পুষ্টির উৎস বাদাম

আমাদের নগরায়ণ ঘটছে দ্রুত। সুবিধার দিক থেকে না হউক, জীবিকার প্রয়োজনে নগরে বসবাস করা লোকের সংখ্যা বেড়ে চলছে। কিন্তু হাঁটা, ব্যায়াম, ও খেলার জায়গা কমে গেছে। কর্মস্থলে প্রযুক্তির বহুল ব্যবহার ও আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আসক্তির কারণে শারীরিক পরিশ্রমের পরিমাণ কমে গেছে অনেক। এরই ফলশ্রুতিতে আমাদের অনেকেরই স্থুলত্ব বেড়েছে আশংকাজনক হারে। এর জন্য প্রয়োজন সঠিক খাবার, শারীরিক পরিশ্রম ও পরিমিত বিশ্রাম। আমাদের খাবারের তালিকায় অনেক কিছুই থাকে। অথচ সহজলভ্য ও পুষ্টিকর খাবার বাদাম আমরা এড়িয়ে যাই অজ্ঞতার কারণে।

বাদাম খেলেই মোটা হয়ে যাবেন এই ভয়ে বাদামের ধারকাছে ঘেঁষেন না অনেকেই। অথচ প্রোটিন, মিনারেল , ফাইবার এবং তেলের জরুরি উৎস বাদাম। পরিমিত পরিমানে বাদাম আমাদের সুস্থ থাকতে সহায়তা করে ।পরিমিত পরিমাণে খেলে  সব বাদামই শরীরের জন্য ভাল। মিক্সড বাদাম র্হাট এর জন্য ভাল।আমরা এটা হালকা নাস্তা  হিসেবে খেতে পারি সকাল ১০-১১ টার মাঝামাঝি  সময়ে ।

আমন্ড, কিং অফ নাটস:

নিউট্রিয়েন্টস:

ক্যালসিয়াম, ফাইবার , পটাসিয়াম , ম্যগনেসিয়াম , ফসফরাস , ফলিক  এসিড এবং ভিটামিন ই ও ভিটামিন বি  ইত্যাদি।

উপকারিতাঃ

কাঠবাদামে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন বি আছে যা স্মৃতি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে । বাচ্চাদের প্রতিদিন কাঠবাদাম খাওয়ালে স্মৃতি শক্তি প্রখর হবে।  কনস্টিপেশন, ও  নানা সমস্যার আমন্ড  খুব ভাল । সব বাদামের মধ্যে আমন্ড এ  সব থেকে বেশি পরিমানে ক্যালসিয়াম আছে । নিয়মিত ৪-৬ টা আমন্ড খেলে  এলডিএল (খারাপ কোলেস্টেরল) এর মাত্রা ক ম থাকে। ফলে  র্হাট অ্যাটাকের সম্ভবনা অনেকটা কমে আসে।

আমন্ডের ফাইবার  শরীরে  কাবোহাইড্রেট শোষণেরর গতি  কমায় । যা ডায়বেটিসের জন্য ভাল । ব্রেনের এবং অ্যানেমিয়ার জন্য ভাল। প্রেগন্যন্সির  সময় আমন্ড খুবই উপকারি।

এমনকি আমন্ড  বাদাম নিয়মিত লাগালে  বলিরেখার হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ।

আখরোট:

নিউট্রিয়েন্টসঃ

ক্যালসিয়াম , আয়রন , পটাসিয়াম, ফসফরাস , সোডিয়াম,ওমেগা৩, আন স্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন বি-১,বি-২, বি-৬,বি-১২, ভিটামিন ই , অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।  আখরোট  ব্রেন  ডেভেল পমেন্ট এ খুবই উপকারী। তাই  র্হাট এর রোগের সময়  দিলে ভাল কাজ করে।

উপকারিতাঃ

হাড় শক্ত করে এবং ব্রেনের পুষ্টি জোগায় , প্রতিদিন খেলে র্হাট  আ্যটাক হওয়ার প্রবণতা কমায় শতকরা ৫১ ভাগ । আখরোট বাদাম ব্রেনের জন্য খুব ভাল।

আখরোটে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে যা শরীরকে ভাল রাখে ।
আখরোট বাদাম শিশুর শারীরিক ও মানসিক  বিকাশে  খুবই  সহায়ক।
ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করে, আখোরট বাদাম শিশুর  মানসিক বিকাশে সহায়ক।

পেস্তা বাদাম:

নিউট্রিয়েন্টসঃ

উচ্চমানের প্রোটিন , মিনারেলস, ফসফরাস, পটাসিয়াম, সোডিয়াম,কপার, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি৬, থায়ামিন।

উপকারিতাঃ

রক্ত শুদ্ধ করে এবং লিভার ও কিডনির কাজে উন্নতি ঘটায় । ত্বকের উন্নতি ঘটায়।এল ডিএল(খারাপ কোলেস্টরল) পরিমান কমায় এবং এইচডিএল (ভাল কোলেস্টরল) এর পরিমান  বৃদ্ধি করে।

পেস্তা বাদাম খেলে ব্লাড প্রেসারের ঝুঁকি কমে।

কাজু বাদামঃ

নিউট্রিয়েন্টসঃ

প্রোটিন ,আয়রন, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, জিংক্‌।

কাজু বাদামে ভিটামিন বি৬,ভিটামিন বি২, থায়ামিন(বি১), ভিটামিন ই, ভিটামিন বি৫, পেন্টাথনিক এসিড, কিছু ভিটামিন সি আছে (প্রতি ১০০ গ্রামে ০.৫ মিঃ গ্রাম)

উপকারিতাঃ

অ্যানেমিয়ায় ভাল। ত্বক উজ্জল করে, ইমিউন সিস্টেমের উন্নতি ঘটায়।ডায়বেটিস, র্হাট অ্যাটাক, স্ট্রোকের  ঝুঁকি  কমায়, এন্টি অক্সিডেন্ট এ ভরপুর।কাজু বাদাম  ম্যাগনেসিয়াম এর ভাল  উৎস  যা র্নাভ এবং মাংসপাশীর উন্নতি ঘটায় ।

চীনা বাদামঃ

নিউট্রিয়েন্টসঃ

প্রোটিন , ফাইবার, ক্যালসিয়াম, আয়রন, সো্ডিয়াম, প টাসিয়াম,ওমেগা ৩ ও ওমেগা ৬ , ভিটামিন ই, আরো কিছু মিনারেলস।

উপকারিতাঃ প্রোটিনের পরিপূর্ণ  উৎস । ভোরবেলা খালি পেটে  চীনা বাদাম খেলে এনার্জি পাওয়া যায় । পরিমিত ব্যবহারে র্হাট ভাল থাকে, ইমিউনিটি লেভেল এর উন্নতি ঘটায়। ডিপ্রেশনের বিরুদ্ধে  কাজ করে। দেহের ফ্রি রেডিকেলের বিরুদ্ধে কাজ করে। চীনাবাদাম যে প্রোটিন ও অ্যামাইনো এসিড  বহন  করে তাআমাদের  দেহের  বৃদ্ধিতে  সহয়তা  করে  ও শিশুদের জন্য ভাল।

চীনাবাদাম কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে  সহয়তা করে । চীনাবাদাম খেলে গলব্লাডার রোগ হওয়ার ঝুঁকি  কমে যায় ২৫%।

চীনাবাদামে উচ্চমাত্রার এন্টি অক্সিডেন্ট আছে (পলি ফেনলিক এন্টিঅক্সিডেন্ট ও পি- কোমেরিক এসিড) যা আমাদের পাকস্থলীর ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা কমায়।

বাদামে যে আন স্যাচুরেটেড ফ্যাট আছে যা আমাদের বিভিন্ন ধরনের রোগ এর বিরুদ্ধে কাজ করে।

সর্তকতাঃ

অনেকের বাদামে এলার্জি/ইনটলারেন্স  থাকে , তাই বাদামের  তৈরী খাবার  খাওয়ানোর পূর্বে বাদামে এলার্জি আছে কিনা  জেনে নিবেন।শিশুদের ক্ষেত্রে ১০ মাস  বয়স থেকে তার বাড়তি খাবারে অল্প করে দিতে পারেন।

মারুফা ইয়াসমীন

এক্স ডায়েটিশিয়ান,
ফরাজী হাসপাতাল ও কেয়ার মেডিকেল কলেজ এন্ড  হাসপাতাল)
মোবাইলঃ ০১৮৮১৪৫২৮৫০/০১৫৫৬৩৬৮২৬১