কেউ কেউ পড়াশুনার শেষ দিকে এবং অধিকাংশই ছাত্র-ছাত্রী অনার্স কিংবা মাস্টার্স দেবার পর চাকুরি খোঁজা শুরু করে। এই চাকুরি খোঁজার কাজটি সুসংগঠিতভাবে করলে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকুরি খুঁজে পাওয়ার কাজটা সহজ হয়। আপনার চাকুরি খোঁজার পথে আপনাকে সহায়তা করতে এই লেখাটি সাজানো হয়েছে। নবীনদের চাকুরি খোঁজা একটি জটিল প্রক্রিয়া। এই লেখা আপনার যাত্রাকে সহজ করে দেবে।
আপনি সিন্ধান্ত নিয়েছেন চাকুরী করবেন। আপনার প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ কি?
আপনার প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে চাকুরী খোঁজাকে(Job Searching) পূর্ণকালীন কাজে(Full time Job) পরিণত করা। আর সব কাজ গৌণ হয়ে যাবে তখন।
চাকুরি পাওয়া একটা প্রক্রিয়ার শেষ ধাপ। প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ হচ্ছে – আপনার জানা- আপনি কি চান? এবং কেন চান? তার জন্য আপনাকে কি কি করতে হবে?
বেতন বেশি বলে আপনি এ কাজটি করতে চান? এই চাকুরিটি পাওয়া আপেক্ষাকৃত সহজ? এই কাজে আরাম করে থাকা যায়?
জীবিকার প্রয়োজনে আমাদের কাজ করতে হয়। শুধু টাকা উপার্জনের জন্য অপছন্দের একটি পেশা বেছে নেওয়া সারা জীবনের বোকামী। যে ধরণের কাজ করে আপনি সন্তুষ্টি পান, তাই আপনার পেশা হিসেবে বেছে নেওয়া উচিত। ক্যারিয়ায়ের শুরুতে শুধু বেশি বেতন এবং আরাম করা – এই দু’টো চিন্তাই মারাত্মক ক্ষতিকর। নিজেকে কাজের যোগ্য করে তুলতে পারলে বেশি বেতন, সুযোগ সুবিধা স্বাভাবিকভাবেই আসবে। আরাম করার মানসিকতা থাকলে আপনি প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন না। যা সবশেষে আপনাকেই ক্ষতিগ্রস্থ করবে।
ক্যারিয়ারে সফল হতে হলে আপনাকে অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকতে হবে। ক্যারিয়ার একটা প্রতিযোগিতা(Race), প্রাতঃ ভ্রমণ নয়।
নিজের সামর্থ্য জানা, সঠিক পরিকল্পনা করা ও বাস্তবায়ন করা- এই গুলো হচ্ছে ক্যারিয়ার গঠনের মৌলিক বিষয়।
প্রথমেই আপনি যেসব কাজ করতে পছন্দ করেন, তার একটা তালিকা করবেন। গবেষণা করা, নিজের ব্যবসা শুরু করা, লেখালেখি করা এসবও আপনার তালিকায় থাকবে। আপনি যা করতে চান, তাই থাকবে।আমার সার্টিফিকেট দিয়ে আমি কি চাকুরি পাব? – এই প্রশ্ন থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
আমি হিসেব নিকাশ করতে পছন্দ করি? আমি মানুষের সাথে কথা বলে, তাদের প্রভাবিত করতে পছন্দ করি? আমার সমস্যা সমাধান করতে ভাল লাগে? আমি কি কাঠামোবদ্ধ(Structured)পরিবেশে কাজ করতে পছন্দ করি? আমি অন্যদের কিছু বুঝিয়ে বলতে কিংবা শেখাতে পছন্দ করি? আমার নতুন নতুন কাজ করতে ভাল লাগে? আমি নতুন নতুন জিনিস তৈরি করতে চাই? – এই ধরণের প্রশ্ন করে করে আমার কাজের আগ্রহের জায়গাটা খুঁজে বের করতে হবে।
এবার আপনাকে বের করতে হবে, আপনি যে ধরণের কাজ করতে পছন্দ করেন সে ধরণের কাজ কোন চাকুরির সাথে মেলে।
সে চাকুরি করার জন্য আপনার কি কি প্রয়োজনীয় দক্ষতা লাগবে? আপনার শিক্ষা, অভিজ্ঞতা দিয়ে তার কোনগুলো আপনি অর্জন করেছেন? কোনগুলো আপনাকে অর্জন করতে হবে?
আপনার জ্ঞান, দক্ষতা, সামর্থ্য ও আগ্রহ – এই চারটি বিষয় আপনার মূল বিবেচ্য।
যে চাকুরিগুলো আপনার আগ্রহের তালিকায় যুক্ত হল, তা নিয়ে এবার আরও চিন্তাভাবনা করতে হবে। প্রতিটি চাকুরির সুবিধা, অসুবিধা ও ঝুঁকির জায়গাগুলো বের করবেন।
কোন ধরণের প্রতিষ্ঠানে আপনি কাজ করতে চান, তা বের করতে পারলে আরও ভাল হয়। একদম লক্ষ্যহীন হয়ে চাকুরি খুঁজে পাওয়াটা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে।
তুলনামূলক বিচারে আপনার কাছে সুবিধাজনক এমন একটি চাকুরির তালিকা আপনি তৈরি করবেন।আপনার তালিকার কাজগুলো করার জন্য আপনার কি কি বিষয়ে দখল থাকতে হবে? কি কি প্রশিক্ষণ নিতে হবে? সম্ভব হলে একই কাজ খণ্ডকালীন(Part time) হলেও করার চেষ্টা করতে হবে। অথবা একই পেশায় সফল এমন কার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে, তা সম্ভব না হলে এমন কাউকে অনুসরণ করে নিজেকে যোগ্য করে তুলতে হবে।
সিভির গুরুত্ব (Importance of CV):
আশা করি আপনি নিজের লক্ষ্য স্থির করতে পেরেছেন, আপনি কি ধরণের চাকুরি করতে চান।
যেখানে আপনাকে সিভি তৈরি করে পাঠাতে হবে, সেখানে আপনি কীভাবে সিভি তৈরি করে পাঠাবেন?
