়। যা আপনাকে এক সময় অবসাদগ্রস্থ করে তুলবে। সাধারণত আমরা যে চাকুরি বেছে নেই তা করতে থাকি ৩০-৩৫-৪০ বছর ধরে। তাই আগ্রহ আছে, ব্যক্তিত্ত্বের সাথে মেলে এমন কাজ বেছে নেওয়াই বুদ্ধিমানের সিন্ধান্ত।
আমাদের ব্যাচগুলোর মাঝে যোগাযোগ/নেটওয়ার্কিং খুবই দূর্বল। নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্মটা জরুরি ভিত্তিতে করা দরকার। এলামনাইরা সাধারণত নিজের ডিপার্টমেণ্টের/ বিশ্ববিদ্যালয়ের জুনিয়রদের প্রতি স্নেহশীল থাকে। এইটা খুব কাজে লাগে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে।
সিজিপিএ আমাদের বিশ বছরের হতাশার নাম। গ্রেডিং পদ্ধতির জন্য উপযুক্ত নম্বর বন্টন ও মূল্যায়নের সমন্বিত কাঠামো আমাদের ডিপার্টমেন্ট আজও করতে পারেনি। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যেখানেই সিজিপিএ এর ভিত্তিতে প্রতিযোগিতার প্রশ্ন আসে, সেখানেই আমরা ছিটকে যাই। যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ না পেলে আমাদের কিছুই করার থাকেনা।
সেশন জ্যাম আমাদের ব্র্যান্ড! তবে আশার কথা সেশন জ্যাম কমে আসছে।
আমরা সবাই ক্লাস শেষ হলেই ক্যাম্পাস থেকে চলে আসি। আমাদের কর্মকান্ড ক্যাম্পাস ভিত্তিক না, শহর কেন্দ্রিক। যে কারণে আমাদের আন্তঃব্যক্তিক সর্ম্পক/ইন্টারপারসনাল রিলেশান ভাল করে জমে উঠেনা।
শিক্ষক-ছাত্র ভাব বিনিময়ের কোন প্ল্যাটফর্ম না থাকা আমাদের আরেকটা দূর্বলতা ।
সব শেষ যেটা বলব, অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের চেয়ে আমরা ক্যারিয়ারের প্রতি উদাসীন বেশি। অনার্স দিয়ে ক্যারিয়ারের চিন্তা শুরু করা ভুলে যেতে হবে।
প্রথম সেমিষ্টার/ প্রথম বর্ষ থেকেই ক্যারিয়ারের জন্য গুছিয়ে চিন্তা এবং কাজ শুরু করতে হবে। টিউশনি কমিয়ে স্কীল ডেভেলপমেন্টে সময় দিতে হবে।
আমরা কি কি করতে পারি?
প্রথমেই বলে নেই কোভিড-১৯ এর কারণে যারা মাত্র পাস করে বেরিয়েছেন তাদের জন্য পরিস্থিতি অনেক জটিল। তারপর ও নিজেকে ট্র্যাকে রাখতে হবে। তারা পড়তে পারেন “২০২০ ও ২০২১ সালে চাকুরি খোঁজার উপায়”
যারা এখনও ছাত্র আছেন, তারা কি করবেন?
বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত হবেন। স্বেচ্ছা সেবামূলক কাজের সাথে যুক্ত হতে হবে। নেতৃত্বের গুণ তৈরি হবে। টিম ওয়ার্ক শিখবেন। নিজের ভুলের দায়িত্ব নিতে হবে। অন্যকে সাফল্যের অংশীদার করতে হবে। প্রশংসা করতে শিখুন। ইন্টারপারসনাল রিলেশান তৈরিতে এই চর্চা খুব সহায়তা করবে। স্টাডি সার্কেল বানান। নির্দিষ্ট একটি বিষয় ঠিক করে সবাই আলোচনা করুণ। কেউ কোন বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করলে, তার মূল কারণটা জানার চেষ্টা করুণ। একটি বিষয়কে বিভিন্ন দিক থেকে দেখার স্বক্ষমতা তৈরি হবে। আর্গুমেন্ট বিশ্লেষণের ক্ষমতা বাড়বে। যে কোন তথ্যের রেফারেন্স দেখুন। তথ্যের যৌক্তিক ভিত্তি নিয়ে প্রশ্নের অবতারণা করুণ। এতে আপনার ক্রিটিক্যাল থিংকিং স্কীল তৈরি হবে। সম্ভব হলে ক্রিটিক্যাল থিংকিং এর উপর অনলাইনে ফ্রি কোর্স করে ফেলুন, অনেক কাজে লাগবে।
ডিপার্টমেন্টের যে কোন অনুষ্ঠানে যোগ দিবেন। আপনার প্রয়োজনে সিনিয়র/জুনিয়রকে ই-মেইল করুণ। আপনার পরিচয় দিয়ে আপনার প্রয়োজন সংক্ষিপ্ত আকারে লিখে পাঠান। তবে বার বার কল করে বিরক্ত করবেন না। “আমাকে একটা চাকুরি দিন বা আমাকে একটা চাকুরির ব্যবস্থা করে দিন” – এই জাতীয় কথা কাউকে বলবেন না। নিজের ব্যক্তি স্বত্বাকে খাটো করে কিছু পাবার চিন্তা মাথা থেকে দূর করে দিন। তথ্য চাইবেন, দিক নির্দেশনা চাইবেন এবং যোগাযোগ রাখবেন। এই তিনটি কাজ আপনার প্রয়োজনের কথা তার মাথায় রাখবে। সুযোগ আসলে আপনাকে স্মরণ করার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। কোন চাকুরি পেলে বের করুণ আপনার পরিচিত কেউ এ জাতীয় চাকুরি করে কিনা? তার সাথে যোগাযোগ করে আপনার প্রাপ্ত চাকুরির খুঁটিনাটি জেনে নিবেন।
