২০০৮ সালের দিকে আমি গাজীপুর থেকে ঢাকা আসছি। বাসের নাম ছিল সম্ভবত ঢাকা পরিবহন। টিকেট কেটে জানালার পাশের সীটে বসলাম।সিটিং সার্ভিস ছিল। অপেক্ষা করছি। সময় হলে বাস ছেড়ে দিবে। এমন সময় শুনতে পেলাম, “একটু বসমু?”
তাকিয়ে দেখলাম, পাঞ্জাবী পরিহিত, সাদা দাঁড়িতে মুখ ঢাকা যাওয়া একজন পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি একটু সরে তাকে বসতে দিলাম।
বাবা আপনার নাম?
- আমি হেসে নাম বললাম
- আপনে কই যাইবেন?
- গুলশান
- আপনার বাসা?
- নাহ! আমার এক স্যারের কাছে যাব। ঠিক আমার স্যার না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।
- ওইত, স্যার ত।
- জ্বী
- বিরক্ত হইতাছেন
- না, আপনি বলুন
- আপনে কি করেন?
- মাস্টার্স পরীক্ষা দিলাম, আপাতত ছোট একটা চাকরি করছি, ভাল আরেকটা খুঁজছি।
- আমারে একটু জানালার পাশে বসতে দিবেন।
আমি উঠে উনাকে জানালার পাশে বসতে দিলাম।
- আপনে কোথায় পড়ালেখা করছেন?
- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
- বড় কলেজ?
- জ্বী, ঠিক বড় কলেজ না…
- আপনে ওইহানে কি পড়ছেন?
- ইংরেজি।
- আপনে তাইলে অনেক ইংরেজি পারেন?
- না, না
- আপনার পিন্সিপাল কে?
- আমাদের ঠিক প্রিন্সিপ্যাল হয়না। চেয়ারম্যান হয়, ডিন হয়, ভিসি হয়।
আমি তাকে আমার ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যানের নাম, ডিনা আর ভিসির নাম বললাম ।
- কি চাকরি বাকরি করতে চান?
- যেটা ভাল পাই!
- সরকারী চাকরি?
- না
- ক্যান! সবাইত সরকারী চাকরী করতে চায়!
- আমি চাই না। কারণটা আমি বলবো না।
- কোথায় করতে চান?
- বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, যেখানে পরীক্ষা দিয়ে চাকুরি পাওয়া যায়।
- মাস্টারি করবেন না? ইংরেজির লোকেরাত মাস্টারি করতে চায়। আমাগো পোলাপানেরা ইংরেজির মাস্টর টোকাইয়া পায় না।
- এটা করতেও পারি।
- করতেও পারেন! মাস্টারি আপনের পছন্দ না!
- বেতন কম। প্রাইভেট পড়াতে আমার ভাল লাগেনা।
- ও! আপনারে অন্য একটা কথা বলি
- বলুন
- আপনি আমাকে জানালার পাশে বসতে দিলেন কেন?
আমি তার কথার রীতির পরিবর্তনে হঠাৎ ধাক্কা খেলাম। বললাম “কারণটা ভাবিনি, আপনি চাইলেন তাই দিলাম”।
- কিছু মনে করবেন না। আমি আসলে দেখছিলাম এখনকার একজন ছেলে পড়াশুনা না জানা কৌতূহলী একজন মানুষের সাথে কি আচরণ করে।
আমি খুব অবাক হয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
- আমি ………….. । আমি দু’টো কলেজের প্রতিষ্ঠাতা। একটার প্রিন্সিপ্যাল। এই নিন আমরা কলেজের নাম্বার। আপনি চাইলে আমার কলেজে লেকচারার হিসেবে জয়েন করতে পারেন।
কি বেশি অবাক হলেন? এখন যা বলছি তা কিন্তু ভান ভণিতা না। সত্যি কথা।
- খুব অবাক হইয়েছি এটা সত্যি!
- আপনার সাথে কথাবার্তাটা আপনার ইন্টারভিউ হিসেবে ধরে নিতে পারেন। উত্তরায় আমার বাসা। চলুন। আমার বাসায় গিয়ে খেয়ে তারপর আপনার স্যারের সাথে দেখা করতে যাবেন।
- আপনার বাসায় গেলে দেরি হয়ে যাবে। আমার দেখা করার সময় ঠিক করা আছে।
- ভার্সিটির স্যারের বাসায় গেলে কি আর কলেজের স্যারের বাসায় যাওয়া যায়!
- তা, না। আমি আগে ওনাকে কথা দিয়েছি। তাই ওনার সাথে দেখা করব। আমি আপনার সাথে যোগাযোগ করব।
- আমার কলেজে কাজ করলেন কিছুদিন। তারপর ভাল না লাগলে, চলে যাবেন। আমি আপনাকে আটকাবো না।
আমাদের কথোপকথনের মাঝে উত্তরা চলে আসল, উনি বিদায় নিয়ে বাস থেকে নেমে গেলেন। আমি দিনের কাজ শেষে রাতের বেলা মেসে ফিরে ভাবছি পরদিন ওনার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করব। এ কথা ভেবে, আমি ওনার ফোন নাম্বার লেখা কাগজটা খুঁজছি, তারপর মনে হল- পকেটে কাগজটা রেখে শার্ট সাবান দিয়ে ভিজিয়ে রেখেছি। ভিজে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া কাগজটা বের করলাম ।
কোনভাবেই নাম্বারটা উদ্ধার করতে পারলাম না!
সাক্ষাৎকারের বিচিত্র অভিজ্ঞতা জানতে পড়ুন “সাক্ষাৎকারের অভিজ্ঞতা-০১”
Pingback: সাক্ষাৎকারের বিচিত্র অভিজ্ঞতা | Songshoptok