ঠিক এই মুহূর্তে আপনাকে আমি বাস্তবতার রাজ্যে স্বাগত জানাই। এই রাজ্য প্রতিযোগিতার। এই রাজ্য রুঢ়, কঠোর, ও সহানুভূতিহীন। আপনার ছাত্রাবস্থায় আপনি চারদিক থেকে সহানুভূতি পেয়েছেন। আপনার ভুল হলে শিক্ষক তা শুধরে দিয়েছেন। পরিবার আপনাকে আর্থিক সাহায্য করেছেন আপনার পড়াশুনা শেষ করার জন্য। এখন আপনার ভুল ঠিক করে দেবার জন্য শিক্ষক নেই। আপনার পরিবার চায়, আপনি নিজের পায়ে দাঁড়ান। আপনার পারিবারিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে। তাই আপনি নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে, অন্যদের দায়িত্ব নিতে চান।
ঠিক এমন একটি সময়ে আমি আপনাকে বলছি আপনাকে একটি সিভি তৈরি করতে হবে। আপনি যদি আমায় প্রশ্ন করেন যত্ন করে সিভি তৈরি না করলে কি হবে?
যত্ন করে সিভি তৈরি না করলেও আপনি চাকুরি পাবেন, এতে কোন সন্দেহ নেই।
কিন্তু শুধুমাত্র উপস্থাপনার অমনোযোগিতার কারণে যদি আপনার কাঙ্ক্ষিত চাকুরিতে আপনার সিভি সংক্ষিপ্ত তালিকায়(Short Listed) না থাকে, তাহলে আপনার জন্য তা বেশ বেদনাদায়ক। সব সময় এটা ঘটবেনা, কিন্তু ঘটবে। তুচ্ছ কারণে আপনি বাদ পড়ে যেতে পারেন অথচ কারণটা জানার সুযোগ আপনার নেই। তাই, এই প্রতিযোগিতার রাজ্যে আপনাকে সবটুকু প্রস্তুতি নিয়ে যাত্রা শুরু করতে হবে। এ কারণেই একটি আকর্ষণীয় ও পরিপাটী সিভি আপনাকে তৈরি করতে হবে।
যেখানে আবেদনের নির্দিষ্ট ছক দেওয়া থাকে(সরকারী চাকুরি), জব পোর্টালে(bdjobs.com, urquery.com, ইত্যাদি) বা ওয়েব সাইটে (ব্যাংক, মাল্টিন্যাশনাল, ইত্যাদি) তাদের নির্ধারিত ইনপুট বক্সে আপনি প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে আবেদন করেন, সেখানে সঠিক তথ্য দেওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ । সেখানে আপনার নিজের তৈরি করা সিভি দেওয়ার প্রয়োজন নেই বা ঝুঁকি নেই।
সিভি তৈরির মূল বিষয়(Fundamentals of CV writing):
চাকুরি কি? চাকুরি হচ্ছে আপনার এবং প্রতিষ্ঠানের মাঝে একটা দেওয়া-নেওয়ার চুক্তি। আপনি প্রতিষ্ঠানে অবদান রাখবেন, তার বিনিময়ে প্রতিষ্ঠান আপনাকে বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেবে। প্রতিষ্ঠান যাচাই করতে চাইবে, আপনি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তির জন্য উপযুক্ত কিনা।
আপনার যোগ্যতা প্রমাণের প্রথম হাতিয়ার হচ্ছে সিভি। এমনকি আপনি যদি ব্যক্তিগত ভাবেও কারো সাথে দেখা করেন চাকুরির বিষয়ে কথা বলার জন্য, তাহলেও আপনার কাছে একটি সিভি থাকা উচিত।যারা আপনাকে চাকুরি দেবার অবস্থানে আছেন, তাদের একটি সিভি দিয়ে চাকুরির ব্যাপারে অনুরোধ জানাতে হয়।
সিভি ছাড়া চাকুরির আবেদন করার কোন সুযোগ নেই।
আপনার পরিচয়(আপনি কে?), আপনার অর্জন, আপনি প্রতিষ্ঠানে কি অবদান রাখতে পারবেন তার একটা পরিষ্কার ছবি সিভির মাধ্যমে আপনাকে নিয়োগকর্তার কাছে তুলে ধরতে হবে। আপনি প্রাথমিক পর্যায়ের চাকুরিতে আবেদন করলে ‘আপনার অভিজ্ঞতা থাকবে’, এটা নিয়ে কেউ চিন্তা করবে না। কৌতূহল, পরিশ্রম করার ইচ্ছা, কাজে লেগে থাকার একাগ্রতা প্রকাশ পায় এমন উদাহরণ দিয়ে সিভি সাজাতে হবে।
আপনার সিভি সংক্ষিপ্ত হবে কিন্তু তাতে আকর্ষণীয় বিষয়গুলো উল্লেখ্য থাকবে। নবীন হিসেবে আপনার মনে হতে পারে বড় বড় প্যারা করে লিখলে ভাল। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ছোট ছোট প্যারায় গুছিয়ে লিখলে তা বেশি কার্যকর।
আপনি যে চাকুরির জন্য আবেদন করেছেন, সে চাকুরিতে যে দক্ষতাগুলো চাওয়া হয়েছে, সেগুলোকে জোর দিয়ে সিভি সাজাতে হবে।
তবে আপনার সিভির একটি মাষ্টার কপি থাকবে। সেটাকে আপনি প্রত্যেক চাকুরির চাহিদামত সাজিয়ে গুছিয়ে নেবেন।
সিভিতে আপনার অর্জনগুলো উল্লেখ্য থাকা সবচেয়ে জরুরি।
আপনি বের করার চেষ্টা করুণ একটা সিভিকে কীভাবে আকর্ষণীয় করে তোলা যায়।
ভাল মানের কাগজ, ভাল মানের খাম, ও ভাল ল্যাবে ছবি প্রিন্ট করে সিভির সাথে দেবেন।
উজ্জ্বল রং ও চোখ ধাঁধানো ছবি ব্যবহার করা যাবেনা। জাঁকজমক ও বাহুল্য থেকে দূরে থাকতে হবে।
শক্তিশালী শব্দ, সুন্দর ও যথার্থ কাঠামো, এবং কোন কোন দক্ষতা আপনাকে চাকুরির জন্য ‘সাধারণ’ থেকে ‘বিশেষ’ এ পরিণত করেছে তার সাবলীল বর্ণনা যখন আপনার সিভিতে থাকবে, তখনই আপনার সিভি বাছাইকারী ও নিয়োগকর্তাকে মুগ্ধ করবে।
যারা কঠোর পরিশ্রম করেন, যাদের উন্নতি করার ইচ্ছা আছে এবং যারা প্রতিনিয়ত শিখতে চায় – এমন প্রার্থিতদের প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়। এই দক্ষতাগুলোর প্রতিফলন আপনাকে সিভিতে দেখাতে হবে।
পান্ডিত্য জাহির করার জন্য পরিভাষা(Jargon) ব্যবহার করা যাবেনা।
প্রতিটি আবেদনের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি লক্ষ্য করে সিভি সাজাতে হবে। একই সিভি সব জায়গায় দেওয়া যাবেনা।সিভির প্রতিটি তথ্য সঠিক হতে হবে। কোন তথ্য নিয়ে সংশয় থাকলে তা ব্যবহার করা যাবেনা।
আপনার তৈরি করা সিভিটি আপনি বার বার দেখার পরও কোন ভুল থেকে যেতে পারে। প্রয়োজনীয় কিছু বাদ পড়ে যেতে পারে, যা আপনার চোখে পড়বে না। এই সমস্যা কাটিয়ে উঠার জন্য আপনি ভরসা করতে পারেন এমন কাউকে দিয়ে সিভিটি মূল্যায়ন করাবেন। এতে আপনি সিভিটিকে আরেকটু গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারবেন।
সবসময় একটা সিভি তৈরি করে রাখবেন, যাতে আপনি অল্প সময়ের ব্যবধানে সিভি কে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করে পাঠিয়ে দিতে পারেন। পাসপোর্ট সাইজ ছবিও আপনাকে সবসময় হাতে রাখতে হবে।
কভার লেটারের গুরুত্ব এবং কভার লেটার তৈরির মূল বিষয়( Importance of cover letter and basics of writing a cover letter)
কভার লেটার বা চাকুরির আবেদনপত্র হচ্ছে মনে রাখার মত করে প্রতিষ্ঠানের কাছে নিজেকে তুলে ধরার হাতিয়ার। কভার লেটার আপনার ব্যক্তিগত ও উপযুক্ততাকে তুলে ধরে।
এটি হচ্ছে আপনার এবং প্রতিষ্ঠানের মাঝে সংযোগ তৈরির প্রথম সেতু। এ কারণেই আপনাকে চেষ্টা করতে হবে, যতটুকু সম্ভব নিজের দক্ষতা ও যোগ্যতা মনে রাখার মত করে উপস্থাপন করা যায়।
দিন দিন কভার লেটারের গুরুত্ব বেড়েই চলছে। সব আবেদন পত্রেই কভার লেটার দিতে হবে। শুধুমাত্র যেখানে উল্লেখ্য থাকবে, কভার লেটার পাঠাতে হবেনা, সেখানে পাঠাবেন না।
একটি কভার লেটার-
১) আপনাকে পরিচয় করিয়ে দেবে
২) যে চাকুরিতে আবেদন করছেন তার নাম উল্লেখ্য করবে
৩) আপনার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার সাথে নির্দিষ্ট পদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার মিল দেখিয়ে দেবে
৪) পাঠককে আপনার সিভি পড়তে আগ্রহী করে তুলবে
৫) আবেদনকারীর পরবর্তী আগ্রহ সর্ম্পকে দেবে(সাক্ষাৎকারে ডাক পেতে চাওয়া বা দেখা করতে চাওয়া)
প্রতিটি কভার লেটারে তিনটি প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে-
১) চাকুরির শর্তের সাথে আবেদনকারীর অভিজ্ঞতা কীভাবে মেলে
২) চাকুরির চাহিদার সাথে আবেদনকারীর দক্ষতা কীভাবে মেলে
৩) আবেদনকারী এই প্রতিষ্ঠানে কেন কাজ করতে চায়
এই তিনটি প্রশ্নের উত্তর থাকলেই আপনি নিয়োগ প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপে যেতে পারবেন।
প্রতিটি কভার লেটার হবে অনন্য। একটি আরেকটির মত হবেনা। প্রতিষ্ঠান ও শিল্পের(Industry) সাথে মিলিয়ে কভার লেটারের কাঠামো তৈরি করতে হবে। আপনি যে পদে আবেদন করছেন তার দক্ষতার সাথে মিলিয়ে কভার লেটার তৈরি করলে তা বেশ কার্যকর হয়।
চাকুরির বিজ্ঞাপনে যে দক্ষতা ও যোগ্যতা সে চাকুরীর জন্য অবশ্য প্রয়োজনীয়(Critical) বলে মনে হবে সেগুলো কভার লেটারে ব্যবহার করতে হবে।
আপনাকে ব্যাখ্যা করতে হবে, আপনি প্রতিষ্ঠানে কি অবদান রাখতে পারবেন। তা থেকে তারা বুঝতে পারবে আপনি তাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য যোগ্য।
বানানের ভুল, অপেশাদার ই-মেইল আইডি(dreamer@gmail.com) , সিভি থেকে কপি পেষ্ট করে কভার লেটার বানানো, “আমি” শব্দের বহুল ব্যবহার- কভার লেটারে একদমই বাদ দিতে হবে।
বার বার সম্পাদনা(Edit) করে কভার লেটার ত্রুটিমুক্ত করতে হবে।
একটি কার্যকর কভার লেটার তৈরির উপায় নিয়ে বিস্তারিত লেখা আসবে পরবর্তীতে।
চাকুরি কোথায় এবং কীভাবে খুঁজবেন(Where and how to search job):
আপনি ঠিক করেছেন কোন ধরণের চাকুরী করতে চান। আপনি সিভির একটি মৌলিক কাঠামোও তৈরি করেছেন। কভার লেটারের প্রয়োজনীয় উপকরণও আপনার কাছে আছে।
এবার প্রশ্ন হচ্ছে সিভি ও কাভার লেটার আপনি কোথায় ব্যবহার করবেন?
এই কাজটিও আপনাকেই করতে হবে। খুঁজে বের করতে হবে, কোথায় কোথায় সিভি ও কভার লেটার পাঠাতে হবে।
আপনাকে সাহায্য করতেই আমাদের এই লেখা সাজনো হয়েছে।কিছুটা সময় এই লেখার সাথে থাকুন। আপনি চাকুরি খোঁজার উৎসগুলো পেয়ে যাবেন। অধিকাংশই আপনি জানেন। কয়েকটি আপনার চাকুরি খোঁজায় নতুন হাতিয়ার হিসেবে যোগ হতে পারে। তবে এটা বলতে পারি, এই লেখার শেষে আপনার চাকুরি খোঁজার প্রক্রিয়াটা সংগঠিত ও ফলপ্রসূ হয়ে উঠবে।
পত্রিকাঃ আমাদের দেশে দৈনিক পত্রিকা এখনও চাকুরির তথ্য পাবার সবচেয়ে বড় উৎস। বড় বড় সব নিয়োগের বিজ্ঞাপন পত্রিকায় আসে। এখন প্রশ্ন আসতে পারে একজন কীভাবে এত পত্রিকা দেখে তার প্রয়োজনীয় চাকুরীটি খুঁজে নিবে? সরকারী চাকুরির বিজ্ঞাপন নির্দিষ্ট কিছু পত্রিকায় আসে। যে সব পত্রিকা সরকারের পছন্দের তারা সরকারী চাকুরীর বিজ্ঞাপন বেশি পায়। যেসব পত্রিকার কাটতি বেশি সেগুলোতে আসে বেসরকারি চাকুরির বিজ্ঞাপন। ‘চাকুরির পত্রিকা’ ধরণের কয়েকটা পত্রিকা আছে যারা বিভিন্ন উৎস থেকে চাকুরির খবর একসাথে করে ছাপায়। বর্তমানে জব পোর্টালগুলোতেও আপনি সরকারী চাকুরীর বিজ্ঞাপনের খবর পাবেন। এক্ষেত্রে যা করা যেতে পারে যেসব পত্রিকায় বিজ্ঞাপন বেশি আসে, এমন পত্রিকাগুলো আপনারা কয়েকজন মিলে রাখবেন। তবে জাতীয় পত্রিকার পাশাপাশি স্থানীয় পত্রিকার দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। ছোট ছোট কম্পানি যারা স্থানীয় লোক কিংবা খরচ কমাতে চায় তারা স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়।
পরবর্তীতে পাওয়া তথ্যগুলো পরস্পরকে জানাবেন। জব পোর্টালগুলোতেও নিয়মিত হানা দিতে হবে পত্রিকায় প্রকাশিত চাকুরির বিজ্ঞাপনের জন্য।
জব পোর্টালঃ জব পোর্টালগুলোতে এখন অনেক চাকুরির খবর আপনি একসাথে পাবেন। এখানে আপনি একটি সিভি তৈরি করে রাখলে এর মাধ্যমে আপনি সরাসরি অনেক চাকুরিতে আবেদন করতে পারবেন। আরও বেশ কিছু চাকুরিতে আপনি এখানকার সিভি সরাসরি ই-মেইল করতে পারবেন। জব পোর্টালে আপনি অনেক সরকারী চাকুরির খবরও পাবেন। bdjobs.com বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় জব পোর্টাল।
ওয়েবসাইটঃ আপনি যে ধরণের কাজ করতে আগ্রহী সেকল প্রতিষ্ঠানের যদি ওয়েব সাইট থাকে, তাহলে তাদের ওয়েব সাইটে ঢুকে ক্যারিয়ার( Career ) অংশে দেখতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠানের সাইটে ইনপুট দিয়ে সিভি তৈরি করার সুযোগ আছে, সেখানে অবশ্যই আপনি তৈরি করে রাখবেন।
ফেইসবুক গ্রপঃ ফেইসবুকে বিভিন্ন ধরণের পেশাদারদের গ্রুপ আছে সেখানে বিভিন্ন চাকুরির খবর পাওয়া যায়। আপনি আগ্রহের পেশাজীবিদের কোন গ্রুপ থাকলে তার সাথে এড হয়ে যান। আর তা না থাকলে মানবসম্পদ, শ্রম আইন, কমপ্লায়েন্স সর্ম্পকিত গ্রুপ গুলোতে এড হয়ে যান। কাজে লাগবে।
লিংকডইনঃ লিংকডইন পেশাজীবিদের সবচেয়ে বড় সামাজিক মাধ্যম। এখানে একটি প্রোফাইল তৈরি করে রাখুন। এখানে বিভিন্ন পেশাজীবের ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপ থাকে। আপনার পছন্দ অনুযায়ী কয়েকটি গ্রুপে এড হয়ে যান। কিছু কিছু চাকুরির বিজ্ঞাপন শুধুমাত্র লিংকডইনেই পাওয়া যায়। আমাদের এখানে এর প্রচলন কম। তবে দিন দিন তার ব্যাপ্তি বাড়ছে। সবসময় আপনার প্রোফাইল সবসময় হালনাগাদ রাখতে হবে।
অ্যালামনাইঃ আপনার স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়- সবখানেই পূর্ববর্তীদের সংগঠন বা ফেইসবুক গ্রুপ আছে। সংগঠন থাকলে তার সদস্য হউন। তা না থাকলে ফেইসবুক গ্রুপে এড হয়ে যান। তাও না থাকলে নিজেই একটা গ্রুপ তৈরি করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্যদের এড করতে থাকুন। আপনার পরিচিত মানুষের সংখ্যা বাড়ান। তাদের সাথে যোগাযোগ করে আপনার চাকুরির প্রয়োজনীয়তা জানান। সিভি দিন। যোগাযোগ রক্ষা করুণ। তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে ও জানতে পারবেন। আর চাকুরির কোন সংবাদ পেলে তা হচ্ছে বোনাস।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণঃ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করুণ। পরিচিতদের সাথে পরিচয় ঝালিয়ে নিন। যাদের বলা যায় আপনি চাকুরি খুঁজছেন, তাদের জানান যে আপনার চাকরী প্রয়োজন। কোন পেশা আপনি পছন্দ করেন তাও জানান। অপরিচিতদের সাথে পরিচিত হউন। প্রথমেই চাকুরির কথা বলবেননা। যোগাযোগ রেখে সর্ম্পক স্বাভাবিক হলে আপনার চাকুরির কথা জানান।
সংযোগস্থাপন( Networking )- আপনার পরিচিতদের মাঝে ২০/২৫ জনকে নির্বাচিত করুণ যারা আপার চাকুরি পাওয়ায় সহায়তা করতে পারে। তাদের সাথে দেখা করুণ, ফোণ করুণ। আপনার চাকুরির প্রয়োজনীয়তার কথা জানান। আপনার করণীয় সর্ম্পকে পরামর্শ চান। কাজে লাগবে। অথবা আপনি যে ধরণের প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চান, সেসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন বা করতেন, তাদের সাথে ফেইসবুক, লিংকডইনের মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেষ্টা করুণ। যোগাযোগ শুরু হলে, তা চালিয়ে যান। তবে বিরক্তির সৃষ্টি হয়, এমন কিছু করবেন না। তাদের কাছে জানার চেষ্টা করুন, সেই প্রতিষ্ঠানে চাকুরি পেতে হলে কি কি করতে হয়। আবেদনপত্রে এমন কাউকে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করতে পারলে ভাল। তবে তার আগে অবশ্যই অনুমতি নিতে হবে।
সরাসরি যোগাযোগ- কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের গেইটে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ঝুলিয়ে রাখে। এমন জায়গায় সরাসরি গিয়ে সিভি দিয়ে আসুন। সিভি দিতে যাবার সময় আপনার পোশাক পরিচ্ছেদ যাতে পরিপাটী থাকে, তা খেয়াল রাখবেন। বিজ্ঞপ্তি না থাকলেও দিতে পারেন। তাদের লোক প্রয়োজন হলে আপনাকে ডাকার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।
গুগল– আপনি যে পদের জন্য এবং যে পেশায় আবেদন করতে চান তার উল্লেখ করে গুগলে সার্চ দিন। অনেক সময় কাজে লাগে।
সফট স্কীল বা সহায়ক দক্ষতা কি ও তার প্রয়োজনীয়তা( Soft skills and its necessity):
প্রথমত, আপনি ভাবুন, পাঁচ হাজার প্রার্থীর লিখিত পরীক্ষা নিয়ে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ১০০ জনকে নির্বাচিত করা হয়েছে। তাদের মাঝ থেকে ১০/১৫/২০ জনকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হবে।
কিংবা, দুই হাজার প্রার্থীর মধ্য থেকে রেজাল্ট, বিষয় সম্পৃক্ততা, ইত্যাদি দেখে ৫০ জনকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করা হয়েছে মৌখিক পরীক্ষার জন্য। তার মধ্যে ৫ জনকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হবে।
অথবা, আইবিএ-এর মাধ্যমে লিখিত পরীক্ষা নিয়ে ১০ জনকে নির্বাচিত করা হয়েছে। তার মধ্যে ১/২ জনকে নেওয়া হবে।
দ্বিতীয়ত, ধরে নিন, এই সবকটি ক্ষেত্রেই আপনি সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীদের একজন।
আপনি এই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কি কি বিষয় বিবেচনায় আনবেন?
পড়াশুনার বিষয় সম্পৃক্ততা, রেজাল্ট, লিখিত পরীক্ষার ফলাফল, যেখান থেকে পড়াশুনা করেছে তার খ্যাতি, ইত্যাদি। মজার বিষয় হচ্ছে উপরোক্ত মানদন্ডে নির্বাচিতদের মাঝে থেকে চূড়ান্তভাবে নেওয়া বা না নেওয়ার মত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া খুবই কঠিন। কিন্তু আপনাকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করতে হবে। তখন আপনি একটু ভিন্নভাবে ভাবতে শুরু করবেন।
আপনি চিন্তা করবেন যে কাজের জন্য নেওয়া হচ্ছে তা করতে পারবে কিনা? কথা গুছিয়ে বলতে পারে কিনা? ভাল লিখতে পারে কিনা? অন্যদের সাথে মিলে মিশে কাজ করতে পারবে? কাজ করাতে তদারকি কতটুকু করা লাগবে? বিশ্বস্ত হওয়া প্রয়োজন, হিসেব নিকাশ কেমন পারে? কম্পিউটারে দক্ষতা কেমন, গ্রাহককে সন্তুষ্ট করতে পারবে? ধৈর্য কেমন? শেখার আগ্রহ কেমন? দায়িত্ব নিতে চাইবে কিনা?
মোট কথা আপনি ভাবুন আপনার সাথে এক বা একাধিক লোক কাজ করলে তাদের মাঝে আপনি কি কি দক্ষতা দেখতে চান। এই ভাবনা শেষে আপনি যে উত্তরগুলো পাবেন, তার সবকটিই সফট স্কীল বা সহায়ক দক্ষতা বা চাকুরী পাবার দক্ষতা (Soft Skill) ।
এবার আপনি আপনার আসল জায়গায় চলে আসুন। আপনি একজন চাকুরী প্রার্থী। আপনি কি করবেন? আপনাকে জানতে হবে, কারিগরি দক্ষতার পাশাপাশি আর কি কি দক্ষতার উপর প্রার্থী নির্বাচন নির্ভর করার সম্ভাবনা আছে। কিভাবে আপনি তার মধ্যে অধিক গুরুত্বপূর্ণগুলো অর্জন করতে পারবেন?
একটি চাকুরীতে আবেদনের জন্য বিজ্ঞাপিত পদের জন্য যে শিক্ষাগত যোগ্যতা চাওয়া হয় তা থাকলেই আমরা আবেদন করি।সরকারী প্রতিষ্ঠান, স্বায়ত্ত-শাসিত প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, ইত্যাদিতে শিক্ষাগত যোগ্যতাকে প্রধান নিয়ামক হিসেবে দেখা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষার পর সাক্ষাৎকার নেয়া হয় প্রার্থী নির্বাচনের জন্য। কিছু প্রতিষ্ঠান নতুন চাকুরেদের, আর কিছু প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞদের শুধুমাত্র সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে নির্বাচিত করে।
লিখিত পরীক্ষায় দেখা হয় কারিগরি দক্ষতা(Technical Skill) সাধারণ কিছু দক্ষতা যা সহজেই পরিমাপ করা যায়। লেখার দক্ষতা(সহায়ক দক্ষতার মধ্যে পড়ে) এবং প্রাথমিক হিসেব নিকাশের দক্ষতা (Calculation) সাধারণত যাচাই করা হয়। সাম্প্রতিক বিষয়ে জানাশোনা – যাচাইয়ের আরেকটি জনপ্রিয় বিষয়।
প্রার্থীর জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা ও ঘটনা বিশ্লেষণের মাধ্যমে বের করার চেষ্টা করা হয় প্রার্থীর প্রয়োজনীয় সফট স্কীল বা সহায়ক দক্ষতা আছে কিনা। এ প্রক্রিয়া আপেক্ষাকৃত জটিল। অনেকে অ্যাসেসমেন্ট সেন্টারের মাধ্যমে এ কাজটি করে থাকে।
চাকুরীর আবেদনের সময় আমরা সাধারণত কারিগরি দক্ষতা বা হার্ড স্কীলের দিকেই নজর দেই বেশি।প্রতিটি কাজের জন্য যে মৌলিক কিছু দক্ষতার প্রয়োজন হয় তাই কারিগরি দক্ষতা। আপনি কোন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পেলে সে দক্ষতাগুলো আপনার থাকবে এবং দিন দিন তা শাণিত হবে-এটাই স্বাভাবিক প্রত্যাশা।
কারিগরি দক্ষতা ও বিষয় ভিত্তিক জানাশোনার পাশাপাশি যে দক্ষতাগুলো নিয়োগকারী চাকুরী প্রার্থীর মাঝে দেখতে চান- সেগুলোকেই আমরা সফট স্কীল বা সহায়ক দক্ষতা বা চাকুরী পাবার দক্ষতা (Soft Skill) বলতে পারি। প্রতিটি চাকুরীর জন্য কারিগরি দক্ষতার পাশাপাশি বিশেষ কিছু দক্ষতা চাওয়া হয়। এছাড়াও সব ধরনের চাকুরীর সাফল্যের জন্য বিশেষ কিছু দক্ষতার প্রয়োজন হয়। এগুলোকেই সফট স্কীল বা সহায়ক দক্ষতা বা চাকুরী পাবার দক্ষতা বলে। এই দক্ষতাগুলো চাকুরী পেতে, চাকুরী করতে এবং চাকুরীতে উন্নতি করতে অবশ্যই প্রয়োজন।
সফট স্কীলের বা সহায়ক দক্ষতার বা চাকুরী পাবার দক্ষতার দিকে আমাদের মনোযোগ কম থাকে। অথচ চাকুরী পাবার ক্ষেত্রে সফট স্কীলের গুরুত্ব বেড়েই চলছে দিন দিন। প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে একজন কর্মীকে সহকর্মী, ক্রেতা, সেবা গ্রহণকারী, নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা সহ অনেকের সাথে কাজ করতে হয়। এই ধরণের বহুমাত্রিক পরিবেশে কাজে সাফল্য লাভ করতে সফট স্কীলে দক্ষতা(Efficiency) অপরিহার্য।
ডিগ্রি অর্জন বা সার্টিফিকেট পাবার মত পড়াশুনা করে কোন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সফট স্কীল অর্জন করা যায়না। সফট স্কীল অর্জনের জন্য বেশ কিছু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
নিচে বেশ কিছু সফট স্কীলের উল্লেখ করা হলঃ
১)যোগাযোগের দক্ষতা(Communication Skill)
২) যথাযথ মনোভাব/প্রবণতা(Positive Attitude)
৩) নেতৃত্বের দক্ষতা(Leadership)
৪) দলবদ্ধভাবে কাজ করার দক্ষতা(Team Work)
৫) সমস্যা সমাধানের দক্ষতা(Problem Solving Skill)
৬) উদ্যোগ গ্রহণ ও কিছু শুরু করার দক্ষতা(Initiative and Enterprize)
৭) পরিকল্পনা ও সংগঠন(Planning & Organizing)
৮) স্ব-ব্যবস্থাপনা(Self Management)
৯) শেখার দক্ষতা(Learning Skill)
১০) প্রযুক্তি ব্যবহারের দক্ষতা(Digital Skill/ Technology Skill)
১১) বাণিজ্যিক সচেতনতা(Commercial Awareness)
১২) নমনীয়তা(Flexibility/Resilience)
১৩) বৈশ্বিক দক্ষতা(Global Skill)
১৪) দরকষাকষি ও বোঝানোর দক্ষতা( Negotiating and Persuading)
১৫) সংখ্যাতাত্ত্বিক জ্ঞান(Numeracy)
১৬) আত্ম-সচেতনতা(Self Awareness)
১৭) ব্যক্তিগত প্রভাব( Personal Impact)
১৮) চাপ সহনশীলতা(Stress Tolerance)
১৯) শুদ্ধতা(Integrity)
২০) স্বাধীনভাবে কাজ করার দক্ষতা(Independence)
২১) পেশাদারিত্ব অর্জন করা(Developing Professionalism)
২২) কর্ম-পরিকল্পনা(Action Plan)
২৩) সিন্ধান্ত নেওয়ার দক্ষতা(Decision Making)
২৪) আন্তঃব্যক্তিগত সংবেদনশীলতা(Interpersonal Sensitivity)
২৫) সমালোচনামূলক চিন্তা(Critical Thinking) ও সৃজনশীলতা(Creativity)
২৬) উপস্থাপনা(PresentationSkill)
২৭) উপাত্তের পরিসংখ্যান(Analytics)
২৮) অধ্যবসায় ও প্রনোদনা( Perseverance and Motivation)
২৯) কাজের মূল্যবোধ(Work Value)
৩০) অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান(Previous Experience & Knowledge)
৩১) বিশ্বস্ততা(Loyalty)
সাক্ষাৎকারের প্রস্তুতি(Interview Preparation):
আপনি যদি এখনও চাকুরির জন্য কোন সাক্ষাৎকার না দিয়ে থাকেন, তাহলে প্রথম সাক্ষাৎকার আপনার জন্য বেশ দুশ্চিন্তার বিষয়।
মজার ব্যাপার হচ্ছে যারা সাক্ষাৎকার নেন তাদের জন্যও ব্যাপারটা সহজ না। অনেকের মাঝ থেকে একজন/দু’জন/কয়েকজনকে বেছে নেওয়া বেশ কঠিন কাজ।
তারা প্রথমে ভাবেন সংশ্লিষ্ট প্রার্থীকে নেওয়া যাবে কিনা। যাদের প্রাথমিক ভাবে ভাল মনে করা হয়, পরে তাদের মাঝ থেকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রার্থীকে বেছে নেওয়া হয়। তাই তাদের একই সাথে দু’টো কাজ করতে হয় –
১) বাদ দেওয়া, ও ২) নেওয়া
আপনাকে যা করতে হবে- বাদ পড়ে যাবার মত কাজগুলো করা যাবেনা এবং অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকতে হবে।
সাক্ষাৎকারে সাধারণ কিছু প্রশ্ন থাকে- “পাঁচ বছর পর আপনি নিজেকে কোথায় দেখতে চান?”, “ আপনার সবলতা ও দুর্বলতা কি?”
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আপনাকে সাবলীলভাবে দিতে হবে। সাবলীলভাবে, মুখস্ত করে না! আর্টিকেল পড়ে বা ইউটিউবে ভিডিও দেখে মুখস্ত উত্তর দেওয়া যাবেনা। নিজের জীবনের সাথে মিলিয়ে উত্তর দিতে হবে। তাহলে প্রশ্নকর্তা এ নিয়ে আরও প্রশ্ন করলে, আপনি আটকে যাবেন না।
বন্ধুদের সহায়তায় আপনি সাক্ষাৎকার দেবার অনুশীলন করবেন, এ কাজটি করলে আপনার জড়তা অনেকটুকু কেটে যাবে।
আপনি অনেক কিছু জানেন না। কেউই সব কিছু জানেনা। কিন্তু আপনি যা জানেন, তা সঠিকভাবে জানাতে পারাটাই সাক্ষাৎকারে আপনার মূল সাফল্য। এর জন্য চর্চা লাগে।
যে চাকুরীতে আবেদন করেছেন, তার সাথে আপনার যোগ্যতা ও দক্ষতার মিল চিন্তা করে বের করে রাখতে হবে। জানতে চাইলে,সুন্দর করে তা বুঝিয়ে বলতে হবে। বহুল ব্যবহৃত কথা “প্যাশনেট”, “ সুযোগ পেলে আমি কম্পানিতে অনেক ভাল করবো” – এই কথাগুলো না বলাই ভাল।
কাজের সকল দায়িত্ব, কর্তব্য, প্রয়োজনীয় দক্ষতা যা যা বিজ্ঞাপনে উল্লেখ থাকে, সেগুলো ভালভাবে পড়ে বুঝে যেতে হবে। যাতে আপনি আপনার দক্ষতা ও যোগ্যতার সাথে মিল দেখাতে পারেন।
শিল্প ও প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী নির্দিষ্ট কিছু প্রশ্ন থাকে। সেগুলোর উত্তর ভালভাবে বুঝে যাবেন, যাতে বুঝিয়ে বলতে পারেন।
প্রতিষ্ঠান সর্ম্পকে ভাল করে জানুন। কবে থেকে কাজ শুরু করেছে, তাদের কোন কোন পণ্য বা সেবা আছে, কোন কোন এলাকায় কাজ করে, তারা সাধারণত কেমন ধরণের লোক পছন্দ করে, ইত্যাদি।
আপনি যদি লিখিত পরীক্ষা দিয়ে সাক্ষাৎকারে আসেন, তাহলে লিখিত পরীক্ষার ফলাফল কিছু না কিছু প্রভাব ফেলেই।
আপনার প্রতিটি কথায় সৎ থাকুন। এমন কোন অভিজ্ঞতা বা দক্ষতার কথা বলবেন না, যা আপনার নেই।
সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর পোশাক, বয়স বা আচরণ দেখে ভুলেও তার সর্ম্পকে কোন ধারণা পোষণ করবেন না।
প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী পোশাক পরিচ্ছেদ যাতে ঠিক থাকে। পরিচ্ছন্ন, পরিপাটী হওয়াটা সবখানেই দরকার। হালকা রঙয়ের শার্ট ও গাঢ় রঙয়ের প্যাণ্ট পরাটা নিরাপদ। যে সব প্রতিষ্ঠানে কাজের সময় টাই পরার নিয়ম আছে, সেখানে টাই পরে যাবেন। যেমন- ব্যাংক, বীমা, কর্পোরেট হাউস, ইত্যাদি। সরকারী প্রতিষ্ঠানে টাই না পরাটাই সুবিধাজনক।
সাথে অবশ্যই একটি কলম রাখবেন। মোবাইল ফোন যাতে সাইলেন্ট করা থাকে। সকালে পত্রিকাতে চোখ বুলিয়ে নেবেন।
সব শেষ কথা হচ্ছে দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকুন। দুশ্চিন্তা আপনার সকল প্রস্তুতিতে পানি ঢেলে দিতে পারে।
মনে রাখবেন, এটা আপনার জীবনের শুরু, শেষ না। আপনিও একদিন অন্যদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার অবস্থানে যাবেন।
সব কিছু গুছানো/ শেষ প্রস্তুতি(Final touch):
আপনার চাকুরি দরকার?
চাকুরি খোঁজাটাই হবে এখন থেকে আপনার ফুল টাইম জব(পূর্ণকালীন কাজ)।
কীভাবে চাকুরি খুঁজে পেতে হয়?- এটাই একটা দক্ষতা। আপনাকে তা অবশ্যই অর্জন করতে হবে।
আপনি কি চান? এই বিষয়টি আপনার কাছে একদম পরিষ্কার থাকতে হবে।
অভিজ্ঞতা ছাড়া চাকুরি পাওয়াটা একটু কঠিন- এটা বাস্তবতা। আমাদের সবাইকে এই বাস্তবতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। রাস্তা যখন কঠিন হয়, তখন আমরা কঠিন রাস্তাটা কীভাবে একটু সহজে পার হওয়া যায়, তার জন্য উপায় খুঁজি। এখানেও ঠিক তাই।
আপনার পরিচিতদের আপনার একটি সিভি দিয়ে জানাতে হবে, আপনি চাকুরি খুঁজছেন।
প্রয়োজনীয় সফট স্কীল বা সহায়ক দক্ষতা অর্জন করতে হবে। সময় লাগবে। কিন্তু করতে হবে এই কাজ। এই দক্ষতাগুলো আপনাকে অন্যদের থেকে একদম আলাদা করে প্রতিষ্ঠানের কাছে উপস্থাপন করবে।
শিখতে থাকুন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও নিজে নিজে পড়া জানাশোনার পরিধি বাড়ায়, যা আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়াবে।
চাকুরি খুঁজে পাবার জন্য প্রতিদিন নিয়মমাফিক কিছু না কিছু করুণ।
সিভিতে যে মোবাইল নাম্বার দিয়েছেন, তা যেন আপনার কাছে থাকে সব সময়। দিনে অন্তত একবার আপনাকে ই-মেইল দেখতে হবে। জব পোর্টালের নোটিফিকেশন দেখতে হবে প্রতিদিন।
প্রতিষ্ঠানের যার সাথেই আপনার কথা হবে, তার সাথেই সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে হবে। কারণ আপনি জানেন না কার সাথে আপনি কথা বলছেন। তিনি সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীও হতে পারেন!
আগে থেকে জেনে নিন পরীক্ষায়, সাক্ষাৎকারের স্থানে কখন যাবেন? কীভাবে যাবেন? পাবলিক বাসে যাওয়া যায় কিনা? কতটুকু সময় হাতে নিয়ে যেতে হবে?
সময়মত অবশ্যই উপস্থিত থাকতে হবে। শুধুমাত্র প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটলে আপনি যোগাযোগ করে সমস্যা জানিয়ে অন্য সময় চাইতে পারেন। তবে একই সমস্যায় অন্যরা যদি ঠিক সময়ে পৌঁছে যায়, তাহলে আপনার অজুহাত ভালভাবে নাও নেয়া হতে পারে।
সাক্ষাৎকারের কিছুদিন পর একটা সৌজন্য ই-মেইল পাঠাতে পারেন। অধিকাংশ নিয়োগকারীকর্তাই এদিকে খেয়াল করেন না। তবে কেউ কেউ করেন। কাজ হতে পারে। তবে ঘন ঘন ফোন বা ই-মেইল করে বিরক্ত করবেন না।
সবশেষ কথা হচ্ছে, “ হাল ছেড়োনা বন্ধু আমার… ।”
আপনি একা নন। লক্ষ লক্ষ মানুষ আপনার কাতারে আছে।
যারা আপনার সাক্ষাৎকার নিবেন, যারা আপনাকে চাকুরি দিবেন, তারাও এই পথ পাড়ি দিয়ে এসেছেন। আপনার চাকুরি পাওয়াটা সময়ের ব্যপার মাত্র। কত ভাল চাকুরি পাবেন, কত কম সময়ে পাবেন তা নির্ভর করে আপনার পরিকল্পনা, পরিশ্রম, ও একাগ্রতার উপর।
আপনার যাত্রা শুভ হউক।
আমরা ধাপে ধাপে জানলাম কীভাবে চাকুরির প্রস্তুতি নিতে হয়। এখন আমরা অবশ্য করণীয় বিষয়গুলো আবার আপনাদের মনে করিয়ে দিলাম । যা অনুসরণ করলে আপনি সফলভাবে চাকুরি খোঁজার কাজটি করতে পারবেন।