আপনাদের মূল্যায়ন কাঠামো নিয়ে বার বার শিক্ষকদের সাথে কথা বলতে হবে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা পদ্ধতি, নম্বর বণ্টন, ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়া এনে স্যারদের দেখাতে পারেন।
ধন্যবাদ দেয়ার চর্চা শুরু করুণ। দুঃখিত বলতে শিখুন। ভুল করলে লজ্জিত হন। এই তিনটি মৌলিক সৌজন্যবোধের মধ্যে পড়ে। জাতিগতভাবে এই তিনটার অভাব আমাদের মাঝে প্রকট।
একটা দৃষ্টান্ত দেই।
কোন একটা মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় ফাইনালে যারা পৌঁছেছেন, তাদের থেকে বিচারকরা চ্যাম্পিয়ন বের করতে পারছিলেন না।
তার পর আলাদা করে সবাইকে একটা প্রশ্ন করা হল। আপনি কখন লজ্জিত হন? উত্তর আসল “কখনোই লজ্জিত হই না”, “ কদাচিত লজ্জিত হই”, “ শেষ কবে লজ্জিত হয়েছি মনে পড়ছে না”।
এক জন জবাব দিলেন “ভুল করেছি বুঝতে পারলে লজ্জিত হই”
শেষের উত্তর যিনি দিয়েছিলেন তাকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়।
কেউ আপনাকে কিছু বলতে চাইলে, তিনি আপনার কাছে বিরক্তি হলেও তার কথা শুনুন। দেখা যাবে আপনার জন্য প্রয়োজন এমন কোন তথ্য তিনি আপনাকে দিচ্ছেন। সব সময় সাথে কলম রাখবেন। কারো প্রয়োজনে যাতে এগিয়ে দিতে পারেন।
ক্যাম্পাসভিত্তিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করুন। তাতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করুণ। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, সাপ্লাই চেইন সর্ম্পকে ধারণা হবে।
উচ্চারণে আঞ্চলিকতা বাদ দিতে হবে। আপনি আপনার আঞ্চলিক ভাষা জানবেন, বলবেন। কিন্তু চলিত ভাষা ব্যবহারের সময় যাতে তার প্রভাব না পড়ে।
বির্তক, আবৃত্তি করে ভাষাটা ঠিক করে নিতে হবে।
এনালাইটিক্যাল স্কীল বাড়ান। প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে ধাপে ধাপে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা ব্যক্তি জীবনে, চাকুরি জীবনে আপনাকে অনেক এগিয়ে দেবে।
আপনি যে ধরণের কাজ করতে চান,প্রয়োজনে সেখানে বিনা বেতনে/ সন্মানীতে পার্ট টাইমার হিসেবে কাজ করুণ। এই চর্চা আমাদের মাঝে একেবারেই নেই। আমরা কাজ শেখার আগেই বেতন নিয়ে ভাবনা শুরু করি। আমরা কি পাব সারাক্ষণ সেই চিন্তায় বুঁদ থাকি। আমরা খুব অধিকার সচেতন কিন্তু দায়িত্বের প্রতি আমাদের মনযোগ কম। অনেকের নেই বল্লেই চলে।
টিউশনির টাকা, আর চাকুরির বেতন আলাদা জিনিস। টিউশনির টাকা বেশি, চাকুরির বেতন কম – এই চিন্তা ক্যারিয়ার শুরুর সময় একেবারে বাদ দিয়ে দিবেন।
শুধু মাত্র তিনটা দক্ষতা থাকলে আপনি ভাল চাকুরি পাবেন এবং ভাল কর্মী হতে পারবেন – ১) লেখার দক্ষতা, ২) এক্সেল, ৩) প্রেজেন্টেশান স্কিল বা উপস্থাপনার দক্ষতা।
তবে প্রতিষ্ঠানে উপরের দিকে যেতে হলে – ১. লিডারশীপ, ৩. ইন্টারপারসোনাল রিলেশান, ৩. যোগাযোগের দক্ষতা, ৩. ইন্ডাস্ট্রি নলিজ ৪. টিম ওয়ার্ক, ৫. প্রবলেম সলভিং সহ আরো বেশ কিছু দক্ষতার প্রয়োজন হয়।
শেষ কথা সিজিপিএ এর ঘাটতি অন্যদিক দিয়ে পুষিয়ে নিতে হবে। নইলে অন্যদের সাথে প্রতিযোগিতায় আমরা কোন ভাবেই টিকতে পারবো না।
কোন কোন পেশায় যেতে পারি?
প্রথমে একটা কথা বলে নেই। দেশে কিছু মোটিভেশনাল স্পীকার গজিয়েছেন যারা সবাইকে বলে বেড়ায় যেখানে আগ্রহ থাকবে সেখানেই কাজ করার জন্য। কথাটা একটু সত্য। আগ্রহ আছে কিন্তু যোগ্যতা নেই সেক্ষেত্রে কি হবে? তারা সবাইকে উদ্যোক্তা হবার জন্য দারুণ অনুপ্রেরণা দিয়ে বেড়ান। আপনি উদ্যোক্তা হতে চান সমস্যা নেই। কিন্তু সেটা হবার মত মানসিক শক্তি আপনার থাকতে হবে। শত – হাজার বার ব্যর্থ হয়ে উঠে দাঁড়াবার মত জেদ থাকতে হবে। বিজনেস মডেল, আর্থিক ব্যবস্থাপনা, ও টার্গেট কাস্টমার বা সেবা গ্রহীতার চাহিদা বুঝলে আপনি উদ্যোক্তা হতে পারবেন। অল্প কিছু মানুষ উদ্যোক্তা হবার মত যোগ্যতা ও জেদ নিয়ে জন্মান। বেশিরভাগ মানুষ চাকুরি করার জন্য জন্মান।
আপনি যাই করতে চান তার জন্য ফোকাস ঠিক করা, গুছিয়ে পরিকল্পনা করা এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করা – এই তিনটি ধাপ হবে আপনার ক্যারিয়ার প্ল্যানিংয়ের মূল বিষয়।
আর তা না করতে পারলে অন্যদের কনগ্রেচুলেশন্স দিয়ে যাবেন কিন্তু নিজে পাবেন না!
আমাদের জন্য কি কি পেশা আছে যা আমরা শুধু ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য পড়ে শুরু করতে পারি? শিক্ষকতা, বাংলা-ইংরেজি অনুবাদ, সাহিত্য, দো-ভাষীর কাজ, প্রুফ রিডিং, সম্পাদনা, সাংবাদিকতা, বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারভূক্ত কর্মকর্তা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক কর্মকর্তা, জনসংযোগ, ব্যাংকিং, ইত্যাদি। এগুলো আপনারা সবাই জানেন।
ভাল শিক্ষক, ভাল অনুবাদক, ভাল সম্পাদক, ইত্যাদি সহ ভাল যে কোন পেশার লোকের খুব অভাব।
তাই দক্ষতা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি দক্ষ হলে পুরো পৃথিবীর চাকুরির বাজার আপনার সামনে উন্মুক্ত।
তীব্র প্রতিযোগিতার এই যুগে আপনার বিশেষ কোন দক্ষতা বা যোগ্যতা না থাকলে আপনার নিজেকে সেল করার সুযোগ অনেক কমে যাবে।
যারা এগুলো ছাড়াও অন্যদিকে ক্যারিয়ার গড়তে চান, তাদের জন্য আমি চেষ্টা করছি কিছু নতুন কিংবা আমাদের জন্য অপ্রচলিত পেশার কথা জানাতে। অবশ্য তার জন্য আপনাদের বাড়তি কিছু পড়াশুনা করতে হবে। ট্রেনিং, ডিপ্লোমা, মাস্টার্স, পেশাদার কোর্স প্রয়োজন হয় এসব ক্ষেত্রে।
১) অডিট এন্ড কমপ্লায়েন্স
২)সোশ্যাল কমপ্লায়েন্স
৩) প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট
৪) প্রসেস ইমপ্রুভমেন্ট
৫) রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইন বিজনেস
৬) হেলথ এন্ড সেফটি
৭) আরবিট্রেশান( ব্যাবসা ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশান
8) কন্টেন্ট রাইটিং
৯) ডিজিটাল মার্কেটিং
১০) এসইও
১১) ব্রান্ডিং
১২) কর্পোরেট কমিউনিক্যাশান
১৩) চার্টাড সেক্রেটারী
১৪) বিজনেস রাইটিং
১৫) ক্রিয়েটিভ রাইটিং
১৬) বিজনেস প্রসেস অপটিমাইজেশান
১৭) বিজনেস প্রসেস ম্যানেজমেন্ট
১৮) কাস্টমার সার্ভিস/রিলেশান ম্যানেজমেন্ট
১৯) কস্ট ম্যানেজমেন্টা
২০) কোয়ালিটি কন্ট্রোল
২১) পাব্লিক স্পিকিং
২২) সফট স্কীল ট্রেইনার
২৩) হোটেল ম্যানেজমেন্ট ও টুরিজম
২৪) ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট
২৫) সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট
২৬) হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট
নূতন কিছু জানলে আবার লেখা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